চিনি এক মহা কালপ্রিট

মুনিরুদ্দীন আহমেদ
 | প্রকাশিত : ০৯ জানুয়ারি ২০১৭, ১১:০৯

অতি সম্প্রতি চিনি সংক্রান্ত এক অবিশ্বাস্য কেলেঙ্কারি উদ্ঘাটিত হয়েছে। সুগার অ্যাসোসিয়েশন রিসার্চ প্রোজেক্ট এর আওতায় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতনামা দুইজন গবেষককে ৫০ হাজার ডলার ঘুষ দিয়েছিল চিনি বাদ দিয়ে হার্ট অ্যাটাকের জন্য চর্বি ও কোলেস্টেরলকে দায়ী করে গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করার জন্য ।

১৯৬৭ সালে প্রকাশিত হার্ভার্ডের গবেষণা প্রবন্ধে হার্ট অ্যাটাকের জন্য এক তরফাভাবে চর্বি ও কোলেস্টেরলকে দায়ী করা হয়। অথচ চর্বি ও কোলেস্টেরল হার্ট অ্যাটাকের মূল কারণ নয়। সেই গবেষণায় চিনির সব ক্ষতিকর দিকগুলোকে বেমালুম চেপে যাওয়া হয়। পরবর্তী অনেক গবেষণায় প্রমাণিত হয় যে, চিনি হলো এক মহা কালপ্রিট যার কারণে শরীরে বহু রোগের উৎপত্তি হচ্ছে।

কার্ডিয়াক প্রবলেম, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস,, স্থুলতা, শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস, কিডনি ফেলিয়ারসহ অসংখ্য রোগের উৎপত্তির কারণ চিনি। চিনি হার্টের রক্তনালির অভ্যন্তরীণ দেওয়ালে প্রদাহ সৃষ্টি করার মাধ্যমে ক্ষত সৃষ্টি করে। এই ক্ষতে আঁশ, প্লেটিলেট, লাইপোফেইজ, চর্বি ও ক্ষতিকর কোলেস্টেরল (damaged due to oxidation by high temperature) ও ট্রান্স ফ্যাট জমে গিয়ে ইশকিমিয়া ও মাইওকার্ডিয়াল ইনফার্কশন সৃষ্টি করে।

এর ফলে মানুষ অসুস্থ হয় অথবা কার্ডিয়াক ফেলিয়ারের কারণে মারা যায়। কালপ্রিট চিনি অব্যাহতি পাওয়ার পর সুগার অ্যাসোসিয়েশন মওকা পেয়ে গেল এবং এই সুযোগ সদ্ব্যবহার করে সারা বিশ্বব্যাপী বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের চিনিসমৃদ্ধ কোমল পানীয়, এনার্জি ড্রিংক ও আইসক্রিম, মিষ্টি ও মিষ্টিজাতীয় খাবারের ব্যবসা চালিয়ে যাবার অবাদ স্বাধীনতা পেয়ে গেল।

বর্তমানে বিশ্বের ৪০ শতাংশ মানুষ স্থুল এবং এই স্থুলতার মূল কারণ চিনি। চিনি ও পরিশোধিত চিনির খাবার খেয়ে বিশ্বে লাখ লাখ মানুষ হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকে মারা যাচ্ছে। ৫০ বছর আগে প্রফেসর ইয়াদগিন প্রাণী ও মানুষের ওপর গবেষণা চালিয়ে বলেছিলেন, চর্বি ও কোলেস্টেরল নয়, চিনিই হার্ট অ্যাটাকের আসল কারণ।২০১৪ সালে কার্ডিওলোজিস্ট এটকিন বলেছিলেন, হাই ফ্যাট ও লো কার্বোহাইড্রেট ডায়েট মানুষের ওজন কমায়, লো ফ্যাট ডায়েট নয়। এই একই কথাগুলো আমি বলে আসছি বহু বছর ধরে। মানুষ শুনছে আর বিশ্বাসও করছে। কিন্তু চিকিৎসকরা বিশ্বাস করে না। তারা রোগী ও সুস্থ মানুষকেও ডিম, দুধ, বাটার, পনির এবং অন্যান্য কোলেস্টেরলসমৃদ্ধ খাবার খেতে মানা করে, অথচ কোল্ড ড্রিঙ্ক, এনার্জি ড্রিঙ্ক, আইসক্রিম বা অন্যান্য চিনি বা চিনি সমৃদ্ধ খাবার খেতে নিষেধ করে না। অবাক কাণ্ড !!!

লেখক: অধ্যাপক, ক্লিনিকাল ফার্মাসি ফার্মাকোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :