এখনো বঙ্গবন্ধুর অভাব পলে পলে অনুভব করি

অধ্যাপক মুহম্মদ মাহবুব আলী
 | প্রকাশিত : ১০ জানুয়ারি ২০১৭, ২১:০৯

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতির কল্যাণে সারা জীবন আত্মনিবেদিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু মুক্তি না পেলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ধরে রাখতে পারতাম কি না সন্দেহ ছিল এবং বাংলাদেশ স্বাধীনতা পাওয়ার পরেও অস্তিত্ব টিকে থাকতো কি না তাতেও সন্দেহ আছে। বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেনে এদেশের দুঃখী মানুষের জন্য। তিনি প্রথমেই রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য প্রেসিডেন্সিয়াল ফর্ম ও গভর্নমেন্ট থেকে প্রধানমন্ত্রীনির্ভর রাষ্ট্রব্যবস্থা চালু করেন। তাঁর সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের ত্যাগ-তিতিক্ষার আলোকে সাড়ে তিন বছরের শাসনকালে বিভিন্ন ফ্রন্টে মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করেছেন। সে সময় যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি রাষ্ট্রের পুনর্গঠনের জন্য যা যা করার দরকার তিনি তা করেছেন। কিন্তু দুভার্গ্যজনক রাজাকার ও কিছু ঘাঁপটি মেরে থাকা শক্র সিরাজ শিকদার ও সিরাজুল আলম, মেজর জলিলসহ কেউ কেউ বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধাচরণ করেন। তারপরেও বঙ্গবন্ধু তাঁর কাজে সবসময় অবিচল ছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বেশি সাফল্য শুধু দেশ স্বাধীন নয়, স্বল্প সময়ের মধ্যে ভারতীয় সৈন্য তাদের দেশে প্রত্যাবর্তন এবং ফারাক্কা চুক্তি। পাশাপাশি তিনি জনকল্যাণের কথা ভেবে যখন দেশে একটি মেন মেইড দুর্ভিক্ষ হয়েছিল তখন চেষ্টা করেছিলেন বাকশালের আওতায় মানুষের দুঃখ বেদনা লাঘবের। গণতন্ত্রের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ছিল অবিচল আস্থা। তিনি পাকশাহী আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান, খলনায়ক জুলফিকর আলী ভুট্টো কারোর কথায়ই কখনো মাথা নতো করেননি। পাকিস্তান কারাগারে তার ফাঁসি হতে পারে জেনেও তিনি অবিচল আস্থায় নির্ভয়ে ছিলেন। এবং যুদ্ধ শেষে আন্তরিকতার সাথে দেশ পরিচালনা করেছেন। অথচ কিছু দুষ্টুচক্র বন্ধবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মতো নৃশংস ঘটনার অধ্যায় বাঙালি জীবনে ঘটায়। এটি আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক।

আজ আমরা পলে পলে বঙ্গবন্ধুর অভাব অনুভব করি। তিনি শান্তির জন্য জুলিও কুরি পুরস্কার পেয়েছিলেন। কিন্তু নোবেল পুরস্কার পাননি। এটি বঙ্গবন্ধুর জন্য নয়, নোবেল কমিটির জন্য লজ্জার। কেননা তার মতো মহতিপ্রাণ ব্যক্তিকে যোগ্য সম্মান করতে ব্যর্থ হয়েছিল তারা। আজ বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজের জোয়াল বসেছে জননেত্রী শেখ হাসিনার ঘাড়ে। তিনি পিতার অসমাপ্ত কাজ সুন্দরভাবে পালন করে চলেছেন। বঙ্গবন্ধু দিয়ে গেছেন স্বাধীন রাষ্ট্র। আর তার সুযোগ্য কন্যার নেতৃত্বে আমরা এগিয়ে চলেছি অর্থনীতির মুক্তির আস্বাদ অনুভব করার জন্য।

বঙ্গবন্ধু ওআইসি সম্মেলনে গিয়েছিলেন, জুলফিকার আলী ভুট্টোকে এ দেশে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আশা করেছিলেন পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের যে বিশাল দায়-দেনা আছে তা ভুট্টো আন্তরিকতার সাথে কাজ করবে। কিন্তু বিশ্বাসঘাতক ভুট্টো কখনো তা করেননি। বরং বঙ্গবন্ধুর মর্মান্তিক মৃত্যুর দিন সারারাত সজাগ ছিলেন এবং টেলিফোনে গুপ্তঘাতকদের সাথে যোগাযোগ ছিল বলে পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়। যাকে পাকিস্তানিরা হত্যা করার সাহস পায়নি তাকে কতিপয় বিপদগামী সেনা হ্ত্যা করলো এর চেয়ে মর্মান্তিক আর কী হতে পারে।

একটি নাবালক রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত বিদেশে বসে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যখন অশালীন কথা বলেন তখন তাকে কুলাঙ্গার ছাড়া কিছুই বলা যায় না। এমনকি তার মা ও বাবা কথা বলার দুঃসাহস দেখাতো না। এটি কেবল আইএসআই (পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা) এর মদদেই সম্ভব।

বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতি একাকার হয়ে গেছে। একই সূত্র গাথা। দারিদ্রপীড়িত বাংলার জনগণের জন্য তার ছিল দরদী মন। এ দরদ চিরকাল জাগ্রত থাকবে যতদিন বাংলাদেশর অস্তিত্ব টিকে থাকবে। বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল দুজনেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে একজন ডিজিটাল বাংলাদেশ ও অন্যজন প্রতিবন্ধীদের জন্য কাজ করে চলেছেন। এটি আমাদের গর্বের বিষয়। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে তিনি ও তার সাথে নিহত পরিবারবর্গের রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। আল্লাহ তাদের বেহেশত নসিব করুক।

জয়তু বন্ধুবন্ধু

জয় বাংলা।

লেখক : শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদ।

[email protected]

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :