কম টাকায় নারী আর শিশুর উন্নত চিকিৎসা দিচ্ছে বারডেম

খাদিজা আক্তার, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০১৭, ১২:০১ | প্রকাশিত : ১৩ জানুয়ারি ২০১৭, ০৯:০৩

প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক মোহাম্মাদ ইব্রাহিম রাজধানীর শাহবাগে ১৯৫২ সালে বারডেম হাসপাতালের গোড়া পত্তন করেন। ডায়বেটিস আক্রান্ত রোগীদের নিরন্তর চিকিৎসা সেবা দেয়ার চেষ্টায় ৬০ বছর আগে ডায়বেটিক সমিতি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহীম। হাসপাতালটা নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিলো তার।বলেছিলেন- “আমি যেদিন মারা যাবো সেদিনও যেন বারডেম বন্ধ না থাকে।” সত্যি সত্যি তিনি যেদিন মারা গেলেন, সে খবর হাসপাতালে পৌঁছালো, কিন্তু হাসপাতাল বন্ধ হলো না। ডাক্তার নার্স সবাই কাঁদতে কাঁদতে রোগীদের সেবা দিয়ে গেলেন। ডা. মোহাম্মাদ ইব্রাহিমের সেবার আদর্শ নিয়ে আজও নিরলসভাবে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে বারডেম। চাহিদার প্রেক্ষিতেই ধীরে ধীরে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে বারডেম হাসপাতালের শাখা। তবু্ও ভিড় কমে না। সবখানেই রোগীদের আনাগোনা লেগেই থাকে। বারডেম-১ এ ৫৭৬টি ও বারডেম-২ (মহিলা ও শিশু হাসপাতাল) এর ১২৪টি শয্যা রয়েছে। এ দুটি হাসপাতালে মোট ২ হাজার ৭০০ জন ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছে।

রাজধানীর বেশ কয়টি শাখার মধ্যে ২০১২ সালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বারডেম মহিলা ও শিশু হাসপাতাল’। প্রতিদিনই এখানে শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে রোগীরা এসে হাজির হন।

হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, মেডিসিনের ডাক্তার দেখাতে এসেছেন রাজধানীর খিলগাঁও এলাকার বাসিন্দা নাজমা বেগম। তার বয়স প্রায় চল্লিশ। ডায়বেটিস হয়েছে তার। তিনি জানান, চিকিৎসা সেবার মান উন্নত এবং সুলভ মূল্যের হওয়ায় এখানে তিনি গত তিন মাস যাবত চিকিৎসা নিচ্ছেন।

তার মতন আরো অনেকেই আসেন এখানে নিয়মিত চিকিৎসা নিতে। বেশ কয়েক দিন ধরে বারডেম মহিলা ও শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন রাজধানীর নারিন্দা থেকে আসা নাজমা আক্তার। কিছুদিন আগে সিজারের মাধ্যমে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন নাজমা। তিনি বলেন- “এখানে চিকিৎসার মান ভালো। রাজধানীর আর কোথাও নারীদের জন্য আলাদা কোনো হাসপাতাল নেই। এখানে পুরুষের সাথে কোন ধাক্কাধাক্কি নেই। খুব সুন্দর পরিবেশ, তাই এখানে ভর্তি হয়েছি। নারী ও শিশু ভর্তি রোগীর সিট ভাড়া ১৫০০/- টাকা প্রতিদিন। একটু ভালো চিকিৎসার মান আর সুন্দর পরিবেশের জন্যই এখানে আসি।’

জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ফরহাদ জানান, তাদের এ হাসপাতালে প্রতিদিন এমারজেন্সিতে ৫০-৬০ জন রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হয়। তিনি আরো জানান তাদের এখানে প্রতিদিন প্রায় ২০-৩০ জন রোগীর ফ্রি চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়।

অপরদিকে এ হাসপাতালের তথ্যকর্মী কাশেম ভূইয়া জানান তাদের এখানে মহিলাদের শুধু ডায়বেটিসের চিকিৎসাই দেওয়া হয় না। গাইনি ও শিশুর জন্য রয়েছে চিকিৎসার সু ব্যবস্থা। এছাড়াও দাঁত ও চোখের চিকিৎসাও দেওয়া হয় রোগীদের।

তিনি আরো জানান এখানে প্রতিদিন প্রায় ১৫-২০ জন গাইনী ও শিশু রোগী ভর্তি হচ্ছে। আউটডোরে প্রায় ২০০ জন রোগী আসে প্রতিদিন। মিরপুর থেকে আসা ফয়জুন নেছা জানান, তিনি তার ছেলে দুবছর বয়সী ছেলে নাঈমের চোখের ছানি কাটাতে এখানে এসেছেন। অন্যান্য হাসপাতালে অনেক লোকের ভিড় এবং পুরুষ রোগীদের সাথে ওয়ার্ড ও কেবিন শেয়ার করতে হয় বিধায় তিনি এখানে এসেছেন।

তিনি আরও জানান যে এই হাসপাতালের ভিআইপি কেবিন ভাড়া ৪৫০০/- টাকা যা অন্যান্য হাসপাতালের তুলনায় অনেক কম।চিকিৎসা নিয়েও তিনি খুশি।

অন্যান্য হাসপাতালের তুলনায় কম টাকায় মান সম্মত চিকিৎসা সেবা দেয়ার প্রসঙ্গে বারডেম হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শহিদুল হক মল্লিক বলেন, “সরকার প্রতিবছর ২৫ কোটি টাকা অনুদান দেয়। তার থেকে ১৬ কোটি টাকা পায় আমাদের হাসপাতাল। এছাড়া বারডেমের সমাজকল্যাণ কমিটির আওতায় ৬৯ হাজার কার্ডধারী রোগী আছেন যারা সহজেই বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা সেবা পেয়ে থাকেন। অন্যান্য সরকারি হাসপাতালের তুলনায় ফি কিছুটা বেশি হলেও আমাদের চিকিৎসা সেবার মান অনেক বেশি উন্নত।”

সংবাদটি শেয়ার করুন

নারীমেলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা