ট্রাকের হেলপার থেকে সিদ্ধিরগঞ্জের ত্রাস

আমির হোসেন স্মিথ, নারায়ণগঞ্জের
| আপডেট : ১৬ জানুয়ারি ২০১৭, ১৯:৪২ | প্রকাশিত : ১৬ জানুয়ারি ২০১৭, ১৯:৪০

নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুনের মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন। তার নির্দেশেই র‌্যাবের বিপথগামী কিছু সদস্য এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়। আলোচিত এই খুনের ঘটনায় সোমবার নূর হোসেনসহ সাতজনের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছে আদালত। ২০১৪ সালের এপ্রিলের এই ঘটনার পরপর পালিয়ে ভারত চলে যান নূর হোসেন। তবে পরের বছর তাকে সেখান থেকে আটক করে দেশে আনা হয়। ট্রাকচালকের সহকারী হিসেবে ত্রাস হয়ে ওঠা নূর হোসেন এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। সেখানেই নির্ধারিত হবে নূর হোসেনের ভবিষ্যৎ।

যেভাবে উত্থান নূর হোসেনের

নূর হোসেন ১৯৮৫ সালে ট্রাকের হেলপার ছিলেন। বছরখানেক হেলপারি করার পর ট্রাক ড্রাইভার হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৭ সালে তার বাবা বদর উদ্দিন একটি পুরনো ট্রাক কিনলে ওই ট্রাকের চালক হন। ১৯৯২ সালে সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হন নূর হোসেনসহ ১৩ জন। শক্তিশালী প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান সহিদুল ইসলামকে পরাজিত করতে মাঠে নামেন বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াসউদ্দিন। দলবল নিয়ে পক্ষ নেন নূর হোসেনের। দুই-আড়াইশ ভোটের ব্যবধানে নূর হোসেন জয়ী হন।

তিন বছর পর ১৯৯৫ সালের এপ্রিলে আদমজীতে খালেদা জিয়ার জনসভায় আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দেন নূর হোসেন। প্রভাব বিস্তার করেন পুরো সিদ্ধিরগঞ্জে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি প্রার্থী হিসেবে পরবর্তী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হন নূর হোসেন। আওয়ামী লীগ থেকে শামীম ওসমান জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামকে প্রার্থী করেন। ওই নির্বাচনে জোর করে ব্যালটে সিল মেরে নজরুল ইসলাম বিজয়ী হন বলে অভিযোগ ওঠে। তখন ব্যালটে প্রকাশ্যে সিল মারার ছবি জাতীয় বেশ কয়েটি দৈনিকে ছাপা হয়। পরে নূর হোসেন আদালতে মামলা করেন। আদালতের রায়ে তিনি চেয়ারম্যান পদ ফিরে পান। সেই সময় থেকেই নূর হোসেনের প্রতিদ্বন্দ্বী নজরুল ইসলাম। সেই দ্বন্দ্ব থেকেই খুন হন ওয়ার্ড কমিশনার নজরুলসহ সাতজন।

নূর হোসেন আবারও চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে গড়ে তুলে নিজস্ব বাহিনী। চেয়ারম্যান নির্বাচকে কেন্দ্রে করেই মূলত নূর হোসেনের সঙ্গে নজরুলের বিরোধ শুরু হয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ১৯৯৬ সালের মার্চে শিমরাইল মোড়ে নূর হোসেনের বাহিনীর গুলিতে নিহত হন রিকশাচালক আলী হোসেন। ১৯৯৯ সালের ১ অক্টোবর থানা আওয়ামী লীগ অফিসে নজরুল ইসলামকে হত্যা করতে এসে যুবলীগ নেতা মতিনকে গুলি করে হত্যা করে নূর হোসেন বাহিনী। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে নূর হোসেন চাপে পড়েন। তাকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা চালায় তার একটি প্রতিপক্ষ গ্রুপ। পরে নূর হোসেন প্রভাশালী সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের হাতে ফুলে তোড়া তুলে দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ২০০১ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হলে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান শামীম ওসমান। সে সময় নূর হোসেনও দেশ ছাড়েন।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশে ফিরে আসেন নূর হোসেন। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের নেতাদের পেছনে মোটা অংকের টাকা খরচ করে ২০১৩ সালের ২৯ মে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির পদটি ভাগিয়ে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এরপর থেকে নারায়ণগঞ্জের একচ্ছত্র প্রভাবশালী রাজনীতিক শামীম ওসমানের ছত্রছায়ায় নূর হোসেন বেপরোয়া হয়ে উঠেন। এলাকায় জমি দখল, ফুটপাতে চাদাঁবাজি, ট্রাকস্ট্যান্ডে মাদকের হাট বসানো, যাত্রা পালার নামে অশ্লীল নৃত্য ও জুয়ার আসার বসিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।

বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ আইনে এক বছরের সাজা হয় নূর হোসেনের। এছাড়া তার বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস দমন ও অস্ত্র আইনে ২২টি মামলা রয়েছে।

নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের পর নূর হোসেন দেশে ছেড়ে পালিয়ে গেলে পুলিশ তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে অস্ত্র এবং তার ট্রাকস্ট্যান্ডে কয়েকটি দোকান থেকে বিপুল পরিমাণ মাদকদব্য উদ্ধার করে। গুঁড়িয়ে দেয় অবৈধ যাত্রাপালার মঞ্চ।

(ঢাকাটাইমস/১৬জানুয়ারি/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :