ভারতের সুপ্রিম কোর্টে তাকিয়ে ফেলানীর বাবা

তৌহিদুল বকসী ঠান্ডা, কুড়িগ্রাম থেকে
 | প্রকাশিত : ০৭ জানুয়ারি ২০১৭, ১২:০৪

সীমান্তের কাঁটাতারে বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানী খাতুনের ঝুলে থাকা মরদেহ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের হত্যাযজ্ঞের প্রতীক হয়ে গেছে। এই হত্যার বিচারের দাবি আর আশ্বাস চলছে সেই থেকেই। কিন্তু বাস্তবতা হলো ছয় বছরেও বিচার হয়নি। তবে এর মধ্যেও আশা ছাড়ছেন না এই কিশোরের বাবা নুরুল ইসলাম।

এই ঘটনায় ভারতের বিএসএফের আদালতে করা মামলায় বাহিনীটির জওয়ান অমিয় ঘোষকে নির্দোষ রায় দেয়া হয়েছে দুইবার। তবে এর বিরুদ্ধে সে দেশের উচ্চ আদালতে দেশটিরই একটি মানবাধিকার সংস্থার সহায়তায় আবেদন করেছেন ফেলানীর বাবা। তিনি এখন চেয়ে আছেন ভারতের উচ্চ আদালতের দিকেই।

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসার চেষ্টার সময় বিএসএফের গুলিতে নিহত হয় ফেলানী। অভিযোগ উঠে, নিরস্ত্র দেখেও ফেলানীর দলটিকে গুলি করে বিএসএফের জওয়ান অমিয় ঘোষ।

এরপর কাঁটাতারের বেড়ায় দীর্ঘ চার ঘণ্টা ঝুলে থাকা মরদেহের ছবি দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে প্রচার হলে সমালোচনার ঝড় উঠে। নড়েচড়ে বসে ভারত-বাংলাদেশসহ বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলো।

আলোচিত এই হত্যার আড়াই বছর পর ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহারে বিএসএফের বিশেষ আদালতে বিচার কাজ শুরু হয় অমিয় ঘোষের। তবে ৬ সেপ্টেম্বর আসামিকে খালাস দেন বিচার। কিন্তু প্রশ্নবিদ্ধ এই রায় অনুমোদন করেননি খোদ বিএসএফ প্রধান। আর ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর আবার বিচার শুরু হয়। তবে এবারও অমিয়কে খালাস দেন বিশেষ আদালতের বিচারক। তবে বিএসএফ প্রধান সেই রায় অনুমোদন করেননি।

ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম জানান, বিএসএফের আদালতে ন্যায়বিচার না পেয়ে তিনি ভারতের মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (মাসুম) এর সহায়তায় ভারতের সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘বিএসএফের আদালতে ন্যায়বিচার না পেলেও ভারতের উচ্চ আদালত আমাকে নিরাশ করবে না। আশা করছি সেখানে আমি মেয়ে হত্যার ন্যায়বিচার পাব।’

মেয়েকে হত্যার স্মৃতি মনে উঠলে এখনো ডুকরে কেঁদে ওঠেন ফেলানীর মা জাহানারা বেগম। তিনি বলেন, ‘হামার বুকের ধন ফেলানীক গুলি করি মারা হইছে, আর যেন কোনো মায়ের বুক এভাবে খালি না হয়।’

ফেলানী হত্যার কথা এখনও ভুলতে পারেননি স্বজনসহ তার এলাকাবাসী। সীমান্ত এলাকায় বসবাস করা মানুষগুলো সবসময় দিন কাটান আতঙ্কে।

ফেলানী হত্যার অগ্রগতি সম্পর্কে কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্রাহাম লিংকন বলেন, ‘ভারতের সুপ্রিম কোর্টে যে রিট করা হয়েছে, সেখানে ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে বলে আমরা আশাবাদী।

বিএসএফের আদালতে অমিয় ঘোষকে দুইবার বেকসুর খালাস দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যেহেতু ওই আদালতের বিচারক, বিচারপ্রার্থী, আসামি এবং বিচারকাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই বিএসএফের সদস্য, ফলে সেখানে ন্যায়বিচার পাওয়া কঠিন ছিল। মামলাটি ভিন্ন রাষ্ট্রের হওয়ায় এখানে আমাদের আপিল করার সুযোগ নেই। তবে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে যে রিট করা হয়েছে সেখানে ইতিবাচক রায় আসবে বলে আমরা আশাবাদী।’

(ঢাকাটাইমস/০৭জানুয়ারি/প্রতিনিধি/এমআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :