অনুমোদনহীন পাথর ভাঙার মেশিন উচ্ছেদে হাইকোর্টের রায়
সিলেটের পাঁচ উপজেলায় স্থাপিত অনুমোদনহীন সব পাথর ভাঙার মেশিন (স্টোন ক্রাসিং মেশিন) উচ্ছেদ করতে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। যেসব মেশিনের অনুমোদন রয়েছে সেগুলোকে একটি জোন তৈরি করে সেখানে স্থানান্তরিত করতে বলেছে আদালত। আগামী তিন মাসের মধ্যে রায় বাস্তবায়নের জন্য বিবাদীদের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আদেশ বাস্তবায়ন হওয়ার বিষয়ে আগামী তিন মাস অন্তর একটি প্রতিবেদন আদালতে জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ রায় দেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হওয়া এক রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে আদালত এ রায় দেন। পাঁচটি উপজেলা হলো সিলেট সদর, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট।
অ্যাডভোকেট মিনহাজুল হক চৌধুরী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এর আগে ২০১৫ এ বিষয়ে একটি রুল দিয়েছিল। আজ ওই রুল নিষ্পত্তি করে রায় দিয়েছেন। সিলেট জেলার পাঁচটি উপজেলার ৬০৬টি স্টোন ক্রাসিং মেশিন নাম আমরা পেয়েছিলাম। এর মধ্যে ৫১২টিরই কোনো পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। এই মেশিনগুলো বন্ধ করে দিতে বলেছেন রায়ে। আর অনুমোদিত যেগুলো আছে সেগুলোকে স্টোন ক্রাসিং মেশিন স্থাপন যে নীতিমালা আছে সেই অনুযায়ী একটি জোন করে সেখানে স্থানান্তরের কথা বলা হয়েছে। সরকারকে আগামী তিন মাসের মধ্যে এটি করতে বলেছে আদালত।’
২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি সিলেটের পাঁচটি উপজেলায় পরিবেশগত ছাড়পত্রহীন পাথর ভাঙার মেশিন অবিলম্বে বন্ধের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। সিলেট সদর, কোম্পানিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালককে এই আদেশ বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়।
২০১৫ সালের ৮ জুলাই বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) পরিবেশগত ছাড়পত্রহীন এসব পাথর ভাঙার মেশিন বন্ধ করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করে। রিটে বলা হয়- উন্মুক্ত স্থান, খেলার মাঠ ও হাসপাতালের আশেপাশে মেশিন স্থাপন করে পাথর ভাঙার কারণে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। রিটে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব, ভূমি সচিব, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সচিব, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক, প্রধান বন সংরক্ষকসহ ২১ জনকে বিবাদী করা হয়।
রিট আবেদনে সিলেট জেলা প্রশাসনের একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বলা হয়, জেলার ৬০৬টি স্টোন ক্রাশার মেশিনের মধ্যে ২১৩টির ছাড়পত্র রয়েছে, ৩৯৩টিরই ছাড়পত্র নেই। এর মধ্যে ১৫০টির জন্য পরিবেশগত ছাড়পত্র চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। সিলেট সদর, কোম্পানিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট অঞ্চলে স্থানীয় প্রসাশনের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৬০৬টি স্টোন ক্রাশার মেশিন রয়েছে। ওই সব মেশিন রেসিডিন্সিয়াল এরিয়া, খেলার মাঠ, হাসপাতালের প্রাঙ্গণে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে স্টোন ক্রাশার মেশিন স্থাপন করে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। শিশু ও বৃদ্ধদের শ্বাসকষ্ট ও চর্মরোগ বাড়ছে। কতটি স্টোন ক্রাশার মেশিন পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড় পেয়েছে তার কোনো সঠিক হিসাব বলতে পারে না প্রশাসন।
ওই রিটের শুনানি করে ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট রুল জারি করেন হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ।
(ঢাকাটাইমস/২৪জানুয়ারি/এমএবি/জেবি)