না:গঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় শ্রমিক বিক্ষোভ, ৯২৮ জন ছাঁটাই

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৪ জানুয়ারি ২০১৭, ২০:৩৪

বকেয়া-বেতন ও সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর দাবি এবং শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জের সদর, কাঁচপুর ও ফতুল্লায় বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছে। কয়েক মাসের বেতন-ভাতা না দেয়ায় বাড়ি ওয়ালা ও দোকানদারদের হাতে তারা লাঞ্ছিত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। প্রশাসন জানানো ও মালিকদের বার বার তাগাদা দেয়া হলেও কোনো ভ্রুক্ষেপ না করায় তারা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। যদি শিগগির এ সমস্যার সমাধান না করা হয়, তাহলে এ বিক্ষোভ অন্যান্য গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতেও ছড়িয়ে পড়বে বলে শ্রমিক নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

মঙ্গলবার সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর এলাকায় সিনহা অ্যান্ড ওপেক্স গ্রুপের শ্রমিকরা বর্ধিত বোনাসের দাবিতে বিক্ষোভ করে। একই উপজেলার মেঘনা শিল্পনগরী এলাকায় আনন্দ শিপইয়ার্ডের শ্রমিকরাও বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। অপরদিকে ফতুল্লার ক্রোনি সোয়েটার গার্মেন্টেসের ৯২৮ শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে শ্রমিকরা বিক্ষোভ প্রর্দশন করে। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। একই দিন সদর উপজেলার গাবতলী টাগারপাড়ে অবস্থিত কটন পাওয়ার এক্সেল নিট লিঃ এর শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করেন।

জানা গেছে, কাঁচপুর এলাকায় সিনহা অ্যান্ড ওপেক্স গ্রুপের শ্রমিকরা১০% বর্ধিত বোনাসের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। মঙ্গলবার সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ পুলিশ ও সোনারগাঁ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় শ্রমিকরা মহাসড়কে উঠতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলে তারা শান্ত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

শ্রমিক তৈয়ব ও তানভীর ঢাকাটাইমসকে জানান, দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকরা ১০% বোনাসের দাবি করে আসলেও মালিকপক্ষ কালক্ষেপণ করছেন।

এ ব্যাপারে সিনহা অ্যান্ড ওপেক্স গ্রুপে প্রশাসনিক কর্মকর্তা কর্নেল (অব.) দেলোয়ার হোসেন জানান, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী শ্রমিকদের ৫% বোনাস পরিশোধ করে আসছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকরা অযৌক্তিকভাবে ১০% বোনাস দাবি করে। শ্রমিকদের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় কারখানার অভ্যন্তরে বিক্ষোভ মিছিল করে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়।

এদিকে একই উপজেলার মেঘনা এলাকায় আনন্দ শিপইয়ার্ডের শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করে। শ্রমিক সাইদুল ইসলাম ও আমিনুল ইসলাম জানান, শ্রমিকরা তিন মাস ধরে বেতন না পাওয়ায় দোকান বাকি ও বাসা ভাড়া দিতে পারছে না। বর্তমানে দোকানদার ও বাড়ির মালিকরা তাদের পাওনা টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ বকেয়া বেতন দেয়ার আশ্বাস দিলেও বেতন না দিয়ে তালবাহানা শুরু করে। বাধ্য হয়ে কাজে যোগ না দিয়ে বিক্ষোভ করতে বাধ্য হয়েছি। আনন্দ শিপইয়ার্ডের শ্রমিক অহিদুল্লাহ ও আবু তাহের বলেন, শ্রমিকরা নিয়মিত বেতন না পাওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়েছে। মালিক পক্ষ একাধিকবার বেতন দেওয়ার কথা বলে কথা রাখেননি। বকেয়া বেতনের দাবিতেই আন্দোলনে নেমেছি।

অপরদিকে ফতুল্লার বিসিক শিল্পনগরীতে অবস্থিত ক্রোনী সোয়েটার্স নামের একটি রপ্তানিমুখী গার্মেন্টসের ৯২৮ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। এ নিয়ে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। মঙ্গলবার সকালে প্রতিষ্ঠানের ফটকে ছাঁটাইয়ের নোটিশ দেখতে পেয়ে শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। কারখানাটির মালিক বিকেএমইএ’র প্রথম সহসভাপতি আসলাম সানি।

ইউনাইটেড ফেডারেশন অব গার্মেন্টসে ওয়ার্কার্স নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সেন্টু জানান, মঙ্গলবার সকালে কারখানাটির ফটকে শ্রম আইনের ২০ ধারা মোতাবেক ৯২৮ জন শ্রমিককে ছাঁটাইয়ের নোটিশ দেখতে পেয়ে শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে ফতুল্লার আলীগঞ্জস্থ লেবার হলে সমবেত হয়। এ সময় তারা বিক্ষোভ করে।

শিল্প পুলিশ-৪, নারায়ণগঞ্জ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ ইলতুকমিস ঢাকাটাইমসকে জানান, ফতুল্লার ক্রোনী সোয়েটার্সের কারখানা থেকে ৯২৮ জনকে ছাঁটাই করা হয়েছে। উন্নতনামের মেকানিক্যাল মেশিন আনা হচ্ছে। ওখানে জনবল লাগবে না। সম্পূর্ণ মেকানাইজ, জাপানি মেশিন। যেই বিভাগে মেশিন আনা হচ্ছে ওই বিভাগের শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। শ্রম আইন অনুযায়ী ২০ ধারা অনুযায়ী ২ মাসের বেসিক বেতন দিয়ে শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার গাবতলী টাগারপাড়ে অবস্থিত কটন পাওয়ার এক্সেল নিট লিঃ এর শ্রমিকরা অক্টোবর-নভেম্বর-ডিসেম্বর এই তিন মাসের বেতন পরিশোধের দাবিতে প্রতিষ্ঠানের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে। মঙ্গলবার দুপুর একটায় এ কর্মসূচি পালিত হয়।

কটন পাওয়ার গার্মেন্ট এর শ্রমিক উর্মির সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম গোলক, সহ-সভাপতি ও গাবতলী পুলিশ লাইন শাখার সভাপতি সাইফুল ইসলাম শরীফ, সাধারণ সম্পাদক হাসনাত কবীর ও কারখানার শ্রমিক সালেহা।

বক্তারা বলেন, কটন পাওয়ার এক্সেল নিট লিঃ শ্রমিকদের তিন মাসের বেতন পাওনা। শ্রমিকরা বেতন চাইলে মালিক কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের গালিগালাজ করে ও ভয়ভীতি দেখায়। এই ফ্যাক্টরির ৯০ ভাগ শ্রমিকই নারী। বাসা ভাড়া, দোকানের পাওনা পরিশোধ করতে না পারায় বাড়িওয়ালা ও দোকানদারদের হাতে লাঞ্ছিত হতে হচ্ছে তাদের। শ্রমিকেরা অনাহারে অর্ধাহারে দিনযাপন করছে।

তারা বলেন, মালিক চক্রান্ত করছে নতুন শ্রমিক দিয়ে কাজ চালানোর। এ অবস্থায় যদি শ্রমিকের বেতন পরিশোধ না হয় তবে এ আন্দোলন পুলিশ লাইন টাগারপাড়ের অন্যান্য ফ্যাক্টরিতে বিক্ষোভে ছড়িয়ে পড়বে। শ্রমিকরা ইতিমধ্যে লিখিতভাবে বিকেএমইএ, কলকারখানা পরিদর্শন অফিস ও শিল্প পুলিশকে তাদের সঙ্কটের কথা জানিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ সঙ্কট নিরসনে এগিয়ে আসেনি।

বক্তারা অবিলম্বে তিন মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের জন্য বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও বিকেএমইএকে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান।

(ঢাকাটাইমস/২৪জানুয়ারি/প্রতিনিধি/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :