ঢাকা কলেজ ছাত্রদল কমিটিতে ৬৮৭ জন, তবু বঞ্চনাবোধ

প্রকাশ | ১১ জানুয়ারি ২০১৭, ১৯:২৯ | আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৭, ১৯:৪৫

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকাটাইমস
ফাইল ছবি

ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে নেতার সংখ্যা বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ে বেশি। মঙ্গলবার রাতে ঘোষণা করা এই কমিটির বহর দেখে বিস্মিত হয়েছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারাও। কমিটির সদস্যদের নাম ও পদবী লিখে গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে শব্দ সংখ্যা ব্যবহার করতে হয়েছে তিন হাজার ৩৬৪টি।

প্রায় একবছর আগে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সাত সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় কমিটি। আর পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সহ-সভাপতি হয়েছেন ৯০জন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ১৩৬ জন। সহ সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ১২৪জন। সহ-সাংগঠনিক ১১১জন,সম্পাদক ২৭ জন, সহ-সম্পাদক ১১১জন  এবং সদস্য হয়েছেন ৮৪ জন।

ছাত্রদলের এত বড় কমিটি দেখেনি ঢাকা কলেজ। তবে ছাত্রদলের বিশাল কমিটির গঠনের খবর এটাই প্রথম নয়। কারণ সংগঠনটির বর্তমান কমিটির নেতার সংখ্যা ৭৩৬ জন।

তবু বঞ্চনাবোধ

এত বড় কমিটি করার পরও বঞ্চনাবোধ আছে সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে। অনেক যোগ্যদের মূল্যায়ন করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন। যদিও কেন্দ্রীয় ও শাখা ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, আন্দোলন সংগ্রামে যাদের যেমন অবদান ছিলো সেই অনুযায়ী মূল্যায়ন করা হয়েছে।

বিশাল সংখ্যার কমিটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে নানা সমালোচনা করছেন। এ নিয়ে পক্ষে বিপক্ষেও কথা বলছেন কেউ কেউ।

নতুন কমিটির একজন  যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এটা অপ্রত্যাশিত। এটা কমিটি নয়,মনে হয় মিছিল। সবাইকে খুশি করতে পছন্দের লোকজনকে পদ দেয়া হয়েছে। যোগ্যদের মূল্যায়ন করা হয়নি।’ তিনি আরো বলেন, ‘কোথাও কোনো কর্মসূচিতে ছিলেন না এমন অনেকে সহসভাপতি হয়েছেন আর মাঠে ছিলেন, জেল খেটেছেন এমন লোকজনকে সম্পাদক করা হয়েছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সহ-সম্পাদক পদ পেয়েছেন এমন একজন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘পুলিশের মার খেয়েছি, বাসায় ঘুমাতে পারিনি, মামলা খেয়েছি কিন্তু পদ পেয়েছি সহ-সম্পাদক। অথচ মাঠে না থেকে ভাইদের সঙ্গে সময় দিয়ে সহ-সভাপতি হয়েছেন। এই কমিটি না হলেও খুব ক্ষতি হতো না। এ হলো ভাই ব্রাদারের কমিটি।’

পুরো কমিটির তালিকা দিয়ে ফেসবুকে নিয়াজ মাখদুম নামে একজন লিখেছেন, ‘আমার মনে হয় ঢাকা কলেজে আর কোনো স্টুডেন্ট বাকি নাই। সবাই স্থান পেয়েছেন। এটাকে কি বলা যায়?’।

মন্তব্যের ঘরে মামুন আব্দুল্লাহ নামে একজন লিখেছেন, ‘এটা কমিটি, না টোটাল ছাত্রদের লিস্ট।’

তবে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি কাজী মাসুদ করিম কমিটির বিষয়ে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘জেল,জুলুম, মামলা-হামলায় জর্জরিত নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করতে গিয়ে এবং নতুন যারা আসছেন তাদের উৎসাহ দিতে গিয়ে কমিটি একটু বড় হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা যার যেমন অবদান ছিলো তাকে সেইভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে। কোনো পক্ষপাত করা হয়নি। কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেই এটা করা হয়েছে।’

অন্যদিকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘অনেক দিন ধরে বড় কমিটি হয় না সে কারণে এটাকে বড় মনে হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো সংগঠনে আরো অনেকে ছিলেন যারা কমিটিতে পদ পাওয়ার যোগ্য। কারণ ছাত্রদল অনেক বড় সংগঠন।’

অন্যদিকে বড় কমিটি হওয়ার কারণ হিসেবে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সজীব ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘প্রায় ছয় বছর পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলো। বিগত আন্দোলন সংগ্রামে অনেকে নেতাকর্মী মাঠে ছিলেন। হামলা, মামলা সহ্য করেছেন। এছাড়া ঢাকা কলেজে প্রতিনিয়ত ছাত্রদলের কর্মী সংখ্যা বাড়ছে। সে কারণে সবার পরিচয় দেয়াটা জরুরি ছিলো। তাই বড় কমিটি হওয়াটা অবান্তর নয়,এটা যৌক্তিক।’

সজীব বলেন, ‘কমিটি হলে নানা ধরণের আলাপ আলোচনা হয়। আমরা প্রত্যেকের শ্রম ও ত্যাগকে মূল্যায়ন করে, অনেক যাচাই বাছাই করে সর্বাত্মকভাবে ভালো কিছু করার চেষ্টা করিছি। আমরা কাউকে বঞ্ঝিত করিনি।’

প্রসঙ্গত, সবশেষ মামুন তালুকদার ও শফিকুল ইসলাম মিঠুর নেতৃত্বাধানী ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের কমিটির সদস্য সংখ্যা ১৯৭ জন।

(ঢাকাটাইমস/১১জানুয়ারি/বিইউ/ডব্লিউবি)