কুয়াকাটার মেগা বিচ কার্নিভ্যালে পর্যকদের ঢল
পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটায় দেশ-বিদেশের পর্যকদের ঢল নেমেছে। মেগা বিচ কার্নিভ্যাল উদযাপনের লক্ষ্যে পর্যটকরা দল বেঁধে ছুটে এসেছেন। নানা বয়সের মানুষের আগমনে পুরো সৈকত এখন উৎসবমুখর।
রবিবার রাতে ডলি সায়ন্তনী, ফকির আলমগীরসহ দেশের একাধিক শিল্পী সৈকতের উন্মুক্ত মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন বলে আয়োজক সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে, নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ, র্যাব, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও নৌ-পুলিশের টহল জোরদার করা হয়। এই প্রথমবারের মত বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড ও বাংলাদেশে পর্যটন করপেরেশনের যৌথ উদ্যোগে তিন দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে কুয়াকাটার দর্শনীয় স্থান নারিকেল কুঞ্জ, ইকোপার্ক, জাতীয় উদ্যান, শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার, সীমা বৌদ্ধ বিহার, সুন্দরবনের পূর্বাঞ্চল খ্যাত ফাতরার বনাঞ্চল, গঙ্গামতি, কাউয়ার চর, লেম্বুরচর, শুটকি পল্লীসহ সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে পূর্ব ও পশ্চিমে মনমুগ্ধকর সমুদ্রের বেলাভূমি, একাধিক নয়নাভিরাম লেক, সংরক্ষিত বনায়ন ও ইলিশ পার্কে তিল ধরনের ঠাঁই নেই।
তবে তিন দিনের মেগা বিচ কার্নিভ্যাল উদযাপনের প্রথম দিনে সমন্বয়হীনতার ও প্রচার-প্রচারণা না থাকার একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, তিন দিনের এ অনুষ্ঠানে রয়েছে- প্রতিদিন ওয়াটার বাইক, ক্রিকেট, ফুটবল, হাডুডু, দাঁড়িয়াবান্দা, ভলিবল, ওয়াটার বাইক, এটিভি রাইডস, বোট বোয়িং, বিচ লাইটিং, ক্যাম্প ফায়ার, সমুদ্র পথে কুয়াকাটার সঙ্গে ফাতড়া, সুন্দরবন, সোনার চর, হরিণ খোলা, কটকা ও করমজলের সী-ক্রুজিং। রয়েছে রাখাইনদের পিঠেপুলি ও তাদের বুনন হস্তশিল্পের প্রদর্শনী। থাকবে লাঠিখেলাসহ বর্ণাঢ্য ঘুড়ি উৎসব ও স্থানীয় শিল্পীদের উপস্থাপনাসহ দেশের লোক সংগীতের স্বনামধন্য শিল্পীর সঙ্গীত ও ব্যান্ড শিল্পীর সঙ্গীত পরিবেশনা।
এদিকে মেগা বিচ কার্নিভ্যালে প্রতিদিন সৈকতের জিরো পয়েন্টে উন্মুক্ত মঞ্চে কনে কনে শীত উপেক্ষা করে শনিবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শিল্পীদের একের পর এক গান শুনে দর্শনার্থী ও পর্যটকরা মুগ্ধ।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের আয়োজনে এ কার্নিভ্যাল নিয়ে কুয়াকাটার স্থানীয় মানুষসহ পর্যটক-দর্শনার্থীরা যেমনি ছিল উৎসবমুখর, তেমনি উৎসবের সমন্বয়হীনতা এবং আগাছোলা অবস্থা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা ছিল সর্বত্র।
স্থানীয় সকল শ্রেণির মানুষের প্রশ্ন ছিল কুয়াকাটার প্রকৃতি ও সৌন্দর্যে কোথাও সাম্পানের অস্তিত্ব নেই। কিন্তু ট্যুরিজম বোর্ডের এ কার্নিভ্যালকেন্দ্রিক সকল পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুনে সাম্পানের দৃশ্য ছিল। এছাড়া র্যালিতে ব্যবহারের টি-শার্ট এবং ক্যাপের বর্ণ এবং মান নিয়েও ছিল ব্যাপক সমালোচনা।
এখানে রাখাইনদের ঐতিহ্য সম্পুর্ণভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে।
এব্যাপারে আয়োজক সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা বলেন, এ বছরের ভুল-ত্রুটি সেরে আগামীতে সবার সমন্বয়ে কার্নিভ্যাল কুয়াকাটা বর্ণিল এবং ব্যাপক উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
কুয়াকাটার ইলিশ পার্কের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক রুমান ইমতিয়াজ তুষার জানান, তিন দিনে মেগা বিচ কার্নিভ্যাল অনুষ্ঠানকে ঘিরে ব্যাপক পর্যটক ও দর্শনার্থীদের আগমন বেড়েছে। সৈকতসহ কুয়াকাটার বিভিন্ন পয়েন্ট সাজানো হয়েছে বর্নিল সাজে।
কুয়াকাটা হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ জানান, এখানকার অর্ধশতাধিক হোটেল-মোটেলে রুম বুকিং রয়েছে। অগ্রিম রুম বুকিং এর জন্য এখনও ফোন করছে। এছাড়া কিছু কিছু হোটেলে অনলাইলেও রুম বুকিং হচ্ছে। তবে মেগা বিচ কার্নিভ্যাল উদযাপনে কিছুটা সমন্বয়হীনতা ছাড়াও প্রচার প্রচারণা ছিল খুবই কম।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের এএসপি মীর মসিউর রহমান জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে ট্যুরিস্ট পুলিশের টহল অব্যাহত থাকবে।
পটুয়াখালী পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান জানান, কার্নিভাল উৎসবে অংশ নেয়া পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি পুলিশ লাইন থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন, র্যাব, পুলিশ, আনসার ও ভিডিপি সদস্যরা রয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/১৬জানুয়ারি/প্রতিনিধি/এলএ)