ডিএনসিসি মার্কেট নিয়ে বিরোধ দীর্ঘদিনের

মোসাদ্দেক বশির ও এম গোলাম মোস্তফা
| আপডেট : ০৩ জানুয়ারি ২০১৭, ২০:০৮ | প্রকাশিত : ০৩ জানুয়ারি ২০১৭, ১৯:৫৬

গুলশান-১ নম্বরের ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মার্কেট ভেঙে সেখানে বহুতল বিপণিবিতান নির্মাণের জন্য চুক্তি হয়ে আছে অনেক দিন আগে। কিন্তু দোকানমালিকদের সঙ্গে ডিএনসিসির রফা না হওয়ায় ভবন নির্মাণ করতে পারছে না চুক্তিবদ্ধ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মেট্রো গ্রুপ। বিরোধ মেটাতে দীর্ঘদিন ধরে দেনদরবার চলে আসছে ডিএনসিসি, মেট্রো গ্রুপ ও দোকানমালিকদের মধ্যে। গতরাতে সেই মার্কেটে লেগেছে আগুন।

দোকান মালিকদের অভিযোগ, তাদের উচ্ছেদ করে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পরিকল্পিতভাবে মার্কেটে আগুন দেয়া হয়েছে। এই আগুনের সঙ্গে মেট্রো গ্রুপ ও ডিএনসিসি জড়িত বলে সন্দেহ করছে মার্কেটের দোকানমালিক সমিতি।

তবে দোকানমালিকদের এ অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে মেট্রো গ্রুপ ও ডিএনসিসি। ডিএনসি বলছে, এটি নিছকই দুর্ঘটনা। মেট্রো গ্রুপ দাবি করছে, মার্কেটে আগুন দেয়ার সঙ্গে তাদের জড়িত করা অযৌক্তিক।

গুলশানের ওই মার্কেটের সাত বিঘা সাত শতাংশ জায়গার ওপর ১৮ তলা ভবন নির্মাণের জন্য মেট্রো গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান মেসার্স আমিন অ্যাসোসিয়েটস ওভারসিসের সঙ্গে ২০০৯ সালে চুক্তি করে তৎকালীন অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন। কিন্তু দীর্ঘদিনেও এর কাজ শুরু হয়নি বর্তমান মার্কেটের দোকানমালিকদের বিরোধিতার কারণে। মালিকদের দাবি, যেভাবে মার্কেট আছে সেভাবে নির্মিত হোক নতুন ভবন এবং সেখানে তাদের দোকান বরাদ্দ চান। তবে ডিএনসিসি বলেছে, নতুন করে দোকান বরাদ্দ নিতে হবে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দরকষাকষি চলে আসছে। কিন্তু কোনো সোরাহা হয়নি এখনো।

ডিএনসিসি মার্কেটের দোকানমালিক সমিতির সভাপতি শের মোহাম্মদ ঢাকাটাইমসকে অভিযোগ করে বলেন, দোকানমালিকদের উচ্ছেদের জন্য পরিকল্পিতভাবে গানপাউডার দিয়ে মার্কেটে আগুন দেয়া হয়েছে। আগুন লাগানোর সময় সেখানে তিনটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। আর এ জন্য আগুন লাগার আধা ঘণ্টার মধ্যে ভবনের এক অংশ ধসে পড়ে বলে সন্দেহ করছেন তিনি।

মার্কেটের জায়গায় ১৮ তলা ভবন নির্মাণের জন্য মেট্রো গ্রুপ ও ডিএনসিসির চুক্তির কথা উল্লেখ করে শের মোহাম্মদ জানান, বর্তমানে থাকা দোকানমালিকদের নতুন ভবনে বরাদ্দ না দেয়ায় তারা সরে যেতে অস্বীকার করেছেন। তাই আগুন দিয়ে ভবনটি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে।

তবে ডিএনসিসি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডে তাদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলছে মেট্রো গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজার মোর্শেদ আলম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘‍এই মার্কেটে আগুন দেয়ার কোনো কারণ নেই আমাদের। যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে, তা মনগড়া ও ভিত্তিহীন। অগ্নিকাণ্ডে আমাদের জড়িত হওয়ার কোনো যুক্তি নেই।’

মালিক সমিতির অভিযোগের বিষয়ে মেট্রো গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ভবন নির্মাণ বিষয়ে শের মোহাম্মদ সাহেব কয়েকবার আমাদের সঙ্গে মিটিংও করে গেছেন। গত ১৬ অক্টোবর ডিএনসিসির কার‌্যালয়ে সর্বশেষ মিটিং হয়। আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবেই এই মার্কেটের কাজ করতে চাই।’

মোর্শেদ আলম আরো বলেন, ‘ভবনটি নির্মাণ হলে ভালো একটা প্রডাক্ট হবে। মার্কেট বন্ধ থাকলে দোকান মালিকরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তাদের যাতে হ্যাম্পার কম হয় সেই বিষয়টি মিনিমাইজ করেই কাজটি করতে হবে।’ ভবন নির্মাণের কাজটি কীভাবে করা হবে তা নিয়ে দোকান মালিকরা একটা পরিকল্পনা মেট্রো গ্রুপকে দিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

নতুন ভবনে পুরনো মালিকদের দোকান বরাদ্দ না দেওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে মেট্রো গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার বলেন, ‘বরাদ্দের বিষয়টি ডিএনসিসির। আমরা শুধু ভবন নির্মাণ করে দেব। চুক্তি অনুযায়ী আমরা যে শেয়ার পাব সেটা বিক্রি করব। আর ডিএনসিসির শেয়ার তারা বরাদ্দ দেবে।’

শেয়ার ভাগাভাগির চুক্তি অনুযায়ী মেট্রো গ্রুপ পাবে ৬৩ শতাংশ, আর ডিএনসিসি পাবে ৩৭ শতাংশ। এ ছাড়া পুনর্বাসন ও ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টের বাড়তি খরচ বহন করবে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি।

জানা যায়, ভবনটি নির্মাণে প্রথম চুক্তি হয় ২০০৩ সালে। ওই চুক্তিতে ডিএনসিসির শেয়ারের অংশ ছিল ২৭ শতাংশ। পরে ২০০৯ সালের চুক্তিতে সেটি ৩৭ শতাংশ হয়।

মেয়র আনিসুল হক আগুন লাগার বিষয়ে বলেছেন, ওই মার্কেটে আগুন লাগার ঘটনা নাশকতা কি না সেটা পুলিশ ভালো বলতে পারবে। তবে তার কাছে নাশকতা না হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯ পারসেন্ট।

সোমবার রাত আড়াইটার দিকে ডিসিসি মার্কেটে আগুন লাগে। এতে মার্কেটের একাংশ ধসে পড়ে। দমকল বাহিনীর ২৩টি ইউনিট আগুন নেভাতে বিরামহীনভাবে কাজ করে। বিকাল পাঁচটায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আগুন জ্বলছিল বলে জানা গেছে।

ডিএনসিসি, মেট্রো গ্রুপ ও মালিক সমিতির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাত বিঘা সাত শতাংশ জমির ওপর ১৯৮৩ সালে এরশাদ সরকার এই মার্কেটটি নির্মাণ করে। তখন মেয়র ছিলেন মাহমুদুল হাসান।

পুরনো ভবন ভেঙে সেখানে পিপিপির আওতায় আধুনিক বিপণিকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ২০০৩ সালে দরপত্র আহ্বান করে ডিসিসি। সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে ওই বছরের ১৬ জুন কাজের সম্মতিপত্র দেওয়া হয়। কিন্তু ২০০৫ সালের মার্চে কাজ শুরুর আগেই প্রতিষ্ঠানটি জানায়, তারা কাজটি করবে না। পরে ডিসিসি আবার দরপত্র আহ্বান না করে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা মেসার্স আমিন অ্যাসোসিয়েটস ওভারসিজ কোম্পানিকে কাজটি দেয়। এ চুক্তিতে ডিসিসির মালিকানা রাখা হয় ২৭ শতাংশ এবং আমিন অ্যাসোসিয়েটসের ৭৩ শতাংশ। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় ২০০৫ সালের ২৪ মার্চ মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে সম্মতি দেয়। ২০০৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ডিসিসি ও আমিন অ্যাসোসিয়েটসের মধ্যে ট্রেড সেন্টার নির্মাণের চুক্তি হয়। এরপর প্রতিষ্ঠানটি প্রাথমিক কাজ শুরু করে। কিন্তু ২০০৭ সালের শুরুতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কাজটি স্থগিত করে এবং চুক্তিতে ডিসিসির মালিকানা বাড়ানোর সুপারিশ করে। ২০০৯ সালের ৪ এপ্রিল এ কাজের জন্য আবার মূল্যায়ন কমিটির সভা ডাকা হয়। আমিন অ্যাসোসিয়েটসের উপস্থিতিতে ওই সভায় ডিসিসির মালিকানা ২৭ থেকে বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করা হয়। আর আমিন অ্যাসোসিয়েটসের মালিকা রাখা হয় ৬৩ শতাংশ।

চুক্তিবদ্ধ হলেও বর্তমান মার্কেটে থাকা দোকানমালিকদের বাধার কারণে নির্মাণকাজ শুরু করতে পারেনি মেট্রো গ্রুপ। এ বিষয়ে মেট্রো গ্রুপ, ডিএনসিসি ও মালিক সমিতির মধ্যে দফায় দফায় সভা হয়। তবে সব পক্ষ এখনো ভবন নির্মাণের বিষয়ে একমত হতে পারেনি।

(ঢাকাটাইমস/৩জানুয়ারি/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

বাউন্ডারি ভেঙে বিমানবন্দরে প্রকৌশলীকে চাপা দেওয়া বাসচালকের লাইসেন্স ছিল না: র‌্যাব

দেশীয় খেলা প্রসারের জন্য যা দরকার সরকার তা করছে: প্রধানমন্ত্রী

নির্বাচন অনেকটা ইনজেকশনের মতো, অনেকে ভয় পায়: ইসি আলমগীর

সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে ক্ষতি ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি: বিআরটিএ

নানা আয়োজনে আমেরিকায় ‘বাংলাদেশ সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত

অপতথ্য রোধে গণমাধ্যমকে ভূমিকা পালনের আহ্বান তথ্য প্রতিমন্ত্রীর

ফুলেল শ্রদ্ধায় শিব নারায়ণ দাশকে শেষ বিদায়

আগামী বাজেটে তামাকপণ্যের দাম বাড়ানোর দাবি

উপজেলা নির্বাচনের সময় আ.লীগের সব ধরনের কমিটি গঠন বন্ধ থাকবে: কাদের

হজ প্যাকেজের খরচ ১ লাখ ৪ হাজার টাকা কমানো হয়েছে: ধর্মমন্ত্রী

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :