ধার করে পুঁজিবাজারে হুজুগে বিনিয়োগ নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০১৭, ১৯:৪৮ | প্রকাশিত : ১৯ জানুয়ারি ২০১৭, ১৯:২০

পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিক তেজীভাব নিয়ে ভয়ের কারণ নেই জানিয়েও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ বিনিয়োগকারীদেরকে হুজুগে না মাতার পরামর্শ দিয়েছে। হাতে উদ্বৃত্ত টাকা থাকলেই কেবল বিনিয়োগ করার পরামর্শ দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে ধার-দেনা করে, জমি বন্ধক রেখে বা গয়না বিক্রি করে শেয়ার কেনা উচিত নয়।

বিকালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে এক মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে এই সতর্কতা দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে কোম্পানির সম্পর্কে জেনে বুঝে, বিশেষ করে ইপিএস (শেয়ার প্রতি আয়), এনএভি (শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য), পিই রেশিও (কত বছরে বিনিয়োগ উঠে আসবে) উদ্যোক্তা ইত্যাদি যাচাই করে বিনিয়োগ করুন। একটি সচেতন বিনিয়োগকারীই বাজারের উন্নয়নের পূর্বশর্ত বলেও মন্তব্য করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

২০১০ সালে পুঁজিবাজারে ধসের সাত বছর পর চলতি মাসে পুঁজিবাজারে তেজীভাব দেখা যাচ্ছে। প্রায় তলানিতে চলে যাওয়া শেয়ারের দাম এরই মধ্যে বেড়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। বাজারে শেয়ার কেনাবেচাও বেড়েছে বহুলাংশে। লেনদেন পাঁচশ কোটির ঘর থেকে বেড়ে দুই হাজার কোটিতে পৌঁছেছে।

পুঁজিবাজারের এই তেজীভাব ফিরে আসার পর আবারও সাত বছর আগের ধসের স্মৃতি ফিরে আসছে ঘুরেফিরে। যদিও স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ বলছে, বাজারের এই পরিস্থিতি আরও আগেই আসা উচিত ছিল। বেশিরভাগ শেয়ারের দামই অবমূল্যায়িত হয়ে আছে। এই অবস্থায় দাম কিছুটা বাড়লেও এ নিয়ে আশঙ্কার কিছু নেই।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি পুঁজিবাজারে হুজুগে বিনিয়োগ না করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, তা বুঝে বিনিয়োগ করে পরে সরকার আর অর্থমন্ত্রীকে দোষ দিলে চলবে না। তবে একই অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, আগামী দুই বছরের মধ্যে পুঁজিবাজার ভালো একটি অবস্থানে যাবে।

অর্থমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর থেকে ডিএসসি সূচক প্রায় প্রতিদিনই বেড়েছে। আর সুচকের এই উত্থানকে স্বাভাবিক হিসেবেই দেখছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাজেদুর রহমান। তিনি বলেছেন, ‘পুঁজিবাজার আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। পুঁজি বাজারের এই উত্থানে ভয় পাবার কোন কারণ নাই।’

মিট দ্য প্রেসে বলা হয়, ২০১০ সালের ধসের পর প্রায় প্রতিটি শেয়ারের দামই পড়ে গিয়েছিল। মৌলভিত্তি আছে এমন অনেক শেয়ারের দামও এখনও অবমূল্যায়িক আছে। এই পরিস্থিতিতে বাজারে বিনিয়োগ সব সময় লাভজনক হয়।

মাজেদুর রহমান বলেন, টার্নওভার (লেনদেনের পরিমাণ) ভালো হওয়ায় সূচক বাড়ছে। বিনিয়োগ বাড়লে সুচক বাড়বেই। গত তিন বছরে সরকারের উচ্চ পর‌্যায় থেকে মেসেজ থ্রো করা হয়েছে। অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হচ্ছে এই মেসেজ দিতে পেরেছে সরকার। তড়িৎ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’

মিট দ্যা প্রেসে জানানো হয়, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে বেশ কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া পুঁজিবাজারের বৈচিত্র্য আনতে বেশ কিছু নতুন বিষয় চালু করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিশেষ করে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় ডিএসই’র পক্ষ থেকে সকল স্টেকহোল্ডারদের বিদ্যমান আইন-কানুন সঠিকভাবে পরিপালনে নির্দেশ দেয়া হয়। সেই সুবাদে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাজার সম্পর্কে আস্থা ও ইতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয়েছিল। পুঁজিবাজারে প্রতিদিনই পুরাতন বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি নতুন নতুন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে।

সংবাদ সম্মেলনে পুঁজিবাজারকে ঝুঁকিপূর্ণ জানিয়ে সচেতনভাবে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান ডিএসইর সাবেক সভাপতি রকিবুর রহমান বলেন। তিনি বলেন, ‘জমিজমা বন্ধক রেখে, গয়না বিক্রি করে পুঁজি বাজারে বিনিয়োগ করার দরকার নাই। যাদের উদ্বৃত্ত টাকা আছে তারাই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবেন। জেনেশুনে বুঝেই বিনিয়োগ করতে হবে।’

ব্যাংকের শেয়ারের দাম বাড়ায় সূচকে উত্থান হয়েছে জানিয়ে রকিবুর রহমান বলেন, ‘ব্যাংকের শেয়ার যখন মুভ করে তখন সুচকে প্রভাব পড়ে। আর এ কারণে সুচক তর তর করে বেড়ে গেছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে ডিএসইর সাবেক সভাপতি বলেন, ‘দশ বিশটা লোক পুঁজি বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। এই বক্তব্যের কোন ভিত্তি নেই। বিদেশিরাও আমাদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করছে। তারা অনেক স্বপ্ন দেখছে।’

পদ্মা সেতু হলে পুঁজিবাজারে অনেক প্রভাব পড়বে জানিয়ে রকিবুর রহমান বলেন, ‘এই সেতু হলে আমাদের পুঁজিবাজার এই অবস্থায় থাকবে না। অনেক এগিয়ে যাবে। নতুন পুরাতন বিনিয়োগকারীদের নিয়ে পুঁজিবাজার আরও গতিশীল হবে।’

(ঢাকাটাইমস/১৯জানুয়ারি/জিএম/ডব্লিউবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :