বইঃ আমার কথা

একটি শিশুর স্বপ্ন

প্রকাশ | ১০ জানুয়ারি ২০১৭, ১৯:৫৬

অনলাইন ডেস্ক

সৈয়দ আবুল হোসেন বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে আমার কথা। এই বইয়ে তিনি নিজের চিন্তা, কর্মকাণ্ড, মূল্যবোধ, নানা অভিজ্ঞতা ও পরিকল্পনা সম্পর্কে লিখেছেন।

এটি পড়লে তাকে যারা পুরোপুরি চিনেন না তাদের সুবিধা হবে। বইটি ঢাকাটাইমস২৪ডটকম ধারাবাহিকভাবে ছাপছে। বইটির আজকের পর্বে থাকছে - '​একটি শিশুর স্বপ্ন’


শিশুর কথা উঠলেই বিখ্যাত লেখক এরিক হোফারের একটা উক্তি আমার মনে পড়ে যায়। তিনি বলেছেন : Children are the keys of paradis ব.১১০ তাই শিশুদের আমি সবসময় প্রত্যাশার চোখে দেখি। তারা আমাদের প্রত্যাশার মহীসোপান। প্রত্যেকের স্বপ্ন থাকে, আশা থাকে। তেমনি থাকে শিশুরও। একটি শিশুর স্বপ্ন কী তা জানা দরকার। কারণ, একটি শিশু জন্ম থেকে স্বপ্ন দেখে না। জন্ম নেওয়ার পর স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। বলা যায়, পরিবেশ থেকে শিশু স্বপ্ন দেখতে শেখে, স্বপ্নের মাধ্যমে নিজেকে বিকশিত করার অনুপ্রেরণা লাভ করে। সেই স্বপ্ন দেখার জন্য তাকে উদ্বুদ্ধ করতে হয়, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্র ও অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হয়। মনে রাখতে হবে, শিশুদের জন্য বিনিয়োগই সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ। যে শিশু সুন্দর স্বপ্ন দেখে কেবল সেই শিশুর দ্বারা দেশের সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণ করা সম্ভব। অনেক শিশু প্রশ্ন করে, কীভাবে সফল হওয়া যাবে? কীভাবে নিজেকে স্থাপিত করা যাবে অদ্বিতীয় আসনে? এসব প্রশ্নের উত্তর মুখে দেওয়া যায় না, দেওয়া গেলেও তা প্রকৃত অর্থে কোনো জবাব নয়। বরং তার চারপাশে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করা উচিত যা থেকে সে উত্তর পেয়ে যেতে পারে।


পরিবেশ, পরিস্থিতি ও অবস্থা থেকে নিজেই সে যথার্থ পথটি বেছে নিতে সক্ষম হবে। এ বিষয়ে একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। কেউ যদি দৌঁড়বিদ অথবা অন্য খেলাধুলায় বিখ্যাত হতে চায় তাহলে তার মন সেদিকেই নিয়ে যেতে হবে। কারণ, দৌঁড়বিদ অথবা অন্য কোনো খেলোয়াড় হওয়া অতটা সহজসাধ্য নয়। এটি একটি প্রতিভা যা নিজের ভিতরে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। নিজের ভিতরের এ সুপ্ত গুণগুলোকে জাগিয়ে তোলা এবং সেগুলোকে সবসময় উজ্জীবিত রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই বিষয়টি মানুষের ভিতর থেকে হয়। কেউ চাঁদের দেশে অথবা মঙ্গলগ্রহে যেতে চাইলেও তাকে সেখানে যেতে পারার মতো যোগ্য উপাদানে বিভূষিত করে তোলার ক্ষেত্র প্রস্তুতের সুযোগ দিতে হবে। তা হলে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে সক্ষম হবে। এজন্য বড়দের অনেক দায়িত্ব রয়েছে।


“একটি শিশুর স্বপ্ন কী তা জানা দরকার। কারণ, একটি শিশু জন্ম থেকে স্বপ্ন দেখে না। জন্ম নেওয়ার পর স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। বলা যায়, পরিবেশ থেকে শিশু স্বপ্ন দেখতে শেখে, স্বপ্নের মাধ্যমে নিজেকে বিকশিত করার অনুপ্রেরণা লাভ করে। সেই স্বপ্ন দেখার জন্য তাকে উদ্বুদ্ধ করতে হয়, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্র ও অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হয়। মনে রাখতে হবে, শিশুদের জন্য বিনিয়োগই সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ। যে শিশু সুন্দর স্বপ্ন দেখে কেবল সেই শিশুর দ্বারা দেশের সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণ করা সম্ভব।”


একটি শিশুর স্বপ্ন পূরণের জন্য প্রথম প্রয়োজন হচ্ছে- তার অদম্য ইচ্ছা আর মনোবল। সেইসঙ্গে সাহসিকতা ও জানার আগ্রহ। এগুলো থাকলে সে যে কোনো কাজে সফল হতে পারবে। এজন্য শৈশবে তাকে শেখাতে হবে : নিজের বাবা-মাকে শ্রদ্ধা করতে হবে, নিয়মিত স্কুলে যেতে হবে, শিক্ষক এবং বড়দের শ্রদ্ধা করতে হবে। এছাড়া সে ভবিষ্যতে যেটা হতে চায়- সেক্ষেত্রের সফল ব্যক্তিদের সফলতাকে আয়ত্ত করার কৌশলগুলো রপ্ত করতে হবে। কেউ ফুটবল খেলোয়াড় হতে চাইলে- তাকে পেলে এবং ম্যারাডোনার মতো বিখ্যাত খেলোয়াড়দের গুণাবলি সম্পর্কে সম্যক অবগত হয়ে, সেগুলো অর্জনের জন্য অনুশীলন করতে হবে। এটিই হবে তার সবচেয়ে সহজতর অধ্যায়। যদি তার আদর্শ ও নৈতিকতা দেখে তার বাবা-মা, শিক্ষক এবং তার আশপাশের লোকজন অভিভূত হয়, তবে সে কোনো উচ্চতর প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণের সুযোগ পাবে। সমাজ তখন দায়বদ্ধ হয়ে ওঠার প্রেরণা পাবে।


একটি শিশু যদি একজন বিখ্যাত খেলোয়াড় হতে চায় কিংবা দামি একটি গাড়িতে চড়তে কিংবা আকাশে উড়তে ইচ্ছে পোষণ করে, তার মানে হলো- শিশুটির অন্তরে রয়েছে উচ্চাকাক্সক্ষা এবং দৃঢ়সংকল্প। আমি শিশুদের মধ্যে খেলাধুলায় অনেক বেশি আগ্রহ দেখি, তাই তাদের খেলাধুলার জন্য উৎসাহ দিয়ে থাকি। ১৪০০ বছর পূর্বে ইসলামের চতুর্থ খলিফার অন্যতম সহচর উমর ইবনে খাত্তাব বলেছিলেন : “আপনার শিশুকে সাঁতারের কৌশল শেখান”। এখানে সাঁতারের বিষয়টি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। অর্থাৎ এতে একটি শিশুর মধ্যে প্রতিযোগিতার মানসিকতা সৃষ্টি হয়। সে অন্যকে পেছনে ফেলে রেখে আরও দ্রুত সামনের দিকে ধাবিত হয়। প্রতিযোগিতা একটি শক্তি, শক্তি অর্জনের কৌশল, উপায়- এটি এমন একটি শক্তি, যা শিশুর মনন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে। অলিম্পিকের মূলমন্ত্রও তেমন- আরও দ্রুত, আরও উচ্চ, আরও শক্তিমান এবং গতিশীল হওয়া।


“মানুষ মাত্রই সাধারণ হয়ে জন্মায়, প্রত্যেকেই থাকে শিশু। জ্ঞান-ধ্যান, আচার-আচরণ, প্রেম-ভালবাসা, নির্লোভ-কর্ম, স্বর্গীয়-অনুভূতি, অহিংস-মমত্ব, প্রগাঢ়-অনুভব, সৎ-চিন্তা ও কল্যাণময়-কর্ম ইত্যাদির অনবদ্য সমন্বয়ে একজন মানুষ যখন আলোকিত হয়ে ওঠেন, তখনই তিনি মহামানবে পরিণত হন।”


বলা যায়, যে কোনো পর্যায়ে ভালো খেলোয়াড় অথবা উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি হতে হলে নিজের মধ্যে ধৈর্য এবং নিয়ন্ত্রণ শক্তিকে যথাযথভাবে ধারণ করতে হবে, যা আমাদের শিশুদের মধ্যে দরকার। ভিতরের নৈতিকতার সঙ্গে বাইরের গুণাবলির একটি সামঞ্জস্য বিধান করতে হবেÑ যেমনিভাবে সামঞ্জস্য রয়েছে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মনোদৈহিক শক্তি ও গতিবিধির। এর সঙ্গে আবেগের শক্তির সম্পর্ক রয়েছে, তা প্রতিফলিত হয় সহনশীলতার বিস্তার এবং ধৈর্যের মাত্রার ওপর। আবেগ প্রাকৃতিক শক্তির মতো, এটি এমন একটি শক্তি যা দেখা যায় না, কিন্তু সীমাহীন। শিশুতে আবেগ আছে, এ আবেগ যথাকার্যে যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে, কাজে লাগাতে পারলে, জাতি বিপুল শক্তির কল্যাণকর ক্ষেত্রে পরিণত হবে।


মোগল শাসনামলে এমনকি ইংরেজ আমলেও ঘোড়দৌড় প্রবল জনপ্রিয় ছিল। ওই সময়ের শিশুরা উত্তরসূরি হিসাবে এই গুণ পেয়েছিল। তাদের পূর্বপূরুষেরা এই গুণ নিয়ে এসেছিল যা পরে এখানে স্থায়িত্ব লাভ করেছিল। কিন্তু আজকের দিনে, আমাদের অশ্বারোহণ এখন তেমনভাবে চালু নেই। তবে অতীতে ছিল। এখন এর বিকল্প হিসাবে ঘোড়ার গাড়ি চলে পুরনো ঢাকায়। অশ্বারোহণ একটি উত্তেজনাপূর্ণ খেলা। শুধু ভালো মানুষেরাই, যারা আনন্দ খোঁজে তারাই যত্নের সাথে অশ্বারোহণ করে থাকে।


মানব আর মহামানবের আকৃতি অভিন্ন। তারা মানবিক দুর্বলতা থেকে মুক্তও নয়, তবু পার্থক্য ব্যাপক। এ পার্থক্য ধর্মে নয়, কর্মে; বর্ণে নয়, মর্মে। কর্ম ও মর্মের অভিনন্দিত সমন্বয় ঘটিয়ে যেকোনো মানুষ মহামানব হয়ে উঠতে পারেন। মানুষ মাত্রই সাধারণ হয়ে জন্মায়, প্রত্যেকেই থাকে শিশু। জ্ঞান-ধ্যান, আচার-আচরণ, প্রেম-ভালবাসা, নির্লোভ-কর্ম, স্বর্গীয়-অনুভূতি, অহিংস-মমত্ব, প্রগাঢ়-অনুভব, সৎ-চিন্তা ও কল্যাণময়-কর্ম ইত্যাদির অনবদ্য সমন্বয়ে একজন মানুষ যখন আলোকিত হয়ে ওঠেন, তখনই তিনি মহামানবে পরিণত হন। সুতরাং জন্ম নয়, কর্মই মানুষকে মহান করে, ক্ষুদ্র করে।


বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে একসময় নৌকাবাইচের প্রতিযোগিতা বেশ জনপ্রিয় ছিল। প্রায় সর্বত্র এ ধরনের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতো। এখন সে ঐতিহ্য ও জৌলুশ অনেকটা কমে গেছে। তবে নদ-নদী খাল-বিলে ভরা বিস্তৃত এলাকায় বর্ষা মৌসুমে সীমিত পর্যায়ে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। আমাদের দেশে অনেক ঐতিহ্যমান খেলা রয়েছে, যেগুলোতে পূর্বপুরুষের শৌর্যবীর্য এবং ব্যক্তিত্ব প্রকাশিত হতো। যেমন- কুস্তি, গরুর দৌড়, লাঠি খেলা, হাডুডু, দাঁড়িয়াবান্ধা প্রভৃতি। একটি জাতিকে বহির্বিশ্বে পরিচিত করার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতাপূর্ণ খেলার ভূমিকা অনস্বীকার্য।


পৃথিবীর অনেক অখ্যাত দেশ অলিম্পিক বা অন্য খেলায় অংশগ্রহণ করে জয়ী হয়ে বিশ্বময় পরিচিতি লাভ করেছে। আমি একটি বিষয় স্পষ্ট করে বলতে চাই, তা হলো- একজন শিশুর মধ্যে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত প্রতিভাকে জাগাতে হলে তার কর্ম ও মর্মের অভিনন্দিত সমন্বয় ঘটিয়ে যেকোনো মানুষ মহামানব হয়ে উঠতে পারেন।


স্বপ্ন মানুষকে উজ্জীবিত করে। আর স্বপ্নের বাস্তবায়ন মানুষকে করে সমৃদ্ধ। বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা মানুষকে করে ঋদ্ধ। শিশুর স্বপ্ন শিশুর মতোই সরল, কিন্তু আধুনিক চেতনায় ভরপুর। তাই শিশুর সকল স্বপ্নকে লালন করার জন্য আমাদের সকল সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করে যাওয়া উচিত। উন্নত জাতি গঠন করতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই। শিশুরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। শিশুদের মাধ্যম ছাড়া ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের বিকল্প কোনো উপায় আমাদের নেই। তাই দেশের প্রত্যেক শিশুকে সচেতন পিতামাতার মতো নিজের সন্তান হিসাবে সুশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। আমি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণের মাধ্যমে এটি বাস্তবায়নের প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি।

আগামীকাল কাল থাকছে - “সুস্থ মানুষ সুস্থ নেতা” 

আরও পড়ুন - '​মন্ত্রিসভার রদবদল’ পর্যটন ও ভ্রমন, সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ, জাতিগত ঐক্য : অপরিমেয় শক্তির আধার, প্রেরণা ও উৎসাহঃ কর্মক্ষমতা বাড়ায়, ‘​​কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাছে প্রত্যাশা’ বৈশ্বিক সহায়তা, বাংলাদেশের সফলতা, ​প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের গুরুত্ব,​ সরকারি কাজের পর্যবেক্ষণ, ব্যবসায়ীদের বিশ্বসমাবেশ, ‘‘অসম্ভব’: একটি ভৌতিক শব্দ’ 'বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া', ‘ক্যারিয়ার গঠনে প্রতিযোগিতা’ ঝুঁকি বনাম সাফল্য, ভিশন-২০২১, ‘সৃজনশীলতা’ ‘বিনিয়োগ’, ‘বাংলার বসন্ত’, ‘সময়, শ্রম ও অধ্যবসায়’ ‘আমার আদর্শ আমার নায়ক’ , ‘ধৈর্য পরীক্ষা’, ‘খেলাধুলা ও বাংলাদেশ’ ‘অধ্যয়ন, লেখালেখি ও নেতৃত্ব’ ‘নারীর ক্ষমতায়ন ও বাংলাদেশ’, ‘সাফল্যের স্বর্ণদ্বার’ , ‘ঐক্যবদ্ধ শক্তি সাফল্যের মেরুদণ্ড’ ‘পদ্মা সেতু’, `বিজয়চিহ্ন 'V' প্রকাশে ভিন্নতা', ‘উন্নয়ন ও অগ্রাধিকার’ , ​‘ইতিবাচক ভাবনা সাফল্যের চাবিকাঠি’ , ‘ভবিষ্যতের সরকার কেমন হবে’   ‘মাতৃভাষার প্রতি মমতা’‘সুখ ও শান্তি : আমাদের করণীয়’ , ‘নেতৃত্বের শক্তি’ ‘আদর্শ জীবন গঠনে মূল্যবোধ’, ‘আমার প্রাত্যহিক জীবন’​, 'আমার অনুভব'