রাজধানীতে ২০ টাকায় রাজসিক ভ্রমণ

নাসিমা আক্তার তূরা, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২২ জানুয়ারি ২০১৭, ০৮:২৬

যান্ত্রিক যানবাহন আসার আগে ভরসা ছিল ঘোড়ার গাড়ি। তাতে কি আর সাধারণের চলার সুযোগ ছিল? রাজা-বাদশাহ, জমিদার বা ধনকুবেরদেরই বাহন ছিল এই যান। কিন্তু কালের ¯্রােতে বাদশাহীপনা করার সুযোগ এখন হাতের মুঠোয়। হাতে ২০টি টাকা থাকলেই পেতে পারেন ঘোড়ার গাড়িতে চড়ার স্বাদ।

যান্ত্রিক যানবাহনের এই যুগেও ঘোড়ার গাড়ি আকর্ষণ হারায়নি এতটুকু। নানা উৎসব-পার্বন, আনুষ্ঠানিকতায় তো বটেই, নিত্যদিনের যাতায়াতেও রাজধানীতে দেখা মেলে এই গাড়িগুলো।

দুই জোড়া প্রাণীর আটটি পা আর দুটো চাকার উপর ভিত্তি করে চলা এই বাহনে চলার আনন্দ সেই বোঝে যে এতে চড়েছে। শহরের প্রাণকেন্দ্র গুলিস্তানে ঘোড়ার গাড়ির দেখা মেলে এই গাড়িগুলোর।

বঙ্গ বাজারের সামনে বরিশাল প্লাজার সামনেও দেখা মিললো বেশ কিছু ঘোড়ার গাড়ির। কিন্তু এখানে হাতে গোনা দুএকটা ঘোড়া ছাড়া বাকি সবগুলো ঘোড়াই যেন রয়েছে বিষন্ন মনে। মনে হচ্ছে ঘোড়াগুলোর মন খারাপ না হলেও শরীর খারাপ। হয়তো ঠিকমত পরিচর্যা নেই একেবারেই।

যে ঘোড়ার খাবার তালিকায় থাকবে কিসমিস আর ছোলা। তাদেরকে দেয়া হচ্ছে গমের ভূসি আর কুড়া। হয়ত এই খাবার খেয়েই তাদের মন খারাপ। আর মন খারাপ হলে শরীরটাও সায় দেয় না। আবার শরীর খারাপ হলে মন। এ যেন একে অন্যের পরিপূরক। সব মিলিয়ে একটু অস্বাস্থ্যকর বাতাস যেন ছুঁয়ে গেলো।

এরই মধ্যে কথা হলো এক ঘোড়ার গাড়ি চালকের সাথে। পঞ্চাশোর্ধ্ব এই লোকটি হালকা বেঁটে, পরনে লুঙ্গি আর চেক শার্ট। নাম শরীফ মিয়া। বয়স যখন ষোলো তখন থেকে এ পেশায় আছেন তিনি।

শরীফ মিয়া বললেন, ‘ঘোড়ার গাড়ি চালাইয়া কাঁচা চুলে পাক ধরেছে। কত কিছু দেখলাম এই দুই চক্ষে। আগে যখন গাড়ি লইয়া বারাইতাম লোকজন সম্মান দিয়া কথা কইত। আর এখন কেউ পুছেও না।’ শরীফ মিয়া বলেনন ‘আগে রাজা বাদশারা ঘুরতো ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে। তাই এই গাড়ির কদরও আছিলো। এহন যুগ পাল্টায় গেছে। ঘোড়ার গাড়ি আমাদের ঐতিহ্য। এই ঘোড়ার গাড়ি আমাদের ইতিহাস বহন করছে। কত কালের সাক্ষী হয়ে আছে ঘোড়ার গাড়ি।’

ইঞ্জিন গাড়ির আবির্ভাব দিন দিন ঘোড়ার গাড়ির ব্যবহার কমলেও এর জনপ্রিয়তা আছে আগের মতই। এখনো অনেকে সুযোগ পেলে চেপে বসেন ঘোড়ার গাড়িতে। জালাল উদ্দিন নামে এক কোচোয়ানের সাথে কথা বললে তিনি জানান ‘সারাদিন গাড়ি চালাইয়া যে ট্যাহা পাই তার বেশির বাগ চইলা যায় ঘোড়ার খাওনের পিছে। কি করমু কন ঘোড়ারে বাঁচাইতে হইলে তো খাওয়াতে হইবই। ঘোড়া না বাচলে গাড়ি টান কিডা। তাই নিজে খাই আর না খাই ঘোড়ারে ঠিকই খাওয়াইতে হয়।’

এক কোচোয়ানকে ঘোড়ার ও গাড়ির দাম জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, এক একটি গোড়ার দাম কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। আর প্রতিটি ঘোড়ার গাড়ি বানাতে খরচ হয় ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা।

অদূর ভবিষ্যতে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে ঘোড়ার গাড়ির অবস্থান এমন প্রশ্নের জবাবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মেহেদী হাসান জানান, ‘দিন দিন আমরা যন্ত্রনির্ভর হয়ে যাচ্ছি। অত্যাধুনিক হওয়ার নেশার বিভোর থাকি আমরা। এখন আমাদের কল্পনায় দানা বাঁধে বিএমডব্লিউ, অডি, আরওয়ান ফাইভ, জিক্সার ঘোড়ার গাড়ি নয়। তাই আমাদের তরুণ সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের ঐতিহ্য ভূলে গেলে চলবে না। এখন আমরা যেভাবে প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে যাচ্ছি এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে ঘোড়ার গাড়ি বলে কিছু থাকবে না।’

নিজের পরিবার নিয়ে ঘোড়ার গাড়িতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আরিফ রহমান। তাঁর সাথে কথা বললে তিনি জানান ‘আমার বাসা রামপুরা। সেখানে সচরাচর ঘোড়ার গাড়ি দেখা মিলে না। বরিশালে এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। এখন সদরঘাটে নেমে ছোট ছেলের আবদারে ঘোড়ার গাড়িতে উঠলাম। ভালই লাগছে। অনেক দিন পর আবার ঘোড়ার গাড়িতে ঘুরছি।’

ইট পাথরের ধূসর রঙা এই শহরজুড়ে যদি নিয়ম করে নিয়মিত শুনতে পেতাম ঘোড়ার খুড়ের টগবগ টগবগ। হয়তো ভাল থাকা আরো।

ঢাকাটাইমস/২২জানুয়ারি/এনএ/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :