বইঃ আমার কথা
মন্ত্রিসভার রদবদল
সৈয়দ আবুল হোসেন বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ‘আমার কথা’। এই বইয়ে তিনি নিজের চিন্তা, কর্মকাণ্ড, মূল্যবোধ, নানা অভিজ্ঞতা ও পরিকল্পনা সম্পর্কে লিখেছেন। এটি পড়লে তাকে যারা পুরোপুরি চিনেন না তাদের সুবিধা হবে। বইটি ‘ঢাকাটাইমস২৪ডটকম’ ধারাবাহিকভাবে ছাপছে। বইটির আজকের পর্বে থাকছে - 'মন্ত্রিসভার রদবদল’
আমি মনে করি, একজনকে নিয়ে যখন খুব বেশি বিতর্ক সৃষ্টি হয়, তখন সেই মন্ত্রীর মন্ত্রীগিরি ছেড়ে দেওয়া উচিত। কারণ মন্ত্রিত্ব ধরে রাখলে তার আরও বেশি সমস্যা হয়, সমস্যা হয় দলের এবং সরকারের। এই কারণে আমি নিজেও মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছি। আমার পদত্যাগ করার কারণ এই ছিল না যে- আমি ব্যর্থ ছিলাম। তা ছিলাম না। আমি সফল মন্ত্রী ছিলাম। ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি। মিডিয়া অহেতুক আমার পেছনে লেগেছিল। এটি ছিল স্রেফ ষড়যন্ত্র। আমার সফলতায় ঈর্ষান্বিত হয়ে কিছু কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি এমন অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছিল, তাদের মিথ্যা প্রচারণায় ভুল বুঝে যোগ দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। এখন বিশ্বব্যাংক অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছে- আমার বিষয়ে পদ্মা সেতু নিয়ে তাদের মন্তব্য ও সিদ্ধান্ত যথার্থ ছিল না।
সরকারের মন্ত্রিসভা একবার নয় বারবারও পুনর্গঠন করা যেতে পারে। সরকারে গতি আনার জন্য এটা সরকার-প্রধান করতেই পারেন। এটি সংবিধানসম্মত। পৃথিবীর প্রত্যেক দেশে এমন হয়।বিশ্বব্যাংকের কাছে পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগ নিয়ে অনেক কথা বলা হয়েছে- যার কোনো ভিত্তি ছিল না। এখন প্রমাণিত হয়েছে যে, আমি কোনো অন্যায় করিনি। তাহলেও আমি মনে করি, পদত্যাগ করে আমি যথার্থ সিদ্ধান্তই নিয়েছিলাম। আমার মতো এমন সাহসী দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে আর কেউ স্থাপন করতে পারেননি। আমি গণতন্ত্র ও স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। ক্ষমতা আঁকড়ে থাকাই আমার কাছে সব নয়। আমি পদত্যাগ করেছি আর একজন আমার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। তিনি কাজ করছেন। মাঠে মাঠে দৌড়ঝাঁপ করছেন। আমি মনে করি, সরকারের মন্ত্রিসভা একবার নয় বারবারও পুনর্গঠন করা যেতে পারে। সরকারে গতি আনার জন্য এটা সরকার-প্রধান করতেই পারেন। এটি সংবিধানসম্মত। পৃথিবীর প্রত্যেক দেশে এমন হয়।
আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়ার পর মন্ত্রিসভার পুনর্গঠন হবে- এমন কথাও শোনা গিয়েছিল। সেখানে মন্ত্রী হওয়ার সম্ভাব্য নাম হিসাবে গণমাধ্যমে আমার নামও আসে। কিন্তু আমি তো মন্ত্রী হওয়ার জন্য উদগ্রীব নই। বরং আমার সহধর্মিনী ও কন্যাদ্বয় মনে করেন, আমার আর ওই পদে যাওয়া উচিত হবে না। আমি মনে করি, সরকারি কাজ সম্পাদন ও উন্নয়নে সরকার বিবেচনা করবে কতটুকু সে সন্তুষ্ট এবং রাষ্ট্রীয় কার্য সম্পাদন যদি নেতিবাচক হয় তাহলে অবশ্যই মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন আনতে হবে। আর ইতিবাচক হলে তার প্রয়োজন হবে না। তবে এটা সরকার-প্রধানকে বিবেচনা করতে হবে, তিনি নিকট-ভবিষ্যতে সরকারে কোনো পরিবর্তন আনবেন কিনা। অবশ্যই এর উত্তর বের করে তাঁকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ, মাঝে মাঝে পরিবর্তন দরকার। আর পরিবর্তন না হলে যিনি স্থায়ীভাবে ক্ষমতাসীন থাকেন, তিনি তাঁর প্রথমদিকের উদ্যমতা ও কাজের গতি সমানতালে ধরে রাখতে পারেন না বলে সরকারের কাজে একপর্যায়ে ঢিলেমি চলে আসে। অধিকন্তু ক্ষমতার অহমিকাও মনে ভর করে বসে। সেটা উন্নয়নের ধারাবাহিকতাকে নষ্ট করে। এটা সরকারকে বিবেচনা করতে হবে। তা কেবল মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের বেলায় নয়, অন্যান্য অনেক ক্ষেত্র রয়েছে সরকারের, সেইসবের বেলায়ও এটা হতে পারে।
এটা সবাই স্বীকার করবে, গুরুত্ব ও মর্যাদার দিক দিয়ে, বাংলাদেশ বিশ্বের এমন একটি তালিকাভুক্ত দেশ যার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যেমন সমৃদ্ধ, তেমনি প্রাচীন। দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে, প্রযুক্তিগত জ্ঞানে এবং বিনিয়োগের পরিবেশ প্রদান এবং দ্রুত বিভিন্ন ধরনের বহুমাত্রিক লেনদেন সম্পন্ন করার ব্যবস্থা বিদ্যমান রয়েছে আমাদের দেশে। সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনেকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার। বৈদেশিক বাণিজ্য, কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, নিরাপত্তা ও সুরক্ষা এবং অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে বিভিন্ন কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাওয়া। আর এসবই দেশের সফলতার ও উন্নয়নের পিছনের কাহিনি। সেটা দিন দিন আরও বাড়ছে।
নিঃসন্দেহে একসময় শুধু একটি কাজে চলে না। অনেক ক্ষেত্র রয়েছে। সেগুলোতেও কাজ করতে হয়। আমাদের এখানে সরকারকে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়াও অন্যান্য কিছু বিভাগের উন্নয়নের কাজ চলমান রাখতে হবে। যেমন- শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সর্বোপরি, মৌলিক মানবাধিকারগুলো নিশ্চিত করার কাজ। সরকারি কাজের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাতগুলোতে এসব বিদ্যমান ছিল ও আছে।
জন্মগতভাবে পরিবর্তন আমাদের লক্ষ্য নয় বরং ভালো কিছুর জন্যই পরিবর্তন দরকার। যদি আমরা এটা অর্জন করতে পারি তবে সেটাই খুব ভালো। যদি আমরা না পারি তবে আমরা নিজেরাই নিজেদের পরিমার্জিত করে নেব। তবে ‘একলা চল’ নীতি নয়, একটি দেশের উন্নয়নের জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকতে হবে।আমাদের আরও বেশি সফলতা অর্জনের জন্য প্রতিনিয়ত সরকারি কর্মকর্তাদের উৎসাহিত করা দরকার। আমরা সবসময় বিভিন্ন প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, উন্নয়ন, অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক পর্যায়ে জ্ঞান বিনিময়ের সুযোগসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা ঘোষণা করি। আমরা তাদের নিজেদের বিকাশের জন্য একের পর এক সুযোগ দিয়ে থাকি, তবে তা অনির্দিষ্টকালের জন্য নয়। একটি সময় আসে যখন আমরা বিভিন্ন সেক্টরের, বিশেষ করে, বিভিন্ন বাহিনীর সফল কর্মকর্তাদের পুরস্কৃত করি এবং ধন্যবাদ জানাই। তাদের জন্য আরও নতুন সুযোগ করে দিই, যাতে প্রতিষ্ঠানগুলোর আরও গতিসঞ্চার হয়।
সফলদের মধ্যে যাঁরা তাঁদের পরিবর্তন ধরে রাখতে পারেন, চ্যালেঞ্জ নিতে পারেন এবং শর্ত পালনে শীর্ষে থাকেন, তাঁদেরই সেরাদের সেরা নির্বাচন করা হয়। কেবল উদ্ভাবন ও সৃজনশীল কর্মকর্তা, ইতিবাচক শক্তিসমৃদ্ধ, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ও যাঁর চিন্তার দিগন্ত ব্যাপক তাঁরাই এ তালিকায় থাকেন। প্রত্যেক কর্মকর্তাই তাঁর নিজের সম্পর্কে জানেন, ফলে তিনি নিজে তাঁর সাফল্যের সাক্ষ্য হয়ে থাকেন। অতএব শুধু আমার একার বিচার করা উচিত হবে না। এবার তাঁদের নিজেদের কাছে নিজেদের এবং গণমানুষের কাছে তাঁদের কর্মের জন্য গ্রহণযোগ্যতার দায়ভার ছেড়ে দেওয়া হোক।
তাই আমাদের মধ্যে কারও যদি আগ্রহ নষ্ট হয়ে যায় আমি তাকে বলি, “এই মঞ্চ তোমারই”; আবার যে ব্যক্তিগত উন্নয়নের চেষ্টায় লিপ্ত তাকে বলি, “নিজে নিজে একবার স্মরণ করে দেখুন, আপনার কী কী দোষ, ভুল বা অপরাধ আছে।”
সরকার পরিবর্তনের সময় আমি একটি কথা প্রায়শ বলি, যখন আমাদের দেশের প্রতি কারও আগ্রহ নষ্ট হয়ে যাবে তখন আমি এরকম একটি সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা করব না। শুধু পরিবর্তনের জন্য পরিবর্তন আমাদের লক্ষ্য নয়, বরং ভালো কিছুর জন্যই পরিবর্তন দরকার। যদি আমরা এটি অর্জন করতে পারি, তবে সেটা খুবই ভালো। যদি আমরা না পারি তবে আমরা নিজেরাই নিজেদের পরিমার্জিত করে নেব। তবে ‘একলা চলো’ নীতি নয়, একটি দেশের উন্নয়নের জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, দশজন কখনও হারে না, সম্মিলিত শক্তির জয় অনিবার্য।
আগামীকাল কাল থাকছে - “একটি শিশুর সপ্ন” আরও পড়ুন - পর্যটন ও ভ্রমন, সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ, জাতিগত ঐক্য : অপরিমেয় শক্তির আধার, প্রেরণা ও উৎসাহঃ কর্মক্ষমতা বাড়ায়, ‘কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাছে প্রত্যাশা’ বৈশ্বিক সহায়তা, বাংলাদেশের সফলতা, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের গুরুত্ব, সরকারি কাজের পর্যবেক্ষণ, ব্যবসায়ীদের বিশ্বসমাবেশ, ‘‘অসম্ভব’: একটি ভৌতিক শব্দ’ 'বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া', ‘ক্যারিয়ার গঠনে প্রতিযোগিতা’ ঝুঁকি বনাম সাফল্য, ভিশন-২০২১, ‘সৃজনশীলতা’ ‘বিনিয়োগ’, ‘বাংলার বসন্ত’, ‘সময়, শ্রম ও অধ্যবসায়’ ‘আমার আদর্শ আমার নায়ক’ , ‘ধৈর্য পরীক্ষা’, ‘খেলাধুলা ও বাংলাদেশ’ ‘অধ্যয়ন, লেখালেখি ও নেতৃত্ব’ ‘নারীর ক্ষমতায়ন ও বাংলাদেশ’, ‘সাফল্যের স্বর্ণদ্বার’ , ‘ঐক্যবদ্ধ শক্তি সাফল্যের মেরুদণ্ড’ ‘পদ্মা সেতু’, `বিজয়চিহ্ন 'V' প্রকাশে ভিন্নতা', ‘উন্নয়ন ও অগ্রাধিকার’ , ‘ইতিবাচক ভাবনা সাফল্যের চাবিকাঠি’ , ‘ভবিষ্যতের সরকার কেমন হবে’ ‘মাতৃভাষার প্রতি মমতা’, ‘সুখ ও শান্তি : আমাদের করণীয়’ , ‘নেতৃত্বের শক্তি’, ‘আদর্শ জীবন গঠনে মূল্যবোধ’, ‘আমার প্রাত্যহিক জীবন’, 'আমার অনুভব'।মন্তব্য করুন