‘নারীরা স্টার জলসার সিরিয়াল দেখায় ব্যস্ত’

মাহমুদ উল্লাহ, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৮ জানুয়ারি ২০১৭, ১৪:০৪

মুশফিকুর রহমান গুলজার। সদ্য বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। আগের মেয়াদে ছিলেন মহাসচিব। একসময় সাংবাদিকতা করেছেন। তবে পরিচিতি পেয়েছেন চলচ্চিত্র পরিচালনায় এসে। এখন পর্যন্ত আটটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। এর দুটি ভিন্ন ভিন্ন বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে। সভাপতি হওয়ার পর মুশফিকুর রহমান গুলজার কথা বলেছেন ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাহমুদ উল্লাহ।

সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন, চলচ্চিত্র উন্নয়নে আপনার পরিকল্পনা কী?

প্রথমেই আমরা দুটো কাজ হাতে নিয়েছি। প্রথমত, যৌথ প্রযোজনায় কোনোভাবেই অনিয়ম করে কোনো ছবি বানানো যাবে না। বিষয়টি আমরা দেখব। অনিয়ম করলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। কেউ যদি এভাবে চেষ্টা করে তাহলে মন্ত্রণালয় থেকে ছবি আটকে দেওয়ার ব্যবস্থা করব। সেন্সর যেন না পায়, সে ব্যবস্থাও আমরা করব। দ্বিতীয়ত, এফডিসিতে চলচ্চিত্র নির্মাণ কম। সবাই বাইরে ছবি নির্মাণ করছে। বাইরে কম খরচে সব টেকনিক্যাল সাপোর্ট পাওয়া যায়। বাইরে একটি ক্যামেরা লাইট এডিটিংয়ের খরচ প্যাকেজে নিলে একজন নির্মাতার খরচ পড়ে ছয়-সাত লাখ টাকা। কিন্তু এফডিসি থেকে সেগুলো ভাড়া নিতে গেলে পড়ে ১০-১২ লাখ টাকা। অথচ এফডিসি সরকারি প্রতিষ্ঠান, তাদের অফিস খরচ দিতে হয় না। তাহলে তো এফডিসির খরচ আরও কম হওয়া উচিত। বাইরে একটি প্রতিষ্ঠান ভাড়া ও স্টাফ খরচ দিয়ে যদি লাভবান হতে পারে, তাহলে এফডিসি কেন পারবে না। বিষয়টি নিয়ে কাজ করব।

দেশের হলগুলোর অবস্থা এখনো নাজুক, এ নিয়ে কী বলবেন?

প্রেক্ষাগৃহের মেশিন, পর্দা, সাউন্ড সিস্টেম ডিজিটাল করার উদ্যোগ নেব। দেশের সব প্রেক্ষাগৃহ কেন্দ্রীয় সার্ভার নিয়ন্ত্রণকক্ষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। এতে ভিডিও পাইরেসি বন্ধ হবে। প্রেক্ষাগৃহগুলোতে ই-টিকিটিং ব্যবস্থা চালুর ব্যাপারেও পদক্ষেপ নেব। ভালো চলচ্চিত্র ও দক্ষ কারিগর নির্মাণের জন্য এফডিসি থেকে নিয়মিত ওয়ার্কশপ পরিচালনা করব।

হলের সংখ্যা দিন দিন কমছে। এর সমাধান কী? তিন বছর থেকে আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি ৬৪ জেলায় একটি করে সিনেপ্লেক্স তৈরি করা হোক। সরকার উদ্যোগ নিয়েছে, শুধু সিনেপ্লেক্স নয়, সরকার প্রতিটি জেলায় একটি করে কালচারাল সেন্টার তৈরি করে দিচ্ছে। যেখানে থিয়েটার থাকবে, লাইব্রেরি থাকবে, দুটি করে সিনেপ্লেক্স থাকবে। কফি শপ থাকবে।

দেশে সিনেমা প্রজেকশনের খরচ অনেক বেশি। এ বিষয়ে আপনাদের অবস্থান কী? সিনেমা প্রজেকশনে প্রচুর খরচ করতে হয়, যেটা পৃথিবীর অন্য কোথাও করতে হয় না। এ খরচটা বহন করতে হয় প্রযোজককে। অথচ সিনেপ্লেক্সগুলো ১৫০ টাকার টিকিটে মাত্র ১৭ টাকা একজন প্রযোজককে দেয়। অন্যান্য হল যেখানে ১০০ টাকার টিকিটে ৫০ টাকা দেয়, দেড়শ টাকায় ৭৫ টাকা। এ বিষয়টি আমরা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। তারা এর ব্যবস্থা নেবে। আমরা বিষয়টি নিয়ে আরো কাজ করব।

হলের দর্শক কমে যাওয়ার কারণ কী? আমাদের নারী দর্শক নেই, অনেক কমে গেছে, তারা স্টার জলসার সিরিয়াল নিয়ে ব্যস্ত। এটাও আমাদের চলচ্চিত্রের একটি বড় ক্ষতি। জ্যামের কারণে মানুষ হলে কম এসে ঘরে বসেই ইউটিউবে ছবি দেখে। সবকিছু মিলিয়েই আমাদের চলচ্চিত্রের আজ এ অবস্থা দাঁড়িয়েছে। তবে সুদিন আসছে।

গত এক যুগে শাকিব খানের পর আর কেউ জনপ্রিয় হয়নি। নির্মাতারা নতুন তারকা উপহার দিতে পারছেন না কেন? একজন নায়ককে অনেক পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে তার তারকা ইমেজ ধরে রাখতে হয়। শাকিব খান এখনও নিয়মিত প্রতিদিন জিম করেন, আমাদের আরিফিন শুভও ভালো। তারও অনেক দর্শক তৈরি হয়েছে। কিন্তু এখনকার অনেক নতুন নায়করা অভিনয়, ফিগারের দিকে খেয়াল রাখে না। এসব কারণে নতুন স্টার তেমন তৈরি হচ্ছে না। সালমান শাহ, মৌসুমী প্রথম ছবি দিয়ে দর্শকদের সহানুভূতি পেয়েছিলেন। কিন্তু মান্না, শাবনূরকে কেউ প্রথমে পাত্তা দেয়নি। শাবনূরের প্রথম তিন ছবিই সুপার ফ্লপ ছিল। তারা অনেক স্ট্রাগলের মধ্য দিয়ে তারকা হয়েছে। পপির অভিনয় প্রথমে মানুষ পছন্দ না করলেও পরে তিনি কিন্তু তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। তাই নতুনদের বলব, ক্যারিয়ারে আরো বেশি মনোযোগ দিলে তারা ভালো করবে। অভিনয়, ফিগারের দিকে মনোযোগী হতে হবে।

পাইরেসি বন্ধে এফডিসি থেকে সেন্ট্রাল প্রজেকশনের দাবি রয়েছে। এক্ষেত্রে অগ্রগতি নেই কেন? যত দূর জানি, এটার পরিকল্পনা অনুমোদন হয়ে গেছে, একনেকে পাস হলেই সরকার টেন্ডার আহ্বান করে কার্যক্রম শুরু করে দেবে। এছাড়া সরকার নতুন আইন পাস করছে, নতুন কোনো শপিং মল হলেই সেখানে সিনেপ্লেক্স বাধ্যতামূলক থাকতে হবে। নইলে সেই শপিং মল পাস হবে না।

পরিচালক সমিতি চলচ্চিত্রের উন্নয়নে আসলে কী ভূমিকা রাখছে? পরিচালক ও চলচ্চিত্রের স্বার্থ সংরক্ষণ করাই পরিচালক সমিতির কাজ। এছাড়া তরুণ নির্মাতারা এর সদস্যপদ লাভ করেন, তাদের সহযোগিতা করাও একটি বড় কাজ। এছাড়া চলচ্চিত্রের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন এজেন্ডা নিয়ে সরকারের সঙ্গে কোনো দ্বিমত হলে তা নিয়ে কথা বলা। সরকার কোনো ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে তার প্রতিবাদ করাও পরিচালক সমিতির কাজের অংশ। সিনেমার নাম নিবন্ধন নিয়ে কোনো ধরনের জটিলতা যেন তৈরি না হয় সেটাও পরিচালক সমিতি দেখে থাকে। এসব ছাড়াও প্রবীণ চলচ্চিত্রকারদের সম্মাননা জানানো, দুস্থ শিল্পীদের আর্থিক সহায়তা ও খোঁজ-খবর রাখাও পরিচালক সমিতির নৈতিক কাজের অংশ। আমরা প্রতিবছর জাতীয় বিভিন্ন উৎসব পালন করি, সেন্সর বোর্ডের প্রতিনিধিত্বও করে থাকি আমরা।

তরুণ নির্মাতারা পরিচালক সমিতির সদস্য হতে পারে কীভাবে? তরুণ নির্মাতারা প্রথমে চলচ্চিত্র নির্মাণে আগ্রহী হয় তারা সহযোগী সদস্য পদের জন্য আবেদন করেন। এরপর তাদের আমরা সাক্ষাৎকারের জন্য ডেকে থাকি। ক্যামেরা, শট, স্ক্রিপ্ট সম্পর্কে কয়েকটি বেসিক প্রশ্ন করলেই বুঝতে পারি, সে চলচ্চিত্র নির্মাণে কতটুকু প্রস্তুত ও যোগ্য। টেকনিক্যাল বেসিক জ্ঞানগুলো তার রয়েছে কি না। তাকে উপযুক্ত মনে করলেই আমরা তাকে সদস্য করে নিই। এর পর থেকে পরিচালক সমিতির পক্ষ থেকে তাকে যাবতীয় সহযোগিতা করা হয়। পরিচালক সমিতি সর্বক্ষণ তার পাশে থাকে।

এখন অনেক নাট্যনির্মাতাই সিনেমায় আসছেন। তাদের নিয়ে কী বলবেন? তাদের অবশ্যই স্বাগতম। দেখেন টিভি সিনেমায়, সিনেমা ভিজ্যুয়াল ইন্ডাস্ট্রির একটি বড় মাধ্যম। নাটকেও শট ডিভিশন রয়েছে, সিনেমায় শট ডিভিশন রয়েছে। তবে সিনেমার শট ডিভিশন আলাদা। সিনেমাপাড়ায় একটি কথা প্রচলিত আছে, যারা নাটক থেকে সিনেমায় আসে তারা আসলে নাটকই বানিয়ে ফেলে। নাটক থেকে তারা বের হতে পারে না। কিন্তু আমি বলব, এখন তারা অনেক উন্নতি করেছে। এজন্য আমরা মনপুরা, আয়নাবাজির মতো ব্লকবাস্টার সিনেমা পাচ্ছি। মানুষ আবার হলে ফিরে আসছে। তবে তরুণ যারা আসছে তাদের বলব, ডায়ালগের দিকে খেয়াল করতে। একটু জোরে না বললে সিনেমায় কথা শোনা যায় কম। এসব দেখলে তারা আরও ভালো করতে পারবে।

গত বছরের সবচেয়ে আলোচিত ছবি অমিতাভ রেজার ‘আয়নাবাজি’। এ ছবিটির সাফল্য কিভাবে দেখছেন? অনেক ভালো। আমি সিনেমাটি প্রথমে দেখে অমিতাভ রেজার প্রশংসা করেছি। তাকে স্বাগত জানিয়েছি। এ ধরনের সিনেমা প্রতি দু-তিন মাসের মধ্যে একটি হওয়া উচিত।

বাংলাদেশে চলচ্চিত্রের ভবিষ্যৎ কেমন দেখছেন? সিনেমার ভবিষ্যৎ সব সময়ই ভালো। নতুন কোনো প্রযুক্তি এলে হয়ত সাময়িকভাবে গতি থমকে যায়। কিছু সময় পরে তা আবার নতুন করে নতুন ফর্মে প্রকাশ হয়। আমাদের ক্ষেত্রেও এমন হয়েছে হয়ত। আয়নাবাজির মতো সিনেমা তৈরি হচ্ছে। সামনে আরো হবে। সিনেমার ভবিষ্যৎ নিয়ে অবশ্যই আশাবাদী।

আপনাকে ধন্যবাদ। আপনাকেও ধন্যবাদ।

ছবি : শেখ সাইফ

(ঢাকাটাইমস/৮জানুয়ারি/এমইউ/টিএমএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :