সরকারের আট বছর: পরিবহন নৈরাজ্যে যাত্রীরা নাকাল

এম গোলাম মোস্তফা
| আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০১৭, ০৯:৪৯ | প্রকাশিত : ১৪ জানুয়ারি ২০১৭, ০৮:১৮

জাতীয় প্রেসক্লাবের বাস কাউন্টারগুলো থেকে যাত্রীদের যে টিকিট দেওয়া হয়, তাতে মুদ্রিত আছে ১০ টাকা। এখানে যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে ১৫ টাকা। তা হালাল করতে অবশ্য টিকিটের বুকে রাবার স্ট্যাম্পে সিল মেরে ১০ টাকা ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। ১৫ টাকাই নাকি তাদের সর্বনিম্ন ভাড়া। অথচ সরকার নির্ধারিত কম দূরত্বের ভাড়ার ক্ষেত্রে ছোট বাসের জন্য নেওয়ার কথা পাঁচ টাকা, আর বড় বাসে আদায় করা হবে সাত টাকা। তার মানে প্রেসক্লাবের কাউন্টার বাসগুলো দ্বিগুণ ভাড়া নিচ্ছে স্বল্পদূরত্বের যাত্রীদের কাছ থেকে। কেন দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে? এমন প্রশ্নে এটিসিএলের কাউন্টার ম্যানেজার বলেন, ‘আমাকে প্রশ্ন করে লাভ নেই। মালিক যেভাবে টিকিট দিয়েছে, সেভাবেই বিক্রি করছি।’

রাজধানীর গণপরিবহন পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা মালিকদের ইচ্ছেই যেন শেষ কথা। সরকারি কোনো নিয়ন্ত্রণ তেমন চোখে পড়ছে না। যেমন খুশি তেমন ভাড়া তো আদায় করা হচ্ছে। লোকাল বাসকে রাতারাতি সিটিং বাসে রূপ দেওয়া হচ্ছে। আবার সিটিংয়ের নামে ভাড়া বাড়িয়ে যেখানে-সেখানে যাত্রী উঠানো-নামানোর চিত্রও আছে। বিশেষ সিটিং নামের বাসেও অনেক ক্ষেত্রে যাত্রীদের রড ধরে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। বিপরীত চিত্রও আছে। যাত্রীর চাপ বেশি থাকলে বাসকর্মীরা লোকাল বাসকে লহমায় সিটিং হিসেবে রূপ দিয়ে বেশি ভাড়া আদায় করে থাকে। এতে করে বাস সংকট আরো বেড়ে যায়।

অন্যদিকে বছর দুয়েক আগে আসা নগরকর্তারা বলেছিলেন ঢাকায় এক রুটে এক প্রতিষ্ঠানের বাস চলবে। কিন্তু এখনো বিক্ষিপ্তভাবে চলাচল করছে বাস। বিশেষ করে বনানী, জিয়া কলোনি, কুড়িল উড়াল সেতু চালুর পর মিরপুর, গুলশান, বাড্ডার মধ্যে সড়ক যোগাযোগ যে অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে, তাতে বাগড়া দিচ্ছে একই রুটের অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের বাস। সিটিং নাম দেওয়া সব বাসেই লেখা ‘হাফ পাস নাই’। অর্থাৎ এসব বাস শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভাড়ার অর্ধেক নিতে রাজি নয়। এ নিয়েও বাকবিতণ্ডা লেগেই থাকছে।

গণপরিবহন ব্যবস্থাপনায়, ভাড়া নিয়ন্ত্রণে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বিভিন্ন সময় ইতিবাচক কথা বললেও বাস্তবে তা দেখা যাচ্ছে না। যাত্রীদের থাকতে হচ্ছে ভোগান্তিতে, গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সূত্রে জানা যায়, দুই বছর আগে সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি) দাম বাড়ায় ঢাকা ও আশপাশের চার জেলার অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১০ পয়সা বাড়ানো হয়। তাতে প্রতি কিলোমিটারে বড় বাসে ভাড়া নির্ধারিত হয় ১ টাকা ৭০ পয়সা, আর মিনিবাসে ১ টাকা ৬০ পয়সা। তবে বড় বাসে সবচেয়ে কম ভাড়া ধরা হয় ৭ টাকা, আর মিনিবাসে ৫ টাকা। কিন্তু সিটিং ও কাউন্টার সেবার নামে অনেক বাসই এই ভাড়া মানছে না। ফলে স্বল্পদূরত্বের যাত্রীদের পকেট থেকে অতিরিক্ত টাকা যাচ্ছে।

রাজধানী ঢাকার বেশিরভাগ বাসে নেই ভাড়ার তালিকা। মিরপুর-মতিঝিল রুটে চলাচলকারী রাষ্ট্রায়ত্ত বিআরটিসির বাসে উঠেও দেখা যায়, তাতেও ভাড়ার তালিকা নেই। চালক জানালেন, ডিপো থেকে তালিকা দেওয়া হয়নি। এই সরকারি বাসেও ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।

গত বৃহস্পতিবার রাজধানীতে বেশ কয়েকটি রুটে গিয়ে দেখা যায়, নির্ধারিত যত টাকা বা পয়সা ভাড়া বাড়ার কথা তার চেয়ে ২০ গুণ পর্যন্ত ভাড়া আদায় করেছে প্রতিটি গণপরিবহনে। স্বল্প দূরত্বের কোনো ভাড়া মানছেন না মালিকরা। মিনিবাসে প্রেসক্লাব থেকে ফার্মগেটের ভাড়া হওয়ার কথা ৮ টাকা। বসুমতি, নিউভিশন পরিবহনে নেওয়া হচ্ছে ১২ টাকা। গুলিস্তান থেকে আবদুল্লাহপুরগামী বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পরিবহনে (৩ নম্বর বাস) আগে শাহবাগ থেকে মহাখালীর ভাড়া নেওয়া হতো ৬ টাকা। নতুন ভাড়া কার্যকরের দিন থেকে নেওয়া হচ্ছে ১০ টাকা।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী ভাড়া নৈরাজ্য নিয়ে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বললেন, ‘আগে থেকেই মালিকরা নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি নিতেন। ভাড়া বৃদ্ধির পর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।’

রাজধানীতে গণপরিবহনে নৈরাজ্যের বিষয়ে বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুজিত হাওলাদার ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিআরটিএর মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে অভিযুক্তদের জরিমানা করা হচ্ছে। কিন্তু আগের দিন যে পরিবহনকে জরিমানা করা হয়েছে, পরের দিন দেখা যায়, ওই পরিবহনও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ করেনি।

বিআরটিএর চেয়ারম্যান মো. মশিয়ার রহমান ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘প্রতিটি রুটের দূরত্ব হিসাব করে কোন বাস কোন স্টপেজে থামবে এবং কোন দূরত্বে ভাড়া কত হবে, সেটা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। বাস মালিকরা ভাড়ার এই চার্ট মানতে বাধ্য।’

ভাড়া নিয়ে অনিয়ম ঠেকাতে বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়মিত তৎপর রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :