সাত মাসেও শেষ হলো না মিতু হত্যার তদন্ত!

চট্টগ্রাম ব্যুরো, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০১৭, ০৮:৪০ | প্রকাশিত : ১৩ জানুয়ারি ২০১৭, ০৮:৩৩

সাবেক এসপি বাবুল আকতারের স্ত্রী মাহমুদা আকতার মিতু হত্যার ঘটনায় করা অস্ত্র মামলার বিচার শুরু হয়েছে, কিন্তু হত্যাকাণ্ডের সাত মাস পার হলেও শেষ হয়নি মিতু হত্যা মামলার তদন্ত। মিতুর বাসায় যারা আসা-যাওয়া করত, বর্তমানে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে মাত্র। ইতিমধ্যে মিতু ও এসপি বাবুল আকতারের কয়েকজন স্বজনের জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হলেও উদঘাটন হয়নি মিতু হত্যার রহস্য।

বরং দিন যত যাচ্ছে, ততই তদন্তে রহস্যের সৃষ্টি করছে নানা ঘটনা। হত্যাকাণ্ডের পর সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আকতারকে ঘিরে নানা কথার ডালপালা মেললেও এর উত্তর মিলছে না পুলিশের কাছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার বক্তব্য একটাই- তদন্তের স্বার্থে কিছু বলছেন তারা।

মিতু হত্যাকা-ের পরপর পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেছিলেন, কোনো জঙ্গি গোষ্ঠী কিংবা বাবুল আকতারের প্রতি কোনো আসামি সংক্ষুব্ধ হয়ে এ ঘটনা ঘটাতে পারে। ঘটনার পর ডিএমপি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমন ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি মনিরুল ইসলাম বলেছিলেন, বিদেশি মদদপুষ্ট হয়ে মিতুকে হত্যা করা হয়েছে।

কিন্তু তদন্তের শুরু থেকে পাল্টে যেতে থাকে দৃশ্যপট। মিতু হত্যাকাণ্ডে জড়িত নয়জনের মধ্যে সাতজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। দুই আসামি রাশেদ ও নবী পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। এর আগে দুই আসামি ওয়াসিম ও আনোয়ার গত বছর ২৬ জুন আদালতে জবানবন্দি দেন।

জবানবন্দিতে তারা বলেন, মিতু হত্যাকাণ্ডে ওয়াসিম, আনোয়ার, মো. রাশেদ, নবী, মো. শাহজাহান, কামরুল ইসলাম সিকদার ওরফে সোর্স মুছা ও মো. কালু অংশ নেন। মুছার নির্দেশে মিতুকে হত্যা করা হয় বলে আদালতকে জানান তারা। কিন্তু মূল নির্দেশদাতা কে- সেই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি আজও।

এদিকে সোর্স মুছাকে গ্রেপ্তার নিয়েও রয়ে গেছে ধোঁয়াশা। মুছার স্ত্রীর দাবি, মিতু খুনের ২২ দিন পর বন্দর এলাকা থেকে মুছাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিন্তু পুলিশ তা অস্বীকার করছে। মিতু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. কামরুজ্জামান বলেন, মিতু হত্যায় জড়িত সোর্স মুছা ও কালুকে এখনো গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তাদের হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ। মুছাকে গ্রেপ্তার করতে না পারায় মিতু হত্যার রহস্য তিমিরেই রয়ে গেছে বলে জানান তিনি।

গত বছরের ২৪ জুন রাতে ঢাকায় শ্বশুরের বাসা থেকে মিতুর স্বামী বাবুল আকতারকে নিয়ে গিয়ে ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। মামলার বাদিকে আসামির মতো তুলে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করায় মিতু হত্যার কারণ নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। গণমাধ্যমে মিতু হত্যায় বাবুল আকতারের জড়িত থাকার ইঙ্গিত করে খবরও প্রকাশিত হয়।

গণমাধ্যমে এ খবরও আসে, স্ত্রী হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে বাবুল আকতারকে পদত্যাগে বাধ্য করেছেন পুলিশের শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তা। তবে পুলিশের দাবি, বাবুল আকতার স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন। পরে সেটি কর্তৃপক্ষ মঞ্জুর করে। কিছুদিন পর আবার খবরের শিরোনাম হন বাবুল আকতার। এবার বাবুল আকতারের দাবি, পদত্যাগপত্রে তার কাছ থেকে জোর করে সই নেওয়া হয়। এরপর চাকরি ফিরে পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদনও করেন তিনি।

এদিকে বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে খবর বেরোয়, পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে মিতুকে খুন করার নির্দেশ দেন বাবুল আকতার। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে প্রকাশ্যে দিবালোকে অবুঝ সন্তানের সামনে কার নির্দেশে বা কী কারণে মিতুকে নির্মমভাবে খুন করা হলো, তা এখনো রহস্য। সাত ধরে মাস তদন্তের পরও প্রকৃত রহস্য জনগণের সামনে পেশ করতে পারেনি পুলিশ।

গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর বাবুল আকতার অনেকটা নীরবে চট্টগ্রাম এসে তদন্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামানের সঙ্গে কথা বলে যান। এরপর ফের আলোচনায় আসে মিতু হত্যা মামলা। পরে ২২ ডিসেম্বর তার শ্বশুর মোশাররফ হোসেনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের পর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, হত্যাকারী যে-ই হোক, তার তথ্য উদঘাটনের জন্য মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে অনুরোধ করেছেন তিনি।

মোশাররফ হোসেন এ-ও বলেন, ‘বাবুল ও তার মেয়ের মধ্যে দা¤পত্য কলহ ছিল না। তদন্ত কর্মকর্তাকে বলেছি এ মামলার অন্যতম পলাতক দুই আসামি মুছা ও কালুকে গ্রেপ্তার করে তাদের কাছে জানতে চাওয়া হোক খুনের পেছনে কী উদ্দেশ্য ছিল তাদের কিংবা খুনের নির্দেশদাতা কে।’

এরপর নতুন বছরের ১ জানুয়ারি বাবুল আকতারের মা-বাবা, ৮ জানুয়ারি বাবুল আকতারের খালাতো ভাই মফিজ এবং সর্বশেষ ১০ জানুয়ারি বাবুল আকতারের আরেক খালাতো ভাই সফিউদ্দিনকে নিজ কার্যালয়ে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এডিসি কামরুজ্জামান। মিতু ও বাবুল আকতারের পরিবারের একের পর এক সদস্যকে তদন্ত কর্মকর্তার জিজ্ঞাসাবাদ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন, মিতু হত্যার কিনারা হবে তো! মিতু হত্যা মামলার তদন্ত শেষ না হলেও এই হত্যাকা-ের অস্ত্র মামলায় অভিযোগ গঠন হয়েছে। চট্টগ্রামের মহানগর দায়রা জজ মো. শাহে নূর মঙ্গলবার দুই আসামি এহতেশামুল হক ভোলা ও মনির হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে শুনানি শুরুর দিন র্ধায করেছেন ১৮ জানুয়ারি।

গত বছরের ৫ জুন সকালে সন্তানকে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার পথে চট্টগ্রামের ওআর নিজাম রোডে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় মিতুকে। এ ঘটনায় স্বামী বাবুল আকতার পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

মিতু হত্যার দুদিন আগে স্বামী বাবুল আকতার এসপি হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে ঢাকায় বদলি হন।

(ঢাকাটাইমস/১৩জানুয়ারি/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বন্দর নগরী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :