এক দিকে উচ্ছেদ, আরেক দিকে হকারের বেচাকেনা

আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৮ জানুয়ারি ২০১৭, ২১:২৫

হকারদের মিছিল-প্রতিবাদ ও কোনো রকম প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই আজ বুধবার চতুর্থ দিনের মতো গুলিস্তান এলাকায় ফুটপাত ও রাস্তা থেকে হকার উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। তবে একদিকে উচ্ছেদ, আরেক দিকে বিচ্ছিন্নভাবে হকার বসার চিত্রও দেখা গেছে এদিন।

আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে গুলিস্তান এলাকায় শুরু হয় অভিযান। এ সময় হকারদের বসানো চৌকি, পলিথিনের ছাউনি উচ্ছেদ করা হয়। সেখানে যেসব মালামাল পাওয়া গেছে, তা তুলে নেয়া হয় ডিএসসিসির গাড়িতে।

ডিএসসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুস সোয়েব ও মামুনুর রশীদ সরদারের নেতৃত্বে উচ্ছেদ অভিযান চলে বিকেল পর্যন্ত। সেখানে ছিলেন ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকতা মো. কামরুল ইসলামও।

সরেজমিনে দেখা যায়, উচ্ছেদ শুরু হওয়ার প্রথম দিকে গুলিস্তান এলাকায় কোনো হকার দেখা না গেলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোথাও কোথাও হকাররা ঠিকই পণ্য নিয়ে বসেছেন ফুটপাত ও রাস্তায়।

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তার উপস্থিতিতে গুলিস্তান টিঅ্যান্ডটি অফিসের সামনের রাস্তায় হকারদের রেখে যাওয়া মালামাল বুলডোজার দিয়ে ভেঙে তা ময়লাবাহী ট্রাকে তুলে নেয়া হচ্ছিল। এই সময় গুলিস্তান গোলাপশাহ মাজার থেকে গুলিস্তান গোল চত্বরের সংযোগ সড়কে (পাতাল পথে যাওয়ার পথ) বেশ কিছু হকারকে দেখা যায় ফল বিক্রি করতে। উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনাকারী দল চলে যাওয়ার পরপর বেশ কিছু সংখ্যক হকার ফুটপাত ও রাস্তায় পসরা সাজিয়ে বসেন। সন্ধ্যার আগে আগে জমজমাট হয়ে ওঠে ফুটপাত ও সড়কের একটা অংশ।

মেয়রের ঘোষণা অনুযায়ী সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে হকারদের বসার কথা থাকলেও সেই নির্দেশ মানেনি কেউ। ফল বিক্রেতা বাদশা কয়েকটি টুকরিতে ফল নিয়ে বসেছেন রাস্তায়। এ সময় রাস্তায় বসেছেন, ভয় করে না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রায় তিন বছর ধরে গুলিস্তানের ফুটপাতে ফল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছি। সন্ধ্যার দিকে কেউ ফল কিনতে চায় না। তখন সবাই শীতের কাপড় কেনেন। তাই আগেভাগে বসতে হয়েছে।’

খোকন নামের আরেক ফল বিক্রেতাও এখানে প্রায় তিন বছর ধরে ব্যবসা করছেন। তিনি বলেন, ‘পেটের দায়ে দোকান বসাতে হয়। আমাদের তুলে দেওয়ার আগে আমাদের পরিবারের সদস্যদের কথা সরকারের চিন্তা করা উচিত। সারা দিনে কত টাকাই বা বিক্রি হয়। যদি সন্ধ্যায় বসতে হয় তাহলে কত টাকা বেচব আর কতই বা লাভ করব।’

তবে নির্ধারিত সময়ের আগে গুলিস্তানের ফুটপাতে হকারদের বসার বিষয়টি স্বীকার করতে রাজি নন ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম। নির্ধারিত সময়ের আগে হকার বসার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, ওখানে তো আমরা উচ্ছেদ করে এসেছি। সেখানে এখন কেউ নেই।’

হকার উচ্ছেদ অভিযান শেষ করে পুলিশ যখন ফিরছিল, তখন একজন হকার বই বিক্রি করছিলেন হাঁক ছেড়ে ছেড়ে। এর আগে উচ্ছেদ অভিযান সমাপ্ত করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আজকে চতুর্থ দিনের মতো গুলিস্তানে হকারদের রেখে যাওয়া মালামাল অপসারণ করেছি। তবে কোনো প্রতিবন্ধকার সম্মুখীন হইনি।’

১২ জানুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন ঘোষণা দেন দিনের বেলা ফুটপাতে কোনো হকার বসতে দেওয়া হবে। তবে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার পর হকাররা বসতে পারবেন। এরপর ১৫ জানুয়ারি রবিবার মতিঝিল থেকে হকার উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে ডিএসসিসি। প্রথম দুই দিন হকারদের তীব্র বাধার মুখে পড়ে অভিযান। সোমবার হকার প্রতিনিধিদল মেয়রের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন কোনোভাবেই মানুষের চলাচল বাধাগ্রস্ত করে ফুটপাতে হকার বসতে দেয়া হবে না।

হকারদের সংগঠন হকার্স ইউনিয়নের নেতারা উচ্ছেদ অভিযানের প্রতিবাদ করে বলছেন, পুনর্বাসনের আগে হকার উচ্ছেদ করা যাবে না। তারা এর বিরুদ্ধে কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেছেন, ২৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে মিছিল করবেন এবং প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৮জানুয়ারি/এএ/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজধানী এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :