বইঃ আমার কথা

​ওয়ান-ইলেভেনের দুঃসহ স্মৃতি

অনলাইন ডেস্ক
 | প্রকাশিত : ১৬ জানুয়ারি ২০১৭, ১৯:০৬

সৈয়দ আবুল হোসেন বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে আমার কথা। এই বইয়ে তিনি নিজের চিন্তা, কর্মকাণ্ড, মূল্যবোধ, নানা অভিজ্ঞতা ও পরিকল্পনা সম্পর্কে লিখেছেন। এটি পড়লে তাকে যারা পুরোপুরি চিনেন না তাদের সুবিধা হবে। বইটি ঢাকাটাইমস২৪ডটকম ধারাবাহিকভাবে ছাপছে। বইটির আজকের পর্বে থাকছে - '​​ওয়ান-ইলেভেনের দুঃসহ স্মৃতি’

ওয়ান-ইলেভেন বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি ভয়ঙ্কর কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। এমন কলঙ্কজনক শাসনের পুনরাগমন বন্ধ করার লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ জাতি যুগ যুগ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। মূলত এটি ছিল নতুন আদলে গড়া সামরিক শাসনের এক দুর্বিষহ অধ্যায়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আড়ালে সামরিক বাহিনীর কতিপয় সদস্য এসময় যে অত্যাচার-অবিচার এবং দুর্নীতি করেছে- তা পৃথিবীর আর কোথাও হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।

ওয়ান-ইলেভেন ছিল বাংলাদেশের জন্য একটি দুর্যোগপূর্ণ সময়। এ সময় বাংলাদেশকে একটি সংকটকাল অতিক্রম করতে হয়েছে। অপরাজনীতি দিয়ে রাজনীতি বন্ধের অপচেষ্টা করা হয়েছে। নতুন রাজনীতিক দল গঠনের প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে। টোপ দিয়ে রাজনীতিক ব্যক্তিদের দলে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এ থেকে আমিও বাদ যাইনি। ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবদের ডাকে সাড়া না দেওয়ায় আমাকে মামলায় জড়ানো হয়েছে। এ সময় গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা আমাকে নতুন দল গঠনে ভূমিকা পালনে বাধ্য করার চেষ্টা করে। আমি আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করেছি, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুগত নই- এ ধরনের একটি জাল চিঠিও বের করা হয়, আমাকে ফাঁদে ফেলানোর জন্য। তখন আমি ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবদের বলি, “বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আমাকে রাজনীতিতে এনেছেন, যতদিন বেঁচে থাকবো- তাঁর সাথে থাকব।” ফলে বাংলাদেশের অনেক রাজনীতিক নেতার সঙ্গে সন্দেহভাজন দুর্নীতির তালিকার দ্বিতীয় দফায় আমার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। জন্মকাল থেকে ওয়ান-ইলেভেন পর্যন্ত আমার বিরুদ্ধে নামে-বেনামে উত্থাপিত বিভিন্ন অভিযোগসহ বিএনপির ১৯৯১-৯৬ এবং ২০০১-২০০৭ মেয়াদের তদন্ত করা সব বিষয়ে অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগ আনা হয় বিএনপির সময় তৈরি শ্বেতপত্রের অন্তর্ভুক্ত মিথ্যা বিষয়গুলোর ওপরও। এসব অভিযোগ তদন্তে একাধিক টীম কাজ করে। দীর্ঘ তদন্তে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হই। সকল অভিযোগ থেকে মুক্তি পাই। বিষয়টি পত্র দিয়ে দুদক আমাকে জানিয়ে দেয়।

প্রত্যেক সামরিক সরকারের বৈশিষ্ট্য অভিন্ন। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল ও তার ব্যবহারকে সাধারণ জনগণের কাছে প্রিয় করে তোলার জন্য, দুর্নীতি প্রতিরোধের নামে কিছু ধনী ও প্রভাবশালী লোকের ওপর অত্যাচার করা পৃথিবীর প্রত্যেক সামরিক সরকারের অনিবার্য বৈশিষ্ট্য। অন্য একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে : অস্ত্রের মাধ্যমে জনগণের মনে ভীতি সঞ্চার করা। ওয়ান-ইলেভেনের তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুটোই সার্থকভাবে করে যাচ্ছিল। নানা শঙ্কার মাঝেও আমি ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। আমার মনে সবসময় একটা প্রবল আস্থা কাজ করে- আমি কোনো অন্যায় করি না, তাই আমার কোনো ভয় নেই। কিন্তু ওয়ান-ইলেভেন আমাকে শিক্ষা দিল যে, পাশবতার কাছে ন্যায়-অন্যায় আর ভালো-মন্দের কোনো বাছ-বিচার নেই।

তপন চৌধুরীকে সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা করার কয়েকদিন আগে আমার কাছে একটি ফোন এলো। ফোন ধরেই আমি হতবাক। এটি ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সামরিক বাহিনীর প্রচ- প্রভাবশালী এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ফোন। তিনি আমাকে দুটি প্রস্তাব দিলেন। কোনো প্রস্তাবের জন্যই আমি প্রস্তুত ছিলাম না। দুটো প্রস্তাবই আমাকে বিমর্ষ করে দেয়।

প্রথম প্রস্তাব ছিল- আমাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা করা। বললেন, “আপনাকে খুব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব প্রদান করা হবে।” দায়িত্ব কত দিনের তার কোনো সীমা নেই- আমাকে লোভাতুর করে তোলার জন্য এটিও বলা হয়েছে। আমি অনেকক্ষণ ধরে তাঁর কথা বিনয়ের সঙ্গে শুনে বললাম : আমি আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। আমার পক্ষে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হওয়া শোভনীয় হবে না। এটি আপনাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারকেও প্রশ্নের মুখে ফেলে দেবে। আমার উত্তরে তিনি খুশি হতে পারেননি। প্রথমে সরাসরি কিছু না বললেও, কণ্ঠের বিরক্তি এটাই প্রকাশ করল। এরপর তিনি নতুন প্রস্তাব দিলেন- এটি আরও মারাত্মক। বললেন : দুই নেত্রীকে রাজনীতি থেকে নির্বাসনে দেওয়ার জন্য একটি রাজনীতিক দল গঠন করা হবে। আপনাকে সে দলে একটা গুরুত্বপূর্ণ পদ প্রদান করা হবে। আপনি বৃহত্তর ফরিদপুরের অধিবাসী এবং এলাকার জনপ্রিয় জননেতা। শেখ হাসিনাকে মাইনাস করার পর নতুন দলকে সহায়তা করার জন্য আপনাকে আমাদের প্রয়োজন। আপনি একজন ভালো মানুষ, সৎ মানুষ। আমরা আপনার মতো ভালো মানুষ দিয়ে দলটি গঠন করতে চাই।

দুটো প্রস্তাবই নিঃসন্দেহে অনেকের কাছে লোভনীয় হতো। কিন্তু আমার কাছে তা ছিল বিব্রতকর, অনাকাক্সিক্ষত ও সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। কারণ আমি ছিলাম সতত দলের প্রতি এবং নেত্রীর প্রতি অনুগত। তাই আমি দুটো প্রস্তাবই সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করি। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় তিনি আমার ওপর প্রচ- বিরক্ত হন : তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাইকমান্ডের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের জন্য আপনাকে কিন্তু চরম খেসারত দিতে হবে।

এমন প্রতিক্রিয়ার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম। তাদের কার্যকলাপ ইতোমধ্যে পুরো দেশকে ত্রাসের রাজ্যে পরিণত করেছিল। এর কয়েকদিন পর দুর্নীতিবাজদের দ্বিতীয় তালিকায় আমার নাম অন্তর্ভুক্ত করে সাংবাদিকদের প্রদান করা হয়। দুদক যথারীতি আমার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে।

ওয়ান-ইলেভেনের দিনগুলো ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে মারাত্মক কষ্টের দুর্বিষহ স্মৃতি। সামরিক বাহিনী আমাকে গ্রেপ্তার করার জন্য হন্যে হয়ে খোঁজা শুরু করে। আমি তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছি। তাদের উদ্দেশ্য ছিল- আমাকে আটক করে নির্যাতন ও ব্ল্যাকমেইলিং করা এবং প্রস্তাবে রাজি করানো।

আমি অর্জিত সম্পদের সিংহভাগ দেশ, জাতি ও সাধারণ জনগণের কল্যাণে ব্যয় করেছি। জীবনে এক পয়সাও অবৈধভাবে উপার্জন করিনি। তারপরও আমাকে দুর্নীতিবাজ আখ্যায়িত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে। কষ্ট আর অপমানে ব্যথিত হয়েছি। কোরআন তেলওয়াত করেছি। আল্লাহর কাছে পানাহ চেয়েছি। প্রতিহিংসামূলক গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য আমি অস্থির হয়ে পড়ি। নিজেকে রক্ষার জন্য এখান থেকে ওখানে ছুটে বেড়িয়েছি। দিনের পর দিন একা একটি নির্জন কক্ষে কাটিয়েছি। শঙ্কা ও ভয়ে ক্ষুধা-তৃষ্ণার কথাও ভুলে গিয়েছিলাম। বাতাসে পর্দা নড়ার শব্দে শিউরে উঠেছি। চুল ও দাড়ি-মোচ কাটার জন্য সেলুনে পর্যন্ত যেতে পারিনি।

আমার মতো একজন নিষ্ঠাবান ব্যবসায়ীকেও প্রতিনিয়ত আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়েছে। কোনো আত্মীয়স্বজনের সাথে দেখা করতে পর্যন্ত যেতে পারতাম না। যদি কেউ দেখে ফেলে। দীর্ঘ দেড় বছরের অধিক কোনো আত্মীয়স্বজনকে দেখিনি। সারারাত ঘুমাতে পারতাম না, বসে বসে কাঁদতাম। যদি ধরা পড়ে যাই, তাহলে তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের প্রতিশোধ নিতে নৃশংস অত্যাচার করবে। জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করে বানোয়াট বিবৃতিতে স্বাক্ষর নেবে। শুধু আমি কেন, আমার বড়ভাই আবুল কাশেম, ভাগ্নে এবং অন্যান্য অনেক আত্মীয়স্বজনও ওয়ান-ইলেভেনের সময় নরক-যন্ত্রণার মতো কষ্টে দিনাতিপাত করেছে। আমার বড় ভাই গ্রেফতার এড়ানোর জন্য পালিয়ে বেড়িয়েছেন, অসুস্থ হয়েছেন। তাঁর দু’টো কিডনি নষ্ট হয়েছে। পরবর্তীতে তিনি অসুস্থ হয়ে ইন্তেকাল করেন (ইন্না.... রাজেউন)। আমাকে ধরার জন্য আমার বড় বোনের এক ছেলেকে ধরে নিয়ে এমন অত্যাচার করেছে যে- সে অসুস্থতা এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে। এমনকি আমার সহধর্মিণীর ভাই-বোনদের বাসায়ও তল্লাশী করেছে এবং তাদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে। আমার জীবনে এটি বড় দুঃসহ ঘটনা।

আমার সহধর্মিণীর সঙ্গে সামরিক বাহিনীর লোকজন অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে। আমার সহধর্মিণী- উপমহাদেশের খ্যাতিমান আউলিয়া ও পীর হযরত খাজা ইউনুছ আলী এনায়েতপুরী (রহ:)-এর সেজো ছেলে, পীরজাদা এবং বর্তমানে এনায়েতপুর দরবার শরিফের গদিনশিন হুজুরপাক হযরত খাজা কামাল উদ্দিন নুহ মিয়ার সেজো কন্যা। তাঁর মতো একজন পুণ্যবতী বিদূষী মহিলাকেও সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার মানসিকভাবে অস্থির করে রেখেছিল। সামরিক বাহিনীর লোকজন দীর্ঘ আট ঘণ্টা ধরে আমার বাড়ি তল্লাশি করেছে, তল্লাশির নামে বাড়ির জিনিসপত্র ভাংচুর করেছে। সেসময় আমার সহধর্মিণী ছাড়া বাড়িতে আর কেউ ছিল না। সে ছিল এক ভয়াবহ অবস্থা। তদন্তের নামে, দুর্নীতিবাজ আখ্যায়িত করে রাজনীতিক স্বার্থ হাসিল, ব্ল্যাকমেইলিং ও অর্থ আদায়ের যে নৃশংস প্রহসন তত্ত্বাবধায়ক সরকার করে চলেছিল- তেমন নজির পৃথিবীর ইতিহাসে আর আছে কিনা আমার জানা নেই। এই অত্যাচারের কুশীলবরা একদিন এর পরিণাম ভোগ করবে, আল্লাহ তাদের বিচার করবেন।

আমার দুই কন্যা রুবাইয়াত যাকে আমরা আনজুম বলে ডাকি এবং ইফ্ফ্াত যাকে আমরা দুলি বলে ডাকি- তাদেরও এসময় অনেক বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়েছে। বিড়ম্বনা এড়াতে তাদেরকেও দেশ ছেড়ে যেতে হয়েছে। তারা কত মর্মাহত, কত বিমর্ষ ও কত মানসিক বিপর্যয়ে ছিল, সেটি আমার বড়-মেয়ে রুবাইয়তের একটি পত্র হতে কিছুটা অনুধাবন করা যাবে। পত্রটি আমার মেয়ে লন্ডনের সোয়ার্সে মাস্টার্স করতে যাওয়ার সময় বিমান বন্দরে, বিমান ছাড়ার কিছুক্ষণ আগে আমাকে উদ্দেশ্য করে লিখেছিলো।

চিঠিটি এখানে দেওয়া হলো :

শুক্রাবাদের একটি বাসায় আমি আত্মগোপনে ছিলাম। বাড়িতে বেশ কয়েকটা কক্ষ ছিল। বাড়িটার বিভিন্ন কক্ষ হতে ফোন করলে ভিন্ন টাওয়ারকে নির্দেশ করত। তাই আমি কখনও এ রুমে, আবার কখনও অন্যরুম থেকে ফোন করতাম। এজন্য সামরিক বাহিনীর প্রতিশোধপরায়ণ লোকজন আমার অবস্থান ঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারেনি। একদিন আমি আমার সহধর্মিণীকে শুক্রাবাদের বাসা থেকে রিং করি। টাওয়ার বিভ্রান্তির কারণে তারা আমাকে অন্য জায়গায় খুঁজতে যায়। আর একদিন আমাকে দেখেও সামরিক বাহিনীর লোকজন চিনতে পারেনি। দীর্ঘদিন চুল-দাড়ি কাটতে না পারায়- আমি সম্পূর্ণ অন্য একজন হয়ে গিয়েছিলাম।

একদিন দিনের বেলায় চোখ বন্ধ করে গোপন অবস্থান থেকে নিজের ভবিষ্যৎ, দেশের পরিস্থিতি, জাতির ভালো-মন্দ প্রভৃতি নিয়ে চিন্তা করছিলাম। আমার মনে এমনটি বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছিল যে, আর কোনোদিন হয়তো দেখা হবে না আমার সহধর্মিণী, কন্যাদ্বয় এবং আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে। হয়তো এভাবে আমাকে বাকি জীবন কাটাতে হবে। দিন দিন মনের সঙ্গে সঙ্গে শরীরটাও অবশ হয়ে পড়ছিল। চোখ খুলতে ইচ্ছা করছিল না। মনে মনে ভাবছি এভাবে যেন অন্ধ হয়ে যাই, প্রলয় হয়ে সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাক।

হঠাৎ আমার বন্ধ-চোখের অন্ধকার আলোর জ্যোতিতে ভরে ওঠে। আমার গোপন কক্ষের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আব্বাহুজুর- এনায়েতপুর পাক দরবার শরিফের গদিনশিন হুজুরপাক হযরত খাজা কামাল উদ্দিন নুহ মিয়া। তাঁর পাক শরীরে মিশরের তৈরি একটি পোশাক। পোশাকটি আমিই তাঁকে উপহার দিয়েছিলাম। এমন দৃশ্য আমাকে অভিভূত করে দেয়। আমি কি তাহলে ঘুমাচ্ছি? আসলে আমি ঘুমাচ্ছিলাম না, জেগেই ছিলাম। চোখ খুলি, দেখি সামনে কেউ নেই। ঘাড় নেড়ে এবং নিজের শরীরে চিমটি কেটে বুঝতে পারি, আসলে আমি জেগে আছি।

আবার চোখ বন্ধ করি। আবার আগের সেই দৃশ্য। আব্বাহুজুরপাক পবিত্র কদমমোবারক বিস্তার করে আমার কক্ষে হেঁটে বেড়াচ্ছেন। আমি উঠে বসি। ফোনে আমার সহধর্মিণীকে বিষয়টা জানাই। আমার সহধর্মিণী সঙ্গে সঙ্গে আব্বাহুজুরপাকের কাছে বিষয়টা জ্ঞাপন করে। আব্বাহুজুরপাক বললেন : আবুল হোসেনকে বল, তার দুঃখের দিন শেষ হয়েছে। তার কিছু হবে না। এমন সৎ মানুষের বিপদ আসবে, আসতে পারে কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছু হয় না। আমাদের নবিজি (স.)-এর ওপর কী কম বিপদ গিয়েছে! আমার সহধর্মিণী আব্বাহুজুরপাকের এ কথা আমাকে জানান। তখন আমার কোরআনের একটি আয়াত মনে পড়ে যায়। কোরআন-এর আয়াতটি হলো- ‘‘অ ক্বুল জ্বা-আলহাক্কক্কু অ যাহাক্কাল বা-ত্বিল; ইন্নাল বা ত্বিলা কা-না যাহ্ক্কা’’- অর্থ ‘‘যখন মিথ্যা সত্যের মুখোমুখি হয়, মিথ্যা বিনষ্ট হয় এবং সব মিথ্যা দূর হয়ে যায়।’’ কোরআনের এই আয়াতটির ইংরেজি অনুবাদ হলো- When falsehood is confronted with truth, flasehood is bound to perish and all falsehood will wither away. সে আয়াতটি এখনও আমি স্মরণ করি এবং উৎসাহ, গর্ব আর পবিত্রতায় উদ্বেল হয়ে ওঠি।

শেষ পর্যন্ত আমার কিছু হয়নি, কারণ আমি কখনও বেআইনি কিছু করিনি। তাই শত চেষ্টা করেও তারা আমার সামান্য ত্রুটিও খুঁজে পায়নি। সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার কয়েকবার আমার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করেছে। অনুসন্ধান করে আমার বিরুদ্ধে মামলা করলেও শেষ পর্যন্ত তদন্তে আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির সামান্যতম সূত্রও খুঁজে পায়নি। ফলে আমার অনুকূলে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে বাধ্য হয়েছে। আব্বাহুজুরপাকের ভবিষ্যদ্বাণী সত্য প্রমাণিত হয়েছে। আমি সৎ ছিলাম। তাই সাময়িক অসুবিধায় পড়লেও অবশেষে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছি।

যে স্মৃতি কষ্ট দেয় তা ভুলে যেতে হয়, নইলে কষ্ট আরও বেড়ে যায়। আমি ওয়ান-ইলেভেনের দুঃসহ স্মৃতি ভুলে গিয়েছি। যদিও কষ্টের স্মৃতি সহজে ভোলা যায় না, তবু আমি ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করি। আমি দেখেছি আমার নিজের কান্নাভেজা চোখ, দেখেছি আমার আত্মীয় ও সুহৃদগণের অনেক জোড়া চোখের পানি। আমার জন্য তাদের দয়া চোখের পানি হয়ে পদ্মার মতো অপরিসীম স্রোতে গড়িয়ে পড়েছিল। আমি তাদের সে সহানুভূতি কখনও ভুলব না। আমি ভুলে গিয়েছি, তাদের- যারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছিলেন। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি- আল্লাহর উপর ভরসা রাখলে বিপদ কখনও স্থায়ী হয় না। আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে কাউকে জান্নাত থেকে জাহান্নামে নিতে পারেন, আবার জাহান্নাম থেকে নিয়ে যেতে পারেন জান্নাতে- এজন্য বেশি সময় লাগে না। আমি আল্লাহ্্র ওপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখি।

আগামীকাল কাল থাকছে - “সত্য ও ন্যায়ের দাঁড়িপাল্লায় আমি নির্দোষ আরও পড়ুন - আমি, পদ্মা সেতু ও বিশ্বব্যাংক, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাঃ একটি পর্যালোচনা, সুস্থ মানুষ ও সুস্থ নেতা, একটি শিশুর স্বপ্ন, '​মন্ত্রিসভার রদবদল’ পর্যটন ও ভ্রমন, সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ, জাতিগত ঐক্য : অপরিমেয় শক্তির আধার, প্রেরণা ও উৎসাহঃ কর্মক্ষমতা বাড়ায়, ‘​​কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাছে প্রত্যাশা’ বৈশ্বিক সহায়তা, বাংলাদেশের সফলতা, ​প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের গুরুত্ব,সরকারি কাজের পর্যবেক্ষণ, ব্যবসায়ীদের বিশ্বসমাবেশ, ‘‘অসম্ভব’: একটি ভৌতিক শব্দ’ 'বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া', ‘ক্যারিয়ার গঠনে প্রতিযোগিতা’ ঝুঁকি বনাম সাফল্য, ভিশন-২০২১, ‘সৃজনশীলতা’ ‘বিনিয়োগ’, ‘বাংলার বসন্ত’, ‘সময়, শ্রম ও অধ্যবসায়’ ‘আমার আদর্শ আমার নায়ক’ , ‘ধৈর্য পরীক্ষা’, ‘খেলাধুলা ও বাংলাদেশ’ ‘অধ্যয়ন, লেখালেখি ও নেতৃত্ব’ ‘নারীর ক্ষমতায়ন ও বাংলাদেশ’, ‘সাফল্যের স্বর্ণদ্বার’ , ‘ঐক্যবদ্ধ শক্তি সাফল্যের মেরুদণ্ড’ ‘পদ্মা সেতু’, `বিজয়চিহ্ন 'V' প্রকাশে ভিন্নতা', ‘উন্নয়ন ও অগ্রাধিকার’ , ​‘ইতিবাচক ভাবনা সাফল্যের চাবিকাঠি’ , ‘ভবিষ্যতের সরকার কেমন হবে’ ‘মাতৃভাষার প্রতি মমতা’, ‘সুখ ও শান্তি : আমাদের করণীয়’ , ‘নেতৃত্বের শক্তি’, ‘আদর্শ জীবন গঠনে মূল্যবোধ’, ‘আমার প্রাত্যহিক জীবন’​, 'আমার অনুভব'

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :