বগুড়ায় এশিয়ার ক্ষুদ্রতম দুই প্রাচীন মসজিদ

প্রতীক ওমর, বগুড়া
| আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০১৭, ০৮:৪৫ | প্রকাশিত : ১৯ জানুয়ারি ২০১৭, ০৮:২৫

বগুড়ায় যেসব পুরনো স্থাপত্য এবং ইতিহাস বহনকারী নিদর্শন এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহারের অতিপ্রাচীন ও ক্ষুদ্র দুটি মসজিদ। স্থানীয়ভাবে প্রচলিত আছে, পৌর এলাকার তারাপুর ও মালশন গ্রামের এ দুটি স্থাপনা এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে ছোট মসজিদ।

সরেজমিনে দেখা যায়, মসজিদে সামান্য উঁচু একটি গম্বুজ রয়েছে। গম্বুজের ওপর আছে একটি মিনার। মিনারটি অনেক আগে ভেঙে পড়েছে। দেড় ফুট পুরুত্বের দেয়ালে ব্যবহৃত ইটগুলো আকারে খুব ছোট।

এই মসজিদের দরজায় দুটি সুন্দর খিলান রয়েছে। দরজার খিলান, ভেতরের মিম্বর ও মেহরাব বলে দেয় যে স্থাপনাটি একটি মসজিদ। চুন-সুরকি দিয়ে তৈরি স্থাপনাটি এতটাই পুরনো যে, প্রথমে দেখে এটিকে মসজিদ হিসেবে মনে হবে না।

ধারণা করা হয়, ১৭৭০ থেকে ১৭৯০ সালের কোনো একসময় মসজিদ দুটি নির্মিত হয়। জমিদারি প্রথার সময় আদমদীঘি উপজেলার এ অঞ্চলটি বিভিন্ন জমিদারের শাসনাধীন ছিল। তৎকালীন সময়ে নাটোরের রানী ভবানীর পরিচালিত ভারত উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ জমিদারি বিস্তৃত ছিল প্রায় ১২ হাজার ৯৯৯ বর্গমাইল, যার মধ্যে এই আদমদীঘি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা অন্তর্ভুক্ত ছিল। তার বাবার বাড়ি ছিল আদমদীঘি উপজেলার ছাতিয়ান গ্রামে।

কথিত আছে, হিন্দু বসতিপূর্ণ ওই এলাকায় সেই সময় তারাপুর গ্রামে শুধু একজন মুসলিম নারী বসবাস করতেন। তিনি ধর্মকর্ম পরিচালনার জন্য একটি মসজিদ নির্মাণের জন্য স্থানীয় সমাজপ্রধানদের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু হিন্দু সমাজপতি পরিচালিত সমাজব্যবস্থায় তার এ দাবি বারবার উপেক্ষিত হয়। পরে তিনি রাণী ভবানীর কাছে তার আবেদনের বিষয়টি তোলেন। রাণী ভবানী তখন তার বাবার বাড়ি ছাতিয়ান গ্রামে বেড়াতে এসেছিলেন। তিনি সম্মতি দিলেও তখনকার স্থানীয় হিন্দু সমাজপতিরা তার কাছে এই কাজ বন্ধের আবেদন করেন। এ নিয়ে অনেক যুক্তিতর্কের পর ভবিষ্যতে যাতে মুসলমানের সংখ্যা বৃদ্ধি না পায়, সেই জন্য শুধু একজন মুসল্লি নামাজ পড়তে পারেন সেই উপযোগী একটি মসজিদ নির্মাণ করে দেন রাণী ভবানী।

ক্ষুদ্র এই মসজিদের প্রস্ত ৯ ফুট, উচ্চতা মিনারসহ ১২ ফুট। মিনারটির ঘের ২৭ ফুট। মসজিদটির মিহরাব এতই ক্ষুদ্র, যা ভেতরে না গেলে চোখে পড়ে না। মিহরাবের উচ্চতা সাড়ে তিন ফুট, প্রশস্ত দেড় ফুট যা একটি শিশুর নামাজ পড়ার জন্যও যথেষ্ট নয়। মসজিদটির দরজার উচ্চতা সাড়ে ছয় ফুট এবং প্রস্ত আড়াই ফুট। সর্বোচ্চ তিনজন মানুষ এ মসজিদে নামাজ পড়তে পারবেন।

তারাপুরের এই মসজিদের মতো আরেকটি মসজিদ রয়েছে পাশের মালশন গ্রামে। এর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা তারাপুর গ্রামের মসজিদের চেয়ে একটু বড়। তবে নির্মাণশৈলী একই ধরনের। এই মসজিদটি সম্পর্কেও পরিষ্কার কোনো ইতিহাস কেউ বলতে পারেন না। এখানে একসঙ্গে পাঁচজনের নামাজ আদায় করার মতো জায়গা রয়েছে।

পুরনো ও জীর্ণ মসজিদ দুটি অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। কালের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকলেও সেখানে আর মুয়াজ্জিনের আজান ধ্বনিত হয় না।

মসজিদ দুটি কত আগে তৈরি হয়েছিল, কে তৈরি করেছিলেন, কেন এত ছোট ছিল, এসব বিষয়ের সঠিক ইতিহাস আড়ালে থাকলেও ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে এ দুটি অনেক গুরুত্ব বহন করে। কিন্তু প্রতœতত্ত্ব বিভাগ এদিকে কোনো নজর দেয়নি কখনো। ভ্রমণপিপাসু ও ইতিহাস অনুসন্ধিৎসু শত শত দর্শনার্থী প্রতিদিন মসজিদ দুটি দেখতে ওই দুই গ্রামে যান। প্রতœতত্ত্ব বিভাগ মসজিদ দুটির তদারক না করলে যেকোনো সময় নষ্ট হতে পারে প্রাচীন এই স্থাপত্য।

(ঢাকাটাইমস/১৯জানুয়ারি/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :