২০০ শয্যার লোকবলও নেই ৩০০ শয্যার হাসপাতালে

আমির হুসাইন স্মিথ, নারায়ণগঞ্জ
 | প্রকাশিত : ০৫ জানুয়ারি ২০১৭, ০৮:২০

নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর একমাত্র বিশেষায়িত খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতাল চলছে ২০০ শয্যার জনবল দিয়ে। তিন বছর আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই হাসপাতালকে ৩০০ শয্যায় উন্নতি করলেও সেই অনুযায়ী পদায়ন করা হয়নি জনবল। ফলে অতিরিক্ত রোগীর সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা।

বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত খানপুর হাসপাতলে অবস্থান করে দেখা যায়, বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসে প্রায় দেড় হাজার রোগী। নগরীর আধুনিক ও বিশেষায়িত হাসপাতাল হওয়ায় জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ আশপাশের জেলার রোগীরাও চিকিৎসা নিতে আসে এখানে।

বহির্বিভাগের পাশাপাশি ভর্তি রোগীদের ভিড়ে হাসপাতালে শয্যা পেতেও অপেক্ষা করতে হয়। বিশেষ করে নি¤œ ও মধ্যবিত্ত মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল এই হাসপাতাল। কিন্তু ৩০০ শয্যা হাসপাতালের কাঠামো অনুযায়ী জনবল নিয়োগ বা পদায়ন না হওয়ায় দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীরা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, ২০০ শয্যা হাসাপাতালের জন্য যে লোকবল দরকার, তাও নেই ৩০০ শয্যার এই হাসপাতালে। একটি ২০০ শয্যা হাসপাতালের জন্য চিকিৎসক প্রয়োজন ৫০ জন, কিন্তু এখানে আছে ৪৬ জন। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদ খালি ২৯টি। আর ৩০০ শয্যা হাসপাতালের জন্য শুধু চিকিৎসক প্রয়োজন ৭৫ জন। নার্স, আয়া, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী মিলিয়ে লোকবল প্রয়োজন আরো প্রায় ২০০। জনবল পদায়নের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার লিখিত আবেদন করার পরও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি বলে জানা যায়।

নারায়ণগঞ্জের খানপুরে প্রায় সাড়ে সাত একর জমির ওপর জাপান সরকারের আর্থিক সহায়তা ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০ শয্যার আধুনিক হাসপাতাল। প্রথম পাঁচ বছর হাসপাতালটি পরিচালনা করে জাপান সরকার। পরে এটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু গত ৩০ বছরেও এই হাসপাতালের জনবল সংকট কাটেনি।

মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর হাসপাতালটি ৩০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। শয্যা বাড়লেও গত দুই বছরে জনবল পদায়ন হয়নি। উপরন্তু ২০০ শয্যার হিসেবেও চারজন ডাক্তার, তিনজন নার্সসহ চতুর্থ শ্রেণির ২৯ জন কর্মচারীর পদ শূন্য। হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, ৩০০ শয্যার জন্য কোনো চিকিৎসক, নার্স, আয়া, ব্রাদার, বাবুর্চি, সুইপারসহ জনবল পদায়ন করা হয়নি। ফলে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।

হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, বাথরুমগুলো এতই নোংরা যে তা ব্যবহারের অনুপযোগী। অপরিষ্কার বাথরুমগুলো থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। বহির্বিভাগের রোগীদের জন্য সরকারিভাবে যে ওষুধ দেয়া হয় তা বিতরণ নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে রোগীদের। বন্দরের কুশিয়ারা থেকে আসা এক রোগী জানান, তিনি চর্মরোগের চিকিৎসা নিতে এসেছেন। ডাক্তার তাকে চিকিৎসাপত্র দিয়েছেন। কিন্তু ওষুধ বিতরণ রুম থেকে তাকে দশটি প্যারাসিটামল ছাড়া আর কিছুই দেয়া হয়নি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাকি দুটি ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে তাকে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগী আসে ১৩০০ থেকে ১৪০০। সরেজমিনে দেখা যায় হাসপাতালের বহির্বিভাগে নারী-পুরুষ-শিশুর দীর্ঘ লাইন। বিভিন্ন বিভাগে একজন করে ডাক্তার রোগী দেখছেন। সকাল নয়টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত টানা রোগী দেখেন চিকিৎসকরা।

এদিকে বহির্বিভাগে আসা রোগীরা তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের কাছে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীরা। চোখের চিকিৎসা নিতে আসা শহরের গোগনগর এলাকার রোকসানা পারভিন জানান, প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি, কিন্তু ডাক্তার দেখাতে পারেননি। তিনি অভিযোগ করেন, হাসপাতালের সিরিয়াল মেন্টেইন যারা করেন তারা দুর্নীতি করছেন। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা রোগীদের কাছ থেকে ২০-৩০ টাকা করে নিয়ে আগে ডাক্তার দেখিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করছেন কয়েকজন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী।

সিদ্ধিরগঞ্জের আরামবাগ এলাকার গৃহবধূ সাবরিনা বেগম অভিযোগ করেন, কোলে তিন বছরের শিশু নিয়ে গরমের মধ্যে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন দেড় ঘণ্টা ধরে। তার পেছনে আসা অনেক রোগী ডাক্তার দেখিয়ে চলে গেছে। তিনি বলেন, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের হাতে টাকা গুঁজে দিলে দ্রুত সিরিয়াল পাওয়া যায়।

চর্ম ও যৌন রোগের চিকিৎসক নাসির উদ্দিন জানান, শিল্পকারখানা বহুল নারায়ণগঞ্জে রাসায়নিক মিশ্রিত বর্জ্য আর নদীর পানি দূষিত হওয়ায় পরিবেশগত কারণে এ অঞ্চলে চর্ম রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তাকে প্রতিদিন প্রায় ২০০ রোগী দেখতে হয়। তিনি বলেন, এভাবে মানসম্পন্ন চিকিৎসাসেবা দেয়া সম্ভব নয়।

৩০০ শয্যা হাসতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. নিতীশ কান্তি দেবনাথ জানান, জনবল পদায়নের জন্য একাধিকবার মন্ত্রণালয়ে লেখা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত জনবল পদায়ন হয়নি। জনবল সংকটের কারণে কাক্সিক্ষত সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান এই কর্মকর্তা।

নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়া জানান, খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালের জনবল পদায়নের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ রক্ষা করছে জেলা প্রশাসন। আগের জেলা প্রশাসক বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, হাসতালের তত্ত্বাবধায়ক বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ডিজিকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। ৩০০ শয্যার জনবল দ্রত পদায়ন করার জন্য তাগাদা দিয়ে আসছেন তারা।

(ঢাকাটাইমস/৪জানুয়ারি/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

স্বাস্থ্য এর সর্বশেষ

ঔষধি গাছ থেকে তিন শতাধিক ওষুধ তৈরি হচ্ছে ইরানে

কণ্ঠের সব চিকিৎসা দেশেই রয়েছে, বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন নেই: বিএসএমএমইউ উপাচার্য 

এপ্রিল থেকেই ইনফ্লুয়েঞ্জা মৌসুম শুরু, মার্চের মধ্যে টিকা নেওয়ার সুপারিশ গবেষকদের

স্বাস্থ্য খাতে নতুন অশনি সংকেত অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ভাতা বাড়লো ইন্টার্ন চিকিৎসকদের

বিএসএমএমইউ বহির্বিভাগ ৪ দিন বন্ধ, খোলা থাকবে ইনডোর ও জরুরি বিভাগ

তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজ করতে বললেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

বিএসএমএমইউতে বিশ্বের সর্বোৎকৃষ্ট মানের চিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে: ভিসি দীন মোহাম্মদ

ঈদের ছুটিতে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে যেসব নির্দেশনা মানতে হবে হাসপাতালগুলোকে

কেন বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিল অ্যানেসথেসিয়ার পুরনো ওষুধ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :