পুলিশকে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে বললেন প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইস
 | প্রকাশিত : ২৪ জানুয়ারি ২০১৭, ১৭:৪৫

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে পুলিশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জনগণকে আস্থায় নিয়ে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পুলিশ সদস্যদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ সপ্তাহ-২০১৭ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। খবর বাসসের।

সন্ত্রাস ও জঙ্গিদমনকে বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বৈশ্বিক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। অনেক দেশই এখানে হিমশিম খাচ্ছে। বাংলাদেশ এটাকে একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। কোনোভাবেই আমরা বাংলাদেশকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র জঙ্গিবাদী রাষ্ট্র হতে দেব না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এই ধরনের চ্যালেঞ্জ আরো মোকাবেলা করতে হবে। আমার সব সময় চিন্তা হয়, যখনই বাংলাদেশর মানুষ ভালো থাকে, স্বস্তিতে থাকে, উন্নতি হয় তখনই যেন ষড়যন্ত্র আরও বেশি শুরু হয়।’

পঁচাত্তরের প্রেক্ষাপট স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৫ আগস্ট যখন ঘটেছিল তখন বাংলাদেশ খাদ্যভাব ছিল না, সবকিছু মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে এসেছিল। তখন প্রবৃদ্ধি ৭ ভাগের বেশি হয়। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ এগিয়ে যাবে এটা অনেকে ভাবতেই পারেনি। ঠিক তখনই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল।’

শেখ হাসিনা সব সময়য় সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘এখনো আমরা উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছি। হ্যাঁ আন্তর্জাতিক বিশ্ব বাংলাদেশ প্রশংসিত হচ্ছে। কিন্তু ওই প্রশংসা শুনে মন গলা এটা আমার স্বভাব না। সেখানে সন্দেহের কিছু আছে কি না এটা আমাদের দেখতে হবে।’

‘দেশ এভাবে এগিয়ে যাবে এটা অনেকে নিতে পারে না। আমাদের শত্রু বাইরে না। ঘরের শত্রুই বিভীষণ। কিভাবে দেশের ক্ষতি করবে সেই চিন্তাতেই তারা থাকে,’ উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

৭৫ পরবর্তী শাসকেরা ক্ষমতাকে ভোগের বস্তুতে পরিণত করেছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের কাছে ক্ষমতাটাই ছিল সব। দেশ গোল্লায় যাক। ক্ষমতাকে ভোগ দখল করেছিল, তাদের বিত্ত বৈভব তৈরি করার একটা স্থান করে নিয়েছিল। দেশের মানুষের দিকে ফিরে তাকায়নি।’

তখন ক্ষমতা জনগণের হাতে নয় বরং ক্যান্টনমেন্টে চলে গিয়েছিল বলেও অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মানুষের সার্বিক উন্নতি হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জনসেবার মনোভাব নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করি। রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা আমাদের সহযোগী তারা যেন সুন্দর পরিবেশ পায়, স্ব স্ব দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করতে পারে সেই চেষ্টাটা করছি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের যত দরদ, উড়ে এসে যারা ক্ষমতায় আসে তাদের সেটা থাকবে না। তারা ক্ষমতায় আসে ভোগ করতে।’

প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে গাইবান্ধায় সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটনের হত্যা প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, দুঃখজনক ঘটনা ঘটে গেলে গাইবান্ধঅয় আমাদের এক সংসদ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওই সাংসদের বাসায় প্রহরারত পুলিশ তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কেন পুলিশ তুলে নিয়ে যাওয়া হলো? তার বিরুদ্ধে একটা অপবাদ দিয়ে তার লাইসেন্স করা অস্ত্র তার কাছ থেকে নিয়ে যাওয়া হলো।’ ‘মনে হলো একেবারে পরিকল্পিতভাবে ছেলেটাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হলো,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, পলাশবাড়ি, গোবিন্দগঞ্জ থেকে শুরু করে সাঘাটা এ সমস্ত এলাকায় ২০১৩ সালে চারজন পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন দেয়া হয়েছিল, রেলের ফিসপ্লেট খুলে ফেলা হয়েছিল।’ তিনি বলেন, ‘সেখানকার একজন সংসদ সদস্যের নিরাপত্তার দিকে দৃষ্টি না দিয়ে, কোন পত্রিকায় কী লিখলো সেটা সঠিক খবর কি না না জেনেই কেন এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হলো। যার জন্য একজন সংসদ সদস্যকে জীবন দিতে হলো।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ। সেখানে জনগণের ভোটে নির্বাচিত একজন জনপ্রতিনিধিকে এভাবে মৃত্যুবরণ করতে হবে। এটা কখনো গ্রহণযোগ্য নয়। প্রতিটি এলাকায় এ ব্যাপারে সর্তক থাকবে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘ছোট খাটো ঘটনা হলেই দেখি হাউকাউ শুরু হয়ে যায়। একজন সংসদ সদস্যকে হত্যা করার পর কোন মানবাধিকার সংগঠন বা কেউ এ ব্যাপারে কোনো শব্দ করল না। বাংলাদেশ একটা অদ্ভুত দেশ দেখি।’

প্রধানমন্ত্রী এক শ্রেণির মানবাধিকার সংগঠন সরকারের প্রতি বিষোদগার করে অভিযোগ বলেন, ‘যারা পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন ধর্মের মানুষকে হত্যা করলো, মসজিদে আগুন দিল, মানুষ পোড়ালো তাদের বিরুদ্ধে এদের অত বেশি সোচ্চার হতে দেখি না।’

বক্তব্যের শুরুতে ’৬৯র ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান দিবসের প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় এবং পাকিস্তান আমলের বৈষম্যের একটি চিত্র তুলে ধরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মহান আন্দোলন-সংগ্রামের বিভিন্ন প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন।

(ঢাকাটাইমস/২৪জানুয়ারি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :