‘জনতার দাবিতেই শ্যামল কান্তিকে কান ধরে উঠবস’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২২ জানুয়ারি ২০১৭, ১৩:৫৬

জনতার দাবির মুখেই নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কানধরে উঠবস করাতে বাধ্য করেছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে বিষয়টি প্রতীয়মান হয়েছে বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সাক্ষীদের সাক্ষ্য পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়েছে যে উপস্থিত স্থানীয় জনগণের দাবির ​পরিপ্রেক্ষিতে সাংসদ ওই নির্দেশ দেন।

রবিবার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চে ওই প্রতিবেদনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুনানি শেষে আদালত শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছনার ঘটনায় করা সাধারণ ডায়েরি, এ সংক্রান্ত নথিপত্র এবং বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন ঢাকা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজিএম) আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম শেখ হাফিজুর রহমান গত ১৯ জানুয়ারি ৬৫ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনটি অ্যাটর্নি কার্যালয়ে জমা দেন। প্রতিবেদনে ছয়টি সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে।

পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট ছাত্র রিফাত ও তার মা জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও মসজিদের ইমামসহ ২৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।

প্রথম সিদ্ধান্ত: শিক্ষক শ্যামল কান্তি ওই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র মোহাম্মদ রিফাত হাসানকে গত বছরের ৮ মে মারধর করেছেন বলে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।

দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত: ইসলাম ধর্ম ও আল্লাহকে নিয়ে শ্যামল কান্তির কটূক্তি করার সত্যতা পাওয়া যায়নি।

তৃতীয় সিদ্ধান্ত: গত বছরের ১৩ মে ওই স্কুলের পরিচালনা পর্ষদের সভা চলাকালে স্থানীয় জনৈক শামসুল হকের ছেলে অপুর নেতৃত্বে ১০-১২ জন সভাকক্ষে ঢুকে প্রধান শিক্ষককে মারধর করার বিষয়ে সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে অপু ছাড়া বাকি ১০-১২ জনের নাম কোনো সাক্ষীই প্রকাশ করেননি।

চতুর্থ সিদ্ধান্ত: গত বছরের ১৩ মে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভা চলাকালে আনুমানিক বেলা ১১টার দিকে স্থানীয় মসজিদ থেকে ঘোষণা দেয়া হয় যে ইসলাম ধর্ম ও আল্লাহকে নিয়ে কটূক্তি করেছেন শ্যামল কান্তি। কে বা কারা ওই ঘোষণা দিয়েছেন, তা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে বিদ্যালয়ের উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ে কমিটির সদস্যদের মধ্যে বিরোধের কারণে এমন ঘোষণা দেয়া হতে পারে বলে বিশ্বাস করার কারণ আছে।

পঞ্চম সিদ্ধান্ত: গত বছরের ১৩ মে বিকাল পাঁচটার দিকে সাংসদ সেলিম ওসমান প্রধান শিক্ষকের রুমে ঢুকে তার গাল-কানজুড়ে দুই হাত দিয়ে পরপর চারটি থাপ্পড় দিয়েছেন—এমন দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।

ষষ্ঠ সিদ্ধান্ত: সাংসদ সেলিম ওসমানের নির্দেশে শ্যামল কান্তি ভক্ত কান ধরে ওঠবস করতে বাধ্য হয়েছেন—ভিডিও ফুটেজ দেখে প্রতীয়মান হয়েছে। তবে সাক্ষীদের সাক্ষ্য পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়েছে যে উপস্থিত স্থানীয় জনগণের দাবির ​পরিপ্রেক্ষিতে সাংসদ ওই নির্দেশ দেন।

গত বছরের ১০ আগস্ট শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কানধরে উঠ-বসের ঘটনায় স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান জড়িত কি না- সে বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। ওই দিন আদালত আদেশে বলেন, কানধরে উঠ-বসের ঘটনায় স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের সম্পৃক্ততা নেই মর্মে পুলিশের প্রতিবেদনে প্রকৃত সত্য তুলে ধরা হয়নি। পুলিশের প্রতিবেদন অসম্পূর্ণ ও অগ্রহণযোগ্য।

এর আগে পুলিশের পক্ষ থেকে দেয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্যামল কান্তিকে কান ধরে ওঠবস করানো ঘটনায় স্থানীয় সাংসদ সেলিম ওসমান জড়িত নয়।

এর আগে গত বছরের ১৮ মে নারায়ণগঞ্জে স্কুল শিক্ষককে কান ধরে উঠবস করার ঘটনায় স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মহসিন রশিদ পত্রিকায় প্রকাশিত শিক্ষকের কান ধরে ওঠ-বস করার ঘটনায় প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করেন। এরপর আদালত স্বঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন।

গত বছরের ১৪ মে ইসলাম ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়িয়ে নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে বিদ্যালয়ের ভেতরে অবরুদ্ধ করে মারধর করা হয়। পরে স্থানীয় এমপি সেলিম ওসমানের উপস্থিতিতে তাকে কান ধরে ওঠ-বস করানো হয়। এরপর তাকে ওই স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। তবে কান ধরে উঠবস করানোর সঙ্গে স্থানীয় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান জড়িত নয় বলে তিনি একটি চিঠি দিয়েছেন।

(ঢাকাটাইমস/২২জানুয়ারি/এমএবি/এমআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আদালত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আদালত এর সর্বশেষ

ব্যবসায়ী নাসিরের মামলা: পরীমনিকে আদালতে হাজির হতে সমন জারি

বোট ক্লাব কাণ্ড: পরীমনির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন

সেই রাতে ৮৭ হাজার টাকার মদ খেয়েছিলেন পরীমনি, পার্সেল না দেওয়ায় তাণ্ডব

বোট ক্লাব কাণ্ড: প্রতিবেদন দিল পিবিআই, ব্যবসায়ী নাসিরের মামলায় ফেঁসে যাচ্ছেন পরীমনি?

ড. ইউনূসকে স্থায়ী জামিন দেননি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল

সদরঘাটে লঞ্চ দুর্ঘটনা: আসামিদের তিনদিনের রিমান্ড

অরিত্রীর আত্মহত্যা: চতুর্থ বারের মতো পেছাল রায় ঘোষণার দিন, কী কারণ?

অরিত্রীর আত্মহত্যা: ভিকারুননিসার ২ শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলার রায় আজ

বুয়েট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বিকে হলের সিট ফেরত দেওয়ার নির্দেশ

আত্মসমর্পণের পর ট্রান্সকমের ৩ কর্মকর্তার জামিন

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :