ড্যান্ডির নেশায় অঙ্কুরেই নষ্ট পথশিশুর জীবন

খাদিজা আক্তার, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০১৭, ১৪:০৭ | প্রকাশিত : ২১ জানুয়ারি ২০১৭, ০৮:৪০

লাল লাল চোখ, বাঁকানো ময়লা চুল। ছেড়া গেঞ্জি ও ময়লাযুক্ত প্যান্ট পরে বসে আছে সদরঘাটের লঞ্চ টার্মিনালে। কখনো দলবদ্ধ হয়ে আবার কখনো একাকি। এই জোটবদ্ধতার পেছনে রয়েছে নেশার হাতছানি।

যে বয়সে বই খাতা নিয়ে স্কুলে যাবে সে বয়সে জীবিকার সন্ধানে বস্তা হাতে নিয়ে কুড়িয়ে বেড়াচ্ছে ভাঙারি হিসেবে পরিচিত ফেলে দেয়া বস্তু। এসব বিক্রি করে চলে তাদের জীবন সংসার। এমনি করে নোংরা পাত্র কুড়াতে কুড়াতে আসক্ত হচ্ছে আঠার নেশায়।

ওদেরও স্বপ্ন আছে, আছে ইচ্ছা ও সাধ। তবে বাস্তবতা ওদেরকে করেছে বিপথগামী। ওরা বেশিরভাগই পিতামাতা ও অভিভাবকহীন। পরিবেশ ও সমাজের অনেকেই ওদেরকে দেখছে ভিন্নচোখে।

বঞ্চিত শৈশবে ‘সুখ’ এর প্রত্যাশায় অন্ধকারের চোরাবালিতে শিশুরা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে অতল গহ্বরে। জরাজীর্ণ হয়ে পড়ছে ওদের জীবন।

রাজধানীর সদরঘাটের লঞ্চ টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেল আলো আধারির মাঝে পথশিশুদের অন্ধকার জীবনের নানা ডঢ়ত্র। সদরঘাট থেকে একটু পশ্চিম দিকে এগিয়ে ওয়াইজঘাট। এখানে অনেক শিশু এক হয়ে জুতা মেরামত করার এক ধরনের আঠা দিয়ে নেশা করতে দেখা গেলো।

তাদের মধ্যে ছিল চারজন। ওদের বয়স সাত থেকে ১০ বছরের মধ্যে। ওদের কাছে এ আঠার নেশা ড্যান্ডি নামে সমধিক পরিচিত।

ওদের কাছে এ নেশা করার কারণ জানতে চাইলে একজন জানায়, ‘এ আঠা নাকে গেলে মাথা ঝিম ঝিম কওে, ঘুম আহে। বাবা-মা হারানোর কষ্ট ভুইল্যা যাই।’

এছাড়াও ময়লা আবর্জনা কুড়ানোর দুর্গন্ধ ও টার্মিনালের লঞ্চ যাত্রীদের বোঝা বহন করার ক্লান্তি থেকে বাঁচতে এমনকি ময়লা তুলতে হাত পা কেটে যাওয়ার ব্যথা অনুভব থেকে রক্ষা পেতেও নেশা করার কথা জানায় আরেক শিশু।

পথশিশুরা সাধারণত গাঁজা, সিরিঞ্জ, ঘুমের অষুধ, পলিথিনের মধ্যে গামবেল্ডিং দিয়ে এবং পেট্রল শুকে নেশা করে। ওরা নিয়মিত এসব নেশা করে থাকে।

রাজধানীতে পথশিশুর সংখ্যা কত, তাদের মধ্যে কত জন মাদকে আসক্ত সেই পরিসংখ্যান নেই সরকারি দপ্তরে। বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বা এনজিওর জরিপে নানা সময় যে তথ্য উঠে আসে, তাতে দেখা যায় পথশিশুদের মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ শিশু নানা রকম মাদক নেয়।

২০১৬ সালের এপ্রিলে ঢাকার কমলাপুরে পথশিশুদের একটি পুনর্বাসন কেন্দ্র উদ্বোধন করে এক পরিচালক আবুল হোসেন জানিয়েছিলেন, ওই এলাকার ৬০ শতাংশ শিশু কোনো না কোনো মাদক নেয়।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হিসাবে দেশে শিশু ও কিশোর মাদকসেবীর সংখ্যা তিন লাখ ২৪ হাজার এদের মধ্যে ৪৪ শতাংশই হলো পথশিশু।

অধিদপ্তরের এক বার্ষিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০০৮ সালে দেশে শিশু মাদকাসক্ত ছিল দুই লাখ ২০ হাজার। ২০১৬ সালে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ২৪ হাজারে। ৮ বছরে এই সংখ্যা বেড়েছে এক লাখ চার হাজার। দিন দিন ওই সংখ্যা বাড়ছে বলে জানা গেছে। এদের বয়স হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। মাদকাসক্ত এসব শিশু নেশার টাকা জোগাড় করতে অনেক সময় অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার, কমলাপুর রেলস্টেশন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, হাইকোর্ট, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম চত্ত্বর, চানখারপুল, সদরঘাটের লঞ্চ টার্মিনাল, গাবতলী, সায়েদাবাদসহ বিভিন্ন স্থানে দেখা যায় এসব নেশাগ্রস্ত পথশিশুদের।

তারা সারাদিন কাগজ কুড়িয়ে যাত্রীদের বোঝা বহন করে যে টাকা আয় হয় তারও একটা বড় অংশ ব্যয় হয় মাদকের পেছনে।

সরকার এই শিশুদেরকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে নানা উদ্যোগের কথা বলে বটে, তবে এর সুফল কমই মিলেছে। সমাজসেবা অধিদপ্তর মাদকাসক্তদের পুনর্বাসনে একটি প্রকল্প নিলেও সেখানে শিশুদেরকে রাখা যায় না বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। অধিদপ্তর জানায়, শিশু নির্যাতন, নিগৃত বা মাদকাসক্তির বিষয়ে জানাতে টেলি ফ্রি একটি নম্বর চালু হয়েছে। এটি হলো ১০৯৮।

ঢাকাটাইমস/২০জানুয়ারি/কেএ/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :