ইজতেমা ময়দানে আসছেন মুসল্লিরা

ইফতেখার রায়হান, টঙ্গী (গাজীপুর)
 | প্রকাশিত : ১১ জানুয়ারি ২০১৭, ১৮:৪৩

আগামী ১৩ জানুয়ারি শুক্রবার ফজরের নামাজের পর আমবয়ানের মধ্যদিয়ে শুরু হচ্ছে তাবলিগ জামাতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় অনুষ্ঠান বিশ্ব ইজতেমার ৫২তম আসরের প্রথমপর্ব। গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে প্রথম পর্বে ঢাকা, গাজীপুরসহ দেশের ১৭ জেলার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা অংশ নিচ্ছেন।

প্রতিবছরের ন্যায় এবারও স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে দেশের বিভিন্ন স্থানের তাবলিগ জামাতের সদস্যরা, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, শিল্প কারখানার শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার মুসলমান ধর্মাবলম্বীরা বিশ্ব ইজতেমার মাঠে প্রস্তুতিমূলক কাজ করেছেন। ইতোমধ্যে ইজতেমা মাঠের বিশাল এলাকাজুড়ে টাঙ্গানো হয়েছে সামিয়ানা, তৈরি করা হয়েছে বিদেশি নিবাস, বয়ান মঞ্চ, দোয়া মঞ্চ। এছাড়া সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে তুরাগ নদে ৭টি ভাসমান সেতুসহ র‌্যাব-পুলিশের জন্য পর্যবেক্ষণ টাওয়ার তৈরি করা হয়েছে।

বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে ইতোমধ্যেই দেশ-বিদেশের মুসল্লিরা ময়দানে আসতে শুরু করেছেন। ইজতেমায় দেশি মুসল্লিদের পাশাপাশি ১০০টিরও বেশি দেশের বিদেশি মেহমান অংশগ্রহণ করবেন। বুধবার সকাল থেকেই দলে দলে মুসল্লিরা বাস, ট্রাক, পিকআপ ও ট্রেনে করে ইজতেমা ময়দানে জড়ো হচ্ছেন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে ময়দানে মুসল্লিদের ভিড়ও বাড়ছে। দুপুর ১২টার দিকে ১৭ জনের একটি জামাত ইজতেমা মাঠে পৌঁছে। তারা সবাই পঞ্চগড় থেকে মঙ্গলবার রাত পৌনে নয়টার দিকে রওনা হন।

এছাড়াও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোগড়া এলাকা থেকে একটি জামাত ইজতেমা ময়দানে এসে উপস্থিত হয়েছে। ইজতেমা ময়দানে আগত একজন মুসল্লি জানান, গত জোড় ইজতেমার পর তিনি দ্বীনের কাজে ইজতেমা মাঠ থেকে পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকায় দাওয়াতের কাজ করেন। সেখানে এক চিল্লা (৪০দিন) দাওয়াতের কাজ শেষে মঙ্গলবার রাতে রওনা হয়ে বুধবার সকালে ইজতেমা মাঠে পৌঁছান।

এছাড়াও ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের পাগলা থানা এলাকা থেকে জিম্মদার শাহজালাল মাস্টারের নেতৃত্বে ১৮ জনের একটি জামাত মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে ইজতেমা মাঠে পৌঁছে।

ইজতেমা মাঠের মুরব্বি প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দিন জানান, দেশের মুসল্লিদের পাশাপাশি বিদেশি মুসল্লিরাও ময়দানে আসতে শুরু করেছেন। শুক্রবার ফজরের নামাজের পর আমবয়ানের মধ্যদিয়ে শুরু হবে ইজতেমার প্রথমপর্ব। প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাত হবে রবিবার।

চার দিনের বিরতি দিয়ে আগামী ২০, ২১ ও ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। বিদেশি মুসল্লিদের জন্য এবার ২০ শতাংশ আবাসনসহ অন্যান্য ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে। এছাড়াও বিদেশি মেহমানদের কামরায় গ্যাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা: এদিকে টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্ল্যাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে স্থান করা হয়েছে পুলিশের কন্ট্রোল রুম।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে প্রায় ৬ হাজার নিরাপত্তা কর্মী কাজ করবেন। ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশের এলাকার গুরুত্বপূর্ণস্থানে, তুরাগ নদীতে, মাঠের চতুরপাশে, ওয়াচটাওয়ারে, পোশাকে-সাদা পোশাকে পুলিশ, স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। বাইনোকুলার, মেটাল ডিটেক্টর, ওয়াচ টাওয়ার, সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা মনিটরিং করা হবে। সংবাদ কর্মীদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে মিডিয়া সেন্টার। এছাড়া পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, আনসার, আর্মড পুলিশ সদস্যরাও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন।

ওয়াচ টাওয়ার: ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তা মনিটরিং করার জন্য ইজতেমা ময়দান এলাকায় ১৪টি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে র‌্যাবের জন্য ৯টি এবং পুলিশের জন্য ৫টি ওয়াচ টাওয়ার তৈরি করা হয়েছে।

তোরণ নির্মাণ: বিশ্ব ইজতেমায় আগত দেশি-বিদেশি মুসল্লিদের স্বাগত জানিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন দশটি তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। টঙ্গী ব্রিজের দক্ষিণপাশে, কামারপাড়া ব্রিজের পশ্চিম পাশে, হোন্ডা ফ্যাক্টরির রোডের মাথায়, শহীদ আহসান উল্যাহ মাস্টার স্টেডিয়ামের সামনে টেশিস মাঠের উত্তর পাশসহ ইজতেমা মাঠের প্রবেশ পথগুলোর মাথায় এসব তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে।

ভাসমান সেতু: বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের পারাপারের জন্য সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে তুরাগ নদীর উপর এবার ৭টি ভাসমান সেতু স্থাপন করা হয়েছে।

পানির ব্যবস্থা: ইজতেমায় আগত দেশি-বিদেশি মুসল্লিদের খাওয়া, অজু, গোসল, পয়ঃনিষ্কাষণ ইত্যাদির জন্য ইজতেমা মাঠে স্থাপিত ১২টি নলকূপের মাধ্যমে প্রতিদিন ঘন্টায় ৩ কোটি ৫৫ লাখ গ্যালন সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও মশা নিধন: বিশ্ব ইজতেমায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও মশা নিধনের পদক্ষেপ নিয়েছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন। ইজতেমা কর্তৃপক্ষের চাহিদা অনুযায়ী ইতোমধ্যে ১০০ ড্রাম ব্লিচিং পাউডার সরবরাহ করা হয়েছে। এ ছাড়া ইজতেমা চলাকালীন ২৫টি গার্বেজ ট্রাকের মাধ্যমে বর্জ্য অপসারণ করা হবে। ২৪টি ফগার মেশিনে মাধ্যমে ইজতেমা মাঠ এলাকায় মশক নিধনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া ইজতেমা মাঠের চারপাশে ধুলাবালি নিয়ন্ত্রণে পানি ছিটানো হবে।

প্রসঙ্গত, তাবলিগ জামাতের উদ্যোগে টঙ্গীর তুরাগ তীরে প্রতি বছর এ ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। ১৬০ একর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত ইজতেমা মাঠে বিশ্বের প্রায় সব মুসলিম দেশ থেকেই তাবলিগ জামাতের অনুসারী ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা অংশ নেন। এখানে তারা তাবলিগ জামাতের শীর্ষ আলেমদের বয়ান শুনেন এবং ইসলামের দাওয়াতি কাজ বিশ্বব্যাপী পৌঁছে দেয়ার জন্য জামাতবদ্ধ হয়ে বেরিয়ে যান।

(ঢাকাটাইমস/১১জানুয়ারি/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :