বিএনপি এখন কী করবে

বাছির জামাল
| আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০১৭, ১৪:১১ | প্রকাশিত : ২০ জানুয়ারি ২০১৭, ১৪:০৫

শিরোনাম দেখে অনেকে হয়ত বলতে পারেন যে, কোন রাজনৈতিক দল কী করবে আর কী করবে না তা কি বলে দিতে হবে? আসলে তা নয়। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারছে না- তা থেকেই অনিবার্যভাবে যে প্রশ্নটি আসে তা হচ্ছে, তাহলে বিএনপি এখন কী করবে? ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের দিনকে দলটি গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালন করে। এবারে ৭ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের কর্মসূচি ছিল। এজন্য ডিএমপিতে আবেদনও করা হয়েছিল। কিন্তু সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। অবশেষে দলটি নিদেনপক্ষে নয়াপল্টনে দলীয় অফিসের সামনে যেন সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয় সেই আবেদন করলেও ডিএমপি তাতে কর্ণপাত করেনি।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, মাঠে নামলে জনগণ বিএনপিকে প্রতিহত করবে। এ দিনটিকে আওয়ামী লীগ পালন করে গণতন্ত্রের বিজয় হিসেবে। সেদিন ছিল আবার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরা দেওয়ার দিন। তাহলেও সেদিন কিন্তু ঢাকার রাস্তায় বিএনপির আর কোনো নেতা-কর্মীকে দেখা যায়নি। অন্যদিন আদালতে খালেদা জিয়ার হাজিরার দিন বিএনপি নেত-কর্মীদের যে ভিড় পরিলক্ষিত হয়, সেদিন তেমন কিছুই দেখা যায়নি। তিনি কোর্টে হাজিরা দিয়েছেন প্রায় একাকী। এর আগেও গত বছর ৭ নভেম্বর উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি জনসভা করার জন্য অনুমতি চেয়েছিল। কিন্তু ডিএমপি সেই স্থানে অনুমতি দেয়নি। তারা দিয়েছিল ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ মিলনায়তনে। তাও আবার ২৭ শর্তের বিনিময়ে। শর্তের উল্লেখযোগ্য ধারা ছিল, ‘সরকারবিরোধী বক্তৃতা-বিবৃতি দেওয়া যাবে না।’

বিরোধী দলের সমাবেশে সরকারবিরোধী কোনো বক্তৃতা দেওয়া যাবে না এমন ধরনের শর্ত দিয়েই সেই সময়ে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এবারে তাও দেওয়া হয়নি। বিএনপি সমাবেশ করতে না দেওয়ার প্রতিবাদে সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসুচি দেয়। বরিশালে বিএনপির এ কর্মসূচির ওপর আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা একযোগে হামলা করে। এতে দেখা যায়, বরিশালের এক মহিলা যিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা তার ওপর হামলে পড়ে তারা। হামলে পড়ার এই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে। ছবিতে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা চতুর্দিক দিয়ে ঘেরাও করে মহিলার গায়ের ওপর হাত তুলছে। এক পর্যায়ে মহিলা অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। রাজধানীতে তো বিএনপিকে দেখাই যায়নি তেমন একটা।

এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা এমন একটি দেশে বাস করছি যেখানে গণতন্ত্রের ন্যূনতম অধিকারগুলো পালনের কোনো স্পেস নেই। আমাদেরকে সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। গুম-খুন এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের নেতা-কর্মীদের নামে মামলার পর মামলা দেওয়া হচ্ছে। এ রকম কর্তৃত্ববাদী আর স্বৈরাচারী ধরনের শাসন বাংলাদেশে অতীতে আর আসেনি। তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি ঘুরে দাঁড়াতে। নতুন বছরে আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে, সারা দেশে দলকে সুসংগঠিত করা এবং একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের জন্য জনমত তৈরির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি পালন করা।

সারা দেশে দলকে সুসংগঠিত করার ব্যাপারেও তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। তৃতীয় দফা সময় বাড়িয়েও সারা দেশে জেলা কমিটি পুনর্গঠনের ৪০ শতাংশ কাজ শেষ করা যায়নি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দল পুনর্গঠন কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়কারী ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, প্রশাসনের বাধা, মামলা-মোকদ্দমা ইত্যাদির কারণে জেলায় জেলায় দলীয় সম্মেলন করা যাচ্ছে না বলে কমিটি পুনর্গঠন কাজ বিঘিœত হচ্ছে। এই যখন অবস্থা তখন সারা দেশে দলকে কিভাবে সুসংগঠিত করা হবে এটাই এখন বিএনপির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। বিএনপি যখন চার দেয়ালের ভেতর কর্মসূচি পালন করে কিংবা কোনো সংবাদ সম্মেলন করে, তখন নেতা-কর্মীদের পদভারে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে সেসব এলাকা। কিন্তু যখনই মাঠে কোনো কর্মসূচি দেওয়া হয়, তখন তাদের তেমন দেখা যায় না। এ বিষয়টাও এখন বিএনপির জন্য একটা মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। সরকার বিএনপি নেতা-কর্মীদের মনের মধ্যে সফলভাবে একটা অজানা ভয় ঢুকিয়ে দিতে পেরেছে। যার দরুন মাঠের আন্দোলনে তাদের টিকিটিও খুঁজে পাওয়া যায় না। এ বিষয়টা বিএনপির জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। বিএনপির শীর্ষ মহলের ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে আলাপে জানা যায় যে, তারাও এ বিষয়টি ওয়াকিবহাল। বিএনপি তাই একদিকে ঘরের ভেতরের ফাইলওয়ার্ক অন্যদিকে মাঠের আন্দোলনের জন্য সরকারের সঙ্গে দেন-দরবার করতে থাকবে। যেকোনো একদিন সরকারের এই অলিখিত নিষেধাজ্ঞার ঘেরাটোপ ভেঙে যাবে বলে তারা আশাবাদী।

বিএনপি এখন দুটি বিষয় নিয়ে কাজ করছে বলে জানা গেছে। এর একটি হচ্ছে, গত বছর কাউন্সিল অধিবেশনে খালেদা জিয়া যে ভিশন ২০৩০-এর খসড়া উপস্থাপন করেছিলেন, তার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার কাজ চলছে। অপরটি হচ্ছে, নির্বাচনকালীন একটি সহায়ক সরকারের রূপরেখা প্রণয়ন। এই দুটি কাজের সঙ্গে দলের বুদ্ধিজীবী মহল জড়িত। তারা দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের নির্দেশনা মোতাবেক এসব প্রণয়নে কাজ করছেন। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের প্রস্তাব সুধী মহলে ব্যাপক প্রশংসিত হওয়ায় বিএনপি নেতৃত্ব এসব কাজে আরও উৎসাহিত হয়ে ওঠেছে। তাই আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি তারা এসব ফাইলওয়ার্কের দিকেও নজর দিয়েছে এবার।

বিএনপির নেতারা চায় আপাতত আলোচনায় থাকতে। বিশেষ করে নাগরিক সমাজের মধ্যে তাদের বিভিন্ন কর্মকা- নিয়ে যুক্তিতর্ক অব্যাহত থাক। মাঠের আন্দোলনে সুবিধা করতে পারছে না, তাই তারা এখন বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের মাধ্যমে আন্দোলনের কাজগুলো করে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে চাইছেন। একই সঙ্গে দলের নেতা-কর্মীদের হতাশা কাটিয়ে তোলার সুযোগ খুঁজছেন। বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা মনে করেন, তৃণমূলে বিএনপির অবস্থা যে খারাপ তা নয়। তবে তৃণমূলের এই শক্তিকে মাঠের আন্দোলনে নিয়ে আসতে বিএনপির সেই সাংগঠনিক শক্তি অন্তত এই সরকারের বিপরীতে তেমন একটা নেই। তাই বিএনপি বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের পাশাপাশি মাঠের আন্দোলন কিভাবে দাঁড় করানো যায় সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছে।

লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক [email protected]

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :