গণমাধ্যমের আচরণ কেন বখাটের মতো

কাজী আনিস
| আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০১৭, ১২:১৪ | প্রকাশিত : ২৪ জানুয়ারি ২০১৭, ১২:১১

বখাইট্টারা নারী পাইলে হয়, ছাড়ে না। গণমাধ্যমও তাই। নারী পাইলে ছাড়ে না। বখাইট্টারা বিভিন্ন অ্যাংগেলে শিষ দিয়ে উত্ত্যক্ত করে, গণমাধ্যমও নারী সংক্রান্ত নিউজেরও বিভিন্ন অ্যাংগেল বের করে। নোংরা শিষের মতো নোংরা শিরোনাম দেয়। বখাইট্টারা অশ্লীল বাক্য ছুঁড়ে, গণমাধ্যমও জুড়ে দেয় অশ্লীল বাক্য।

ক্রিকেটার আরাফাত সানি গ্রেপ্তার হওয়ার পর এক নারীকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদ দেখে আমার এমনটাই মনে হচ্ছে। একটি নিউজ পোর্টালের শিরোনাম দেখলাম। ওই নারী ড্রাইভারের মেয়ে। সে আইফোন চালায়। শিরোনামটা এ নিয়ে। বড় অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা!!! যদিও পরে এ শিরোনাম আর অনুসন্ধান করে পাওয়া যায়নি। চেইঞ্জ করেছে।

আমার এ লেখা ওই শিরোনাম নিয়ে নয়। খেয়াল করলে দেখবেন, ওই শিরোনামের অন্তরালে একটি পেশাকেও কীভাবে ছোট করা হয়েছে। পেশাটা ড্রাইভারি।

একবার রেডিওতে শুনতে পেলাম, হেয় করে বলা হচ্ছে, বুয়েটের কোন ছাত্র নাকি কী না কী না করার কারণে কারওয়ান বাজারে সবজি বিক্রি করে। পেশাটা সবজি বিক্রি। রেডিওতে শোনার পর মনে মনে বললাম, কারওয়ান বাজারের কিছু কিছু সবজি বিক্রেতা লাখপতি। বুয়েটের ছাত্র যদি সবজি বিক্রি করে লাখপতি থেকে কোটিপতি হয়, তাহলে এটাকে হেয় করার কোনো মানে আমি দেখি না। না হলেও দেখি না। এ বুয়েট ছাত্র সনির মতো কোনো ছাত্রীকে গুলি করছে না। ডাকাতি করছে না, চুরি করছে না। সবজি বিক্রি করছে, পরিবার আর নিজের জীবিকা নির্বাহ করছে। ওই ছাত্রকে বাহবাহ দেওয়া উচিত, পুরস্কৃত করা উচিত।

আমার বাসার সামনে যে মুচিটা বসে আমি মাঝে মাঝে তার দিকে তাকাই। আর ভাবি, এই মুচি ওই মন্ত্রীর চেয়ে শতগুণ ভাল, যে মন্ত্রী রাতদিন দুর্নীতি করে বেড়ায়। ওই মন্ত্রিত্বের পেশার চেয়ে শতগুণ পবিত্র আর দেশের জন্য উপকারি ওই লোকের মুচিত্ব। আমরা কি জানি, একটি গোষ্ঠীর কাছ থেকে আমরা সব সময় দূরে থাকি, তাদের পেশাটাকেও হেয় করি, তারা না থাকলে দেশে নির্বিঘ্নে, নিশ্চিন্তে, আরামে, অনায়াসে বাথরুমেও যাওয়া যেত না।

পৃথিবীর প্রত্যেকটি পেশাই মানুষের কল্যাণের জন্য। একটি পেশা প্রতিটি জীবনের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে জড়িত। কী ড্রাইভারি বলেন, কী সবজি বিক্রি বলেন, কী মুচিগিরি ইত্যাদি বলেন-এসব না থাকলে তো আপনার পৃথিবী অন্ধকার। আপনি অচল।

আমাদের অন্যতম প্রধান সমস্যাটা এখানেই, বিভিন্ন পেশার প্রতি অশ্রদ্ধা। গণমাধ্যম তা মাঝে মাঝে উস্কে দেয়, আমরাও দেই, মেনেও নিই। এক মানসিক স্ট্যাটাস গড়ে উঠে। ফলে যে ছাত্র পাস করে সবজি বিক্রি করে সফল হওয়ার কথা ছিল, সে আর হয়তো ওই স্ট্যাটাসের কথা ভেবে ওইদিকে পা বাড়ায় না। যে ছেলেটি হয়তো ড্রাইভার হয়ে ট্রাফিক আইন মেনে চলত, সে আর ওই স্ট্যাটাসের কথা ভেবে আর এ পেশায় আসে না।

ভাবছি, সমাজটাকে পিছিয়ে দেওয়ার জন্য আমার আর আপনার অশ্রদ্ধা কতটুকু দায়ী?

শিক্ষক, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :