আম-ছাগল বিত্তান্ত

তায়েব মিল্লাত হোসেন
 | প্রকাশিত : ১১ জানুয়ারি ২০১৭, ১৫:৩৬

প্রিয় পাঠক, শীর্ষে সমাসবদ্ধ শব্দখানি দেখে আবার ভাবতে যাবেন না যে এই মতদাতার বাড়ি রংপুরে। বাপ-দাদার সূত্রে ঢাকার মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুরের মানুষ। আপাতত ঢাকাবাসী। বিক্রমপুরে ‘স’-কে ‘হ’ বলার দোষ থাকলেও ‘র’-কে ‘অ’ বলি না আমরা। তাই শীর্ষতে রাম-ছাগলের কোনো গন্ধ খুঁজতে যাবেন না যেন। আমার প্রসঙ্গ আসলেই আম-ছাগল। মানে আম ও ছাগল।

অ-তে অজগরটি আসছে তেড়ে, আ-তে আমটি আমি খাব পেড়ে। শৈশবে এই ছিল আমাদের আদর্শলিপি। সেখানে ছাগলের কোনো জায়গা ছিল কি না, আজ আর মনেই পড়ে না। তবে ছাগল আমাদের জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবেই জড়িয়ে ছিল। এই জড়াজড়িতে নেতির মাত্রাই বেশি। ধরা যাক, মাস্টার মশাই একটা কাজ দিয়েছেন। তাতে ব্যর্থতার মাশুল হিসেবে কান মলে দিয়ে তিনি বললেন, ‘ছাগল দিয়ে কী হাল চাষ হয়!’ আবার হয়ত মায়ের মানা এড়িয়ে কোনো একটা কিছু করতে যাচ্ছি। মৃদু বকুনি দিয়ে তার ভাষ্য, ‘কথা না শুনলে, শেষকালে আম-ছালা দুইটাই কিন্তু হারাবি।’ গুরুজনদের কাছ থেকে কপালে, ‘রাম-ছাগল’ খেতাব যে কতবার জুটেছে তার তো কোনো ইয়ত্তা-ই নেই। আবার বয়োসন্ধিতে কিশোরকালে যখন দাড়ি-গোঁফ উঠতে শুরু করেছে, তখন অনেক বারই শুনতে হয়েছে, ‘রাম ছাগলের মতো...।’

বড়বেলায় এসেও ছাগল থেকে ছাড় নেই। কারণে কিংবা অকারণে রেগেমেগে আগুন প্রেয়সীর ঝাঁজ, ‘তুমি একটা ছাগল, বসে বসে কাঁঠাল পাতা চিবাও।’ স্বল্পকালীন ছাগল পালনের কিশোর অভিজ্ঞতায় দেখেছি এই প্রাণীটি কাঁঠাল পাতা আদতেই বেশ পছন্দ করে। ছাগল নিয়ে আমার সেরা আবিষ্কার এটুকুই। তো আমাদের মাননীয় পাঠ্যপুস্তক চিত্রকরের উদ্ভাবন আরো বড়। তার দারুণ পর্যবেক্ষণ ছাগলের প্রিয় একটি খাবার আম। তাই তো গল্পের গরুর বদলে ছাগলকে তিনি গাছে উঠাতে চাইলেন। যে সে নয় একেবারে আম গাছে। যেভাবেই হোক আম ছাগলকে খাওয়াতেই হবে। ছাগল যেন আদর্শলিপি থেকেই দীক্ষা নিয়েছে, ‘আমটি আমি খাব পেড়ে’।

রং নাকি ক্যানভাস স্বল্পতায় তিনি গল্পটা শেষ করে আনতে পারেননি, তা আমরা ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। শেষকালে সেই ছাগলের কী হয়, তা জানতে বড্ড ইচ্ছে করছে আমাদের। আম্র-অভিযান সফল, নাকি সেই চতুর শেয়ালের মতোই ব্যর্থতা অস্বীকার করে, ‘আঙুর ফল টক’ থুক্কু এখানে হবে, ‘আম অনেক টক’ বলে বাড়িমুখো হতে হয়েছিল সাদা-কালো সেই প্রাণীকে তা আঁকিয়ে ছাড়া আর কেউ জানাতে পারবেন না আমজনতাকে।

আম পাবলিককে জানানোর কার্যকর একটা মাধ্যম হতে পারে ছোটপর্দার বাক-চাতুরির আয়োজন। কোনো একটা টক শোতে চা-কফির দাওয়াতে পাঠ্যবইয়ের সেই শিল্পীকে ডেকে আনতে হবে। জাতিকে সরাসরি আম-ছাগলের বিশদ জানানোর মোক্ষম উপায় হতে পারে সেটা। সেই চারদলীয় জোট-যুগে বনানীর এক বায়ু-দালানের কল্যাণে কালো-ছাগল বা ব্ল্যাক বেঙ্গল কিন্তু এভাবেই দারুণ ছাগুপ্রিয় হয়েছিল। সেটা অবশ্য সরকারি গণমাধ্যমেই প্রচার পায় বেশি। তো ছাগু বলতে আন্তর্জাতিক সামাজিক মাধ্যমের যুগে এসে আমরা কিন্তু আলাদা একটা সম্প্রদায়ও পেয়েছি। আম-ছাগলে তাদের আগ্রহ, অনাগ্রহ নিয়ে কোনো আওয়াজ অবশ্য পাওয়া যায়নি। ছাগুরা কী আওয়াজ দিবেন?

দোহাই

ছাগল গাছের দিকে হাঁ করে কেন তাকিয়ে আছে, বা কেন এই ছবি দেওয়া হলো সেটি বুঝতে হবে... এটি ছোটদের বই এখানে অনেক কিছুই দেওয়া হতে পারে... মজা করার জন্য ছবিটি দেওয়া হয়েছে, নাকি বিভ্রান্ত সৃষ্টির জন্য দেওয়া হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে হবে

― নুরুল ইসলাম নাহিদ

মন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

তথ্যসূত্র : শিক্ষামন্ত্রীর ছাগলতত্ত্ব, ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকম, ১০ জানুয়ারি, ২০১৭

‘মজা’ দিতে পারলেই পার পেয়ে যাবেন ছাগল-আঁকিয়ে। সেই ইঙ্গিত কী দিলেন মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী? প্রাথমিকের পাঠ্যবইয়ের প্রচ্ছদ আর অলঙ্করণে কিংবদন্তিসম শিল্পী হাশেম খান এই ‘মজা’ খুশি মনে নিতে পারবেন? ‘আম-ছাগল’ কতটা নিতে পারবেন শ্রদ্ধাভাজন হাশেম স্যার?

তায়েব মিল্লাত হোসেন : সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক

ঢাকাটাইমস/১১জানুয়ারি/টিএমএইচ

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :