বইঃ আমার কথা
সত্য ও ন্যায়ের দাঁড়িপাল্লায় আমি নির্দোষ
সৈয়দ আবুল হোসেন বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ‘আমার কথা’। এই বইয়ে তিনি নিজের চিন্তা, কর্মকাণ্ড, মূল্যবোধ, নানা অভিজ্ঞতা ও পরিকল্পনা সম্পর্কে লিখেছেন। এটি পড়লে তাকে যারা পুরোপুরি চিনেন না তাদের সুবিধা হবে। বইটি ‘ঢাকাটাইমস২৪ডটকম’ ধারাবাহিকভাবে ছাপছে। বইটির আজকের পর্বে থাকছে - 'সত্য ও ন্যায়ের দাঁড়িপাল্লায় আমি নির্দোষ’
আমি যোগাযোগমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ার পর থেকে একটি স্বার্থান্বেষী মহল আমার বিরুদ্ধে তৎপর হয়ে ওঠে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল- আমার খুঁত ধরে সরকারের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করা। কয়েকটি পত্রিকা আমার বিরুদ্ধে অসত্য প্রতিবেদন প্রকাশ করতে শুরু করে। অতীতের অসত্য প্রতিবেদনগুলো নতুনভাবে প্রকাশ করে আমার সুনামে কলঙ্ক লেপনের চেষ্টা করে। একজন বিশিষ্ট সাংবাদিক আমাকে বলেছিলেন, পদ্মা সেতুর বিষয়ে কানাডার আদালতে যে শুনানি হয়েছে তাতে ১০০০ পৃষ্ঠার পুলিশ প্রতিবেদনে আমার বিরুদ্ধে পত্রিকায় প্রকাশিত বানোয়াট প্রতিবেদনগুলো ইংরেজি অনুবাদ করে এবং ইংরেজি পত্রিকার কাটিংসহ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অহেতুক আশঙ্কায় পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থায়ন স্থগিত করে। কোনো দুর্নীতি হয়নি, অথচ দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের আশঙ্কায় ঋণ সহায়তা বন্ধ করা বিশ্বব্যাংকের ইতিহাসে একটি অবিবেচনাপ্রসূত এবং অযৌক্তিক ঘটনা। বিশ্বব্যাংক স্বীকার করেছে- অসত্য অভিযোগ ও বাংলাদেশের কতিপয় পত্রিকার মিথ্যা সংবাদে প্রভাবিত হয়ে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা বিশ্বব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানের আদৌ উচিত হয়নি। আমার প্রতি অন্যায় ও অমানবিক আচরণের জন্য বিশ্বব্যাংক এখন লজ্জিত, অনুতপ্ত।
পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির আশঙ্কায় আমাকে জড়ানো যে পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলক বা বিশ্বব্যাংকের ঋণ না-দেওয়ার একটি উছিলা- তা আমার পক্ষ থেকে বারবার বলা হলেও, তখন মিডিয়ার কেউ আমার কথায় কর্ণপাত করেনি। কতিপয় পত্রিকা সত্যের দিকে ধাবিত না হয়ে, বিশ্বব্যাংকের অন্যায় সিদ্ধান্তে আমাকে জড়িয়ে কার্টুন প্রচার করে, কল্পকাহিনি লেখা শুরু করে। কোনো অন্যায়, কোনো অনিয়ম না-করা সত্ত্বেও আমার দিকে সন্দেহের তীর ছোঁড়া হয়। এটা যে কত দুঃসহ বিড়ম্বনা, কত সীমাহীন অপমানজনক ছিল- তা ভুক্তভোগীমাত্র অনুধাবন করতে পারবেন। এখন সব পরিষ্কার, আমি নির্দোষ। বিশ্বব্যাংক স্বীকার করেছেÑ অসত্য অভিযোগ ও বাংলাদেশের কতিপয় পত্রিকার মিথ্যা সংবাদে প্রভাবিত হয়ে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা বিশ্বব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানের আদৌ উচিত হয়নি। আমার প্রতি অন্যায় ও অমানবিক আচরণের জন্য বিশ্বব্যাংক এখন লজ্জিত, অনুতপ্ত। সাংবাদিকতা একটি দায়িত্বশীল পেশা। ভলটেয়ার-এর একটি বিখ্যাত উক্তি টেনে বলতে চাই- I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it. মানুষের কথা বলার অধিকার আছে, পত্রিকায় খবর প্রকাশের স্বাধীনতা আছে, সেটা সত্য হোক আর অসত্য হোক। কিন্তু অন্যায়, অসত্য ও ভিত্তিহীন খবর প্রচার না-করাই সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের শিষ্টাচার। অনৈতিক খবর বা ইয়োলো জার্নালিজম যেমন সংবাদপত্রের সুনাম ও সুখ্যাতি নষ্ট করে তেমনি উন্নয়ন কার্যক্রমকেও বাধাগ্রস্ত করে। দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা উন্নয়ন কার্যক্রমকে এগিয়ে নেয় এবং সার্বিক উন্নয়ন তরান্বিত করে। সংবাদপত্র একজন মানুষের ইমেজও নির্মাণ করতে পারে। দেশের উন্নয়নে ব্যক্তি তার ইমেজকে কাজে লাগাতে পারে। আবার এ সংবাদপত্র একজন নির্দোষ, নিরাপরাধ মানুষকে দোষী ও অপরাধী হিসাবে উপস্থাপন করতে পারে। আমি পত্রিকার এমন নেতিবাচক ও অসত্য খবরের শিকার হয়েছিলাম।
দেশের কতিপয় পত্রিকা পরিকল্পিতভাবে অসত্য রিপোর্ট প্রকাশ করে আমার সম্পর্কে জনমনে ভুল ধারণা সৃষ্টিতে সহায়তা করেছে। যোগাযোগমন্ত্রীর অফিস মেরামত ও গাড়ি ক্রয় নিয়ে অসত্য প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে যোগাযোগমন্ত্রী হিসাবে আমাকে বিতর্কিত করার হীন ষড়যন্ত্র শুরু হয়। মন্ত্রীর অফিস মেরামত ছিল একটি রুটিন ওয়ার্ক। গণপূর্ত বিভাগ আমাকে জানিয়েছিল, অফিস মেরামত বাবদ ব্যয় হয়েছিল আনুমানিক ৭ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। অথচ কতিপয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এই ব্যয় ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা। যোগাযোগমন্ত্রী হিসাবে গাড়ি ক্রয় নিয়েও পত্রিকায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ ছাপা হয়েছিল। যে গাড়ি নিয়ে পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল- তেমন কোনো গাড়ি আদৌ ক্রয় করা হয়নি।
অনৈতিক খবর বা ইয়োলো জার্নালিজম যেমন সংবাদপত্রের সুনাম ও সুখ্যাতি নষ্ট করে তেমনি উন্নয়ন কার্যক্রমকেও বাধাগ্রস্ত করে। দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা উন্নয়ন কার্যক্রমকে এগিয়ে নেয় এবং সার্বিক উন্নয়ন তরান্বিত করে।
আমার বাড়ি মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার ডাসার থানায়। ডাসারে আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও সহায়তায় গড়ে উঠেছে অনেক স্কুল, কলেজ এবং মাদ্রাসা। এসব প্রতিষ্ঠান আবাসিক মর্যাদা নিয়ে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আইন-শৃঙ্খলার সুষ্ঠু প্রয়োগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে- ডাসার থানা। ডাসারের এ উন্নয়ন সরেজমিন পরিদর্শন করতে দেশ-বিদেশের বহু গুণীজন ডাসার ভ্রমণ করেন। সরকারি কর্মকর্তারা স্কুল-কলেজ পরিদর্শনে আসেন। সম্প্রতি জাতীয়করণকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘শেখ হাসিনা একাডেমী অ্যান্ড উইমেন্স কলেজ’-এর পাশে আমার নিজস্ব জমিতে আমি একটা বাড়ি নির্মাণ করেছি। গ্রামে গেলে আমি সেখানে সাময়িক থাকি এবং বিশিষ্ট মেহমানরা ডাসার এলে এ বাড়িতে থাকতে পারেন। বাড়ি নির্মাণের ব্যয় আমি কর-পরিশোধিত অর্থ থেকে বহন করেছি। ডাসারে আমার পৈত্রিক সম্পত্তিতে একটি বাড়ি নির্মাণের সামর্থ্য আমার আছে- এটা নিশ্চয়ই দেশবাসী বিশ্বাস করবেন। অথচ এই বাড়ি নির্মাণ নিয়ে দেশের একটি প্রথম শ্রেণির দৈনিকের প্রথম পৃষ্ঠায় ব্যানার হ্যাডিং করা হয়, বাড়ির ছবি দিয়ে আমার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে নেতিবাচক পন্থায় নাতিদীর্ঘ রচনা লেখা হয়।
অসত্য তথ্য দিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে আমার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ‘সাকো’ ও আমাকে জড়িয়ে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে। মিথ্যা সংবাদ এমনভাবে পরিবেশন করা হয়েছে- যাতে পাঠকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়। কোনো টেন্ডারে চায়নার কোনো প্রতিষ্ঠান বিড করলেই আমার নাম, সাকোর নাম জড়িয়ে প্রতিবেদন করা হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতসহ বিভিন্ন খাতে সাকোর প্রতিটি টেন্ডার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ার আগে এমনভাবে প্রতিবেদন করা হয়েছে, যাতে প্রক্রিয়াটি ভ-ুল হয় এবং অন্য দরদাতার স্বার্থ রক্ষিত হয়। এতে প্রতীয়মান হয় যে, পত্রিকা প্রভাবিত হয়ে অন্যের জন্য কাজ করে এবং আমার প্রতিষ্ঠান ও আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
কোনো কোনো পত্রিকা লিখেছে, প্রথম জীবনে আমি নাকি সরকারি চাকরি হারিয়েছিলাম। তা আদৌ সত্য নয়। অবশ্য, ছাত্রজীবন শেষ করার পর আমি সরকারি চাকরিতে ঢুকেছিলাম। তবে তা কেবল কাজ শেখার জন্য। চাকরিতে স্থায়ী হওয়ার কোনো ইচ্ছা আমার কখনও ছিল না। ছোটবেলা হতে আমার আগ্রহ ছিল ব্যবসায়। তৎকালে সরকারি অফিস ছাড়া অন্য-কোথাও কাজ শেখার সুযোগ ছিল না। এখন যেমন নানা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নি প্রভৃতির মাধ্যমে কাজ শেখার সুযোগ আছে, তখন সেরকম ছিল না। তাই আমি কাজ শেখার জন্য কর্মপরিধি বিবেচনায় টিসিবি-তে যোগদান করি। অভিজ্ঞতা অর্জনের পর স্বেচ্ছায় চাকরি পরিত্যাগ করে ব্যবসায় আত্মনিয়োগ করি।
পাসপোর্টবিষয়ক জটিলতা নিয়েও আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে। আমার প্রটোকল অফিসারের অসর্তকতার জন্য পাসপোর্ট নিয়ে যে ঘটনা ঘটেছিল- তাতে আমি বিতর্ক এড়াতে পদত্যাগ করলেও, কেউ আমার প্রশংসা করেনি। পরবর্তীকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এ বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থা যে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দিয়েছিল তাতে বলা হয়েছে- আমার প্রটোকল অফিসারের অসাবধানতার কারণে এমনটি ঘটেছে। এখানে আমার বা আমার অফিসের অন্য কারও কোনো অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না।
১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনের সময় স্বাক্ষর জাল এবং সুপার ইম্পোজ করে একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী অপপ্রচার শুরু করে। আমার স্বাক্ষর জাল করা একটা চিঠি নিয়ে বাংলাবাজার পত্রিকায় প্রতিবেদন করা হয়। চিঠির বিবরণ বিএনপির আমলে প্রণীত শ্বেতপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। চিঠিতে বলা হয়, “আমি নাকি চায়নার একটি কোম্পানিকে লিখেছি- আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে বাংলাদেশের যেকোনো কাজ পাওয়া যাবে এবং আমার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে।” এ ধরনের প্রোপাগা-ার উদ্দেশ্য ছিল- আমাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা এবং জনগণের কাছে আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা। একটি স্বার্থান্বেষী চিহ্নিত মহল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আমার মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করেছে। কিন্তু আমার সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিমূলক আনুগত্য তাদের ষড়যন্ত্রকে শেষ পর্যন্ত সফল হতে দেয়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এখনও আমাকে সেসব ষড়যন্ত্রকারীদের চেয়ে অনেক ভালবাসেন, বিশ্বাস করেন।
উল্লেখ্য, বর্ণিত চিঠি নিয়ে তদন্ত হয় এবং তদন্তের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই মর্মে প্রমাণিত হয়। ওয়ান-ইলেভেনের সময় আবার আমার স্বাক্ষর ইম্পোজ করে আওয়ামী লীগ থেকে আমার পদত্যাগ প্রচার করা হয়। পদ্মা সেতুর মূল কাজের ঠিকাদার নিয়োগ নিয়েও সাকোর এক কর্মকর্তার স্বাক্ষর ইম্পোজ করে প্রোপাগান্ডা চালানো হয়েছিল। আমাকে বিভিন্ন অবৈধ কাজের সাথে সম্পৃক্ত করার অপচেষ্টা নেওয়া হয়। এ নিয়ে তদন্ত করেও বিশ্বব্যাংক কিছু পায়নি। এ ধরনের নেতিবাচক চিঠি প্রকাশের আগে পত্রিকা আমার বা সাকোর কোনো বক্তব্য নেয়নি। মনে হয়, চিঠিটি প্রকাশে তাদের উদ্দেশ্য বেশি ছিল। অথচ সেই মিথ্যা স্বাক্ষরের অভিযোগ আমাকে বইতে হয়েছে। এটা কোন ধরনের বিচার, এটা কোন ধরনের অভিযোগ? ন্যায়বিচারের স্বার্থে কতিপয় সংবাদপত্রের এ অসত্য খবর প্রকাশ কি বন্ধ হবে না। বন্ধ করা যায় না?
আমি যোগাযোগমন্ত্রী থাকাকালীন সড়ক দুর্ঘটনার সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে কতিপয় পত্রিকায় লেখা হয়। আমার মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পর এখনও প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনা হয়, আমার মন্ত্রিত্ব থাকার সময় থেকে বেশি হয় কিন্তু পত্রিকাগুলো এ নিয়ে এখন আর উচ্চবাচ্য করে না, তেমন লেখা হয় না, কোনো ফলোআপ প্রতিবেদন ছাপা হয় না। সড়ক দুর্ঘটনা বিশ্বের সর্বত্র ঘটে থাকে। এটি কারও কাম্য নয়। মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় দেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও বিশিষ্ট সাংবাদিক মিশুক মুনীর মারা যাওয়ার পর কতিপয় সুধীজন যেভাবে টিভির পর্দায় আমাকে জড়িয়ে কথা বলেছেন- তা আজও আমার মনে আছে। কয়েকজন আমার পদত্যাগ চেয়েছিলেন। শেষাবধি আমি পদত্যাগও করেছি। কিন্তু যে দুর্ঘটনার কারণে তারা আমার পদত্যাগ চেয়েছেন- সেজন্য আমাকে কি সরাসরি দায়ী করা যায়? তদন্তে দেখা গিয়েছে, দুই গাড়ির ড্রাইভারেরে অসর্তকতা ও অতিবৃষ্টির কারণে ভিজিবিলিটি না থাকায় দুর্ঘটনা ঘটেছিল। ওই সড়কে কোনো খানাখন্দক কিংবা গর্ত ছিল না। যোগাযোগমন্ত্রী হিসাবে আমাকে দায়ী করে পদত্যাগ চাওয়া হয়েছে। গুরুত্ব বাড়াতে শহিদ মিনারে ঈদের দিন শিশুদের গলায় ‘মন্ত্রীর পদত্যাগ চাই’- ব্যানার ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। একথা ঠিক যে, দেশের দুই বিশিষ্ট ব্যক্তির অকাল মৃত্যু আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। সেজন্য আমি মর্মাহত হয়েছি। যে ঈদের আগে মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে, পরের ঈদে এর চেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তা নিয়ে আমার বিরুদ্ধে যেমন হৈচৈ করা হয়েছিল, তেমনটি দেখা যায়নি। তাহলে কেন বা কী উদ্দেশ্যে আমি যোগাযোগমন্ত্রী থাকাকালীন এত বাড়াবাড়ি, এত লেখালেখি করা হয়েছে?
সুরুচি, সুনীতি ও সুচিন্তার যোগফল যেমন গণতন্ত্র, তেমনি এ গণতন্ত্রের পুরোপুরি প্রয়োগই সংবাদপত্র, সাংবাদিক ও দেশের উন্নয়নের নিয়ামক শক্তি। অসত্য ও ব্ল্যাকমেইলিং রিপোর্টের প্রভাব সমাজ, দেশ ও ব্যক্তির জন্য কতটুকু ক্ষতিকর- এর প্রতিক্রিয়া কতটুকু বিস্তৃত, তা ভেবে দেখার জন্য অনুরোধ করছি।২০০১ খ্রিস্টাব্দে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে একটি শ্বেতপত্র প্রণয়ন করে। শ্বেতপত্রে পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে, পেপার কাটিংসহ আমার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বিএনপির তৈরি শ্বেতপত্রে আমার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ পত্রিকার রিপোর্টের ভিত্তিতে করা হয়েছিল। বিএনপি সরকারের ৫ বছরে শ্বেতপত্রে অন্তর্ভুক্ত অভিযোগগুলো নিয়ে তদন্ত হয়। তদন্তে পত্রিকার সকল খবর মিথ্যা প্রমাণিত হয়। আমি অভিযোগ থেকে মুক্তি পাই। অথচ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আমি যোগাযোগমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর পূর্বের কতিপয় পত্রিকা আগেকার অসত্য খবরগুলো পুনরায় নতুনভাবে প্রকাশ করা শুরু করে। সর্বশেষ, ওয়ান- ইলিভেনের তদন্তে আবার আমার সততা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। জন্ম থেকে ওয়ান-ইলেভেন পর্যন্ত নামে-বেনামে, রাজনীতিক প্রতিহিংসাসহ নানা বিষয়ে উত্থাপিত অভিযোগ থেকে আমি মুক্তি পাই। আমার কার্যক্রমের স্বচ্ছতা প্রমাণিত হয়। এরপরও এ বিষয়গুলো রেফারেন্স হিসাবে লেখা কি যুক্তিযুক্ত? অথচ কতিপয় সংবাদপত্র এ সত্যের দিকে না গিয়ে ইনিয়ে-বিনিয়ে অসত্যকে বারবার তুলে আনছেন। এটা কোন ধরনের নৈতিকতা।
প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বদৌলতে পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন প্রবন্ধ, সংবাদ এবং আলোচনা শিক্ষা ও তথ্যের বাহন হিসাবে কাজ করছে। এসব লেখা ও আলোচনায় প্রায়ই সিনিয়র সাংবাদিকদের বক্তব্যে বর্তমান মিডিয়া জগতের উন্নয়নের কথা যেমন শুনি, তেমনি কতিপয় সাংবাদিক ও মিডিয়ার অপসংবাদের কথাও জানি। সিনিয়র সাংবাদিকদের বক্তব্যের মূল মর্মবাণী হলো- বর্তমানে সংবাদপত্রের বিকাশের পাশাপাশি সংবাদপত্রে এক ধরনের অপসংবাদ ও হলুদ সাংবাদিকতা দেশের সংবাদপত্র জগৎকে বিতর্কিত করছে। সংবাদপত্র জগতে এক ‘অপসংস্কৃতি’র জন্ম দিচ্ছে। কতিপয় সাংবাদিক ব্যাক্তিস্বার্থে তাড়িত হয়ে সাংবাদিকতার সত্য পেশাকে কলুষিত করে একে অন্যায় ও অবৈধ আয়ের উৎস হিসাবে গ্রহণ করছে, মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করছে। সুরুচি, সুনীতি ও সুচিন্তার যোগফল যেমন গণতন্ত্র, তেমনি এ গণতন্ত্রের পুরোপুরি প্রয়োগই সংবাদপত্র, সাংবাদিক ও দেশের উন্নয়নের নিয়ামক শক্তি। অসত্য ও ব্ল্যাকমেইলিং রিপোর্টের প্রভাব সমাজ, দেশ ও ব্যক্তির জন্য কতটুকু ক্ষতিকর- এর প্রতিক্রিয়া কতটুকু বিস্তৃত, তা ভেবে দেখার জন্য অনুরোধ করছি।
সৎভাবে, স্বচ্ছভাবে ব্যবসায় করা এবং নিজেকে সমাজে গৌরবের আসনে প্রতিষ্ঠা, সরকারি কাজে সততা ও স্বচ্ছতা প্রতিপালন, এলাকার শিক্ষা প্রসারে কাজ করা, এলাকার উন্নয়ন, ঐক্য ও পরমসহিষ্ণু রাজনীতি প্রবর্তন আমার নীতি। এগুলো আমার মুখের কথা নয়, বক্তৃতার উপাদানও নয়, এগুলো বাস্তবায়ন করে নীতির প্রায়োগিক বাস্তবতার প্রমাণ রেখেছি। আমি পুরো জীবন স্বচ্ছতার আলোয় পরিচালিত। অথচ রাজনীতির কুটিল চরিত্র, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত, ঈর্ষাপরায়ণ কতিপয় লোকের ষড়যন্ত্র, গুটিকয়েক পত্রিকার অসত্য প্রতিবেদন আমার চরিত্রকে কালিমায় লিপ্ত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছে। সাময়িকভাবে তারা সফল হয়েছিলেন। তবে সুবোধ ঘোষের ভাষায় বলতে হয়- “মিথ্যা শেষ পর্যন্ত কারও ক্ষতি করতে পারে না।” শেষ পর্যন্ত আমি সকল মিথ্যা অপবাদ হতে মুক্ত হতে পেরেছি। দেশে-বিদেশের অনেক তদন্ত সংস্থা আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ তদন্ত করেছে কিন্তু সবগুলো মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। চূড়ান্ত বিচারে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছি।
আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছিলাম, আমি নির্দোষ, পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে কাউকে কোনো সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা করিনি, বিন্দুমাত্র অন্যায় করিনি। আমি আরও বলেছিলাম, একদিন বিশ্বব্যাংক ও মিডিয়া আমার প্রতি এমন অবিচার ও নৃশংস আচরণের জন্য অনুতপ্ত হবে, বুঝতে পারবে তাদের ভুল এবং আমি বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ, অপসাংবাদিকতা ও অপপ্রচার থেকে মুক্ত হব। আজ আমার দাবি সত্য প্রমাণিত হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। বিশ্বব্যাংক এবং মিডিয়া তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে। বিশ্বব্যাংক এখন তাদের কাজের জন্য অনুতপ্ত।
আমি যোগাযোগমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দেশের অবকাঠামোর উন্নয়ন ও রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসনে অনেকগুলো নতুন ও মেগা প্রকল্প গ্রহণ করি। তন্মধ্যে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে, কর্ণফুলী নদীতে টানেল নির্মাণ, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-ময়মনসিংহ ৪-লেন সড়ক প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। আমি যে মহৎ ও সৎ চিন্তা নিয়ে, দেশের উন্নয়নে এসব প্রকল্প শুরু করি- তাতে মিডিয়া বা সুধীসমাজ থেকে কোনো উৎসাহ বা অন্য কোনো সহযোগিতা পাইনি। তাদের সহযোগিতা পেলে আজ পদ্মা সেতু চালু থাকত। গৃহীত প্রকল্পগুলো মানুষের উপকারে ব্যবহৃত হতো। এটা আনন্দের খবর- সকল বাধা-বিপত্তি উৎরিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাহসী ভূমিকায় আজ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে- শেষ পর্যন্ত এটা বাংলাদেশের মানুষের জন্য সুখবর।
আমি নির্দোষ, বিশ্বব্যাংক ও মিথ্যা অভিযোগকারী এবং প্রতিবেদন প্রকাশকারীগণ ষড়যন্ত্র করে বাংলাদেশের উন্নয়নকে পিছিয়ে দিতে চেয়েছিল। গত ১১ জানুয়ারি, ২০১৬ তারিখে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা মিথ্যা অভিযোগ ও হয়রানির জন্য বিশ্বব্যাংকের বিচার দাবি করেছেন। দুর্নীতির অভিযোগ এনে তা প্রমাণ করতে না পারায় বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগও করেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ভাষায় বলা যায়,
“বিশ্বব্যাংক তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করার পর এখন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে তারা শঙ্কিত। এখন বিশ্বব্যাংক অনেক বেশি অর্থ বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। তারা বুঝতে পেরেছে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করায় বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ভালো করার চেষ্টা করছে।”১৩৫ বিশ্বব্যাংকের মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান মন্ত্রিসভায় স্বরচিত যে ছড়া পাঠ করেছেনÑ তাতেও আমার সততা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় ছড়াটি নিচে দেওয়া হলো :
বিশ্বব্যাংকের অর্থ বন্ধ মিথ্যা অভিযোগে,
নিজের টাকায় পদ্মা সেতু
শক্তি যোগায় ত্যাগে।
পিতার দেয়া স্বাধীনতা রক্তে ভেজা মাটি
অবহেলার দিন হল শেষ
এই না শেখের বেটি।
আগামীকাল কাল থাকছে - “সাংবাদিকতায় ‘ভুল স্বীকার’ কালচার : ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদকদের প্রতি আমার খোলা চিঠি” আরও পড়ুন - আমি, পদ্মা সেতু ও বিশ্বব্যাংক, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাঃ একটি পর্যালোচনা, সুস্থ মানুষ ও সুস্থ নেতা, একটি শিশুর স্বপ্ন, 'মন্ত্রিসভার রদবদল’ পর্যটন ও ভ্রমন, সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ, জাতিগত ঐক্য : অপরিমেয় শক্তির আধার, প্রেরণা ও উৎসাহঃ কর্মক্ষমতা বাড়ায়, ‘কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাছে প্রত্যাশা’ বৈশ্বিক সহায়তা, বাংলাদেশের সফলতা, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের গুরুত্ব, সরকারি কাজের পর্যবেক্ষণ, ব্যবসায়ীদের বিশ্বসমাবেশ, ‘‘অসম্ভব’: একটি ভৌতিক শব্দ’ 'বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া', ‘ক্যারিয়ার গঠনে প্রতিযোগিতা’ ঝুঁকি বনাম সাফল্য, ভিশন-২০২১, ‘সৃজনশীলতা’ ‘বিনিয়োগ’, ‘বাংলার বসন্ত’, ‘সময়, শ্রম ও অধ্যবসায়’ ‘আমার আদর্শ আমার নায়ক’ , ‘ধৈর্য পরীক্ষা’, ‘খেলাধুলা ও বাংলাদেশ’ ‘অধ্যয়ন, লেখালেখি ও নেতৃত্ব’ ‘নারীর ক্ষমতায়ন ও বাংলাদেশ’, ‘সাফল্যের স্বর্ণদ্বার’ , ‘ঐক্যবদ্ধ শক্তি সাফল্যের মেরুদণ্ড’ ‘পদ্মা সেতু’, `বিজয়চিহ্ন 'V' প্রকাশে ভিন্নতা', ‘উন্নয়ন ও অগ্রাধিকার’ , ‘ইতিবাচক ভাবনা সাফল্যের চাবিকাঠি’ , ‘ভবিষ্যতের সরকার কেমন হবে’ ‘মাতৃভাষার প্রতি মমতা’, ‘সুখ ও শান্তি : আমাদের করণীয়’ , ‘নেতৃত্বের শক্তি’, ‘আদর্শ জীবন গঠনে মূল্যবোধ’, ‘আমার প্রাত্যহিক জীবন’, 'আমার অনুভব'।মন্তব্য করুন