মহাকবি মধুসূদন দত্তের ১৯৪তম জন্মদিন আজ

যশোর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৫ জানুয়ারি ২০১৭, ০৮:১৭

বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯৪তম জন্মদিন আজ বুধবার। তিনি যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে ১৮২৪ সালের এদিনে জন্মগ্রহণ করেন।

বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে কবির জন্মভিটা সাগরদাঁড়িতে সপ্তাহব্যাপী মধুমেলার আয়োজনসহ বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

১৯৭৩ সাল থেকেই এই মধুমেলার আয়োজন হয়ে আসছে। এবার সপ্তাহব্যাপী এই মেলা শুরু হয়েছে ২১ জানুয়ারি। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক মেলার উদ্বোধন করেন। মেলা চলবে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত।

এর আগে মহাকবির জন্মবার্ষিকী এবং মধুমেলা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, জন্মভূমির প্রতি মাইকেল মধুসূদন দত্তের গভীর অনুরাগ আগামী প্রজন্মের কাছে দেশপ্রেমের চিরন্তন নিদর্শন হিসেবে চির-জাগরুক থাকবে।

মাইকেল মধুসূদন দত্ত বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী ছিলেন উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, তার (মধুসূদনের) হাতে বাংলা সাহিত্য পেয়েছে নবরূপ, হয়েছে সমৃদ্ধ ও ঐশ্বর্যমণ্ডিত। তিনি একাধারে বাংলা সাহিত্যে প্রথম মহাকাব্যের রচয়িতা, অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক, সনেট রচয়িতা ও আধুনিক শিল্পকলাসম্মত নাট্যকার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণীতে বলেন, বাংলা সাহিত্যের প্রবাদ পুরুষ মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের অনন্য সাহিত্যকীর্তি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।

মধুসূদন দত্ত বাংলা ভাষায় মহাকাব্য রচনা এবং বাংলা কবিতায় অমিত্রাক্ষর ছন্দ প্রবর্তনের পথিকৃৎ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলা কাব্যের গতানুগতিক রীতি-প্রকরণ ভেঙে নতুন ছন্দ যোজনায় তিনি আমাদেরকে বিচিত্র কাব্য-সম্ভার উপহার দিয়েছেন।

নাটক, প্রহসন, মহাকাব্য, পত্রকাব্য, সনেট, ট্রাজেডিসহ সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় তাঁর অমর সৃষ্টি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে উন্নত মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

মধু কবির জন্মবার্ষিকী ও মধুমেলা উদযাপন কমিটি সূত্রে জানা গেছে জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতিদিনই এ অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার মানুষ সাগরদাঁড়িতে আসছেন।

মাইকেল মধুসূদন দত্তের পিতার নাম রাজনারায়ণ দত্ত, মা জাহৃবী দেবী। শৈশবে সাগরদাঁড়ির পাশে শেখপুরা গ্রামের মৌলভী খন্দকার মখমল সাহেবের কাছে বাংলা ও ফার্সি শিক্ষা লাভ করেন।

১৮৩৩ সালে সাগরদাঁড়ি ছেড়ে কলকাতার খিদিরপুর যান। সেখানে লালবাজার গ্রামার স্কুলে ইংরেজি, ল্যাটিন ও হিব্রু ভাষা শিক্ষা নেন।

কবি ১৮৩৭ সালে হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। ১৮৪২ সালে ইংরেজিতে প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ‘স্ত্রীশিক্ষা’ বিষয়ে প্রবন্ধ লিখে কলেজ থেকে স্বর্ণপদক লাভ করেন।

১৮৪৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেন কবি। একইসাথে পিতৃগৃহ থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসন নেন। হিন্দু কলেজে পড়তে না পেরে বিশপস কলেজে ভর্তি হন ও গ্রিক ও সংস্কৃত ভাষায় জ্ঞানার্জন করেন তিনি। ১৮৪৮ সালে সাগরদাঁড়িতে আসেন। তারপর ভাগ্যান্বেষণে মাদ্রাজ চলে যান। পথে বসন্ত রোগে আক্রান্ত হন । সুস্থ হয়ে সেখানে একটি আবাসিক স্কুলে ইংরেজি বিভাগে শিক্ষকতা শুরু করেন। বিভিন্ন পত্রিকায় ছদ্মনামে কবিতা লিখতে থাকেন। কয়েকটি পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন ও সম্পাদকীয় বিভাগেও কাজ করেন। একই বছর বিয়ে করেন রেবেকা ম্যাকটাভিসকে।

১৮৪৯ সালের এপ্রিলে তাঁর ইংরেজি কাব্যগ্রন্থ ‘দ্য কাপটিভ লেডি’ প্রকাশ হয়। ১৮৫২ সালে মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হাইস্কুল বিভাগে শিক্ষকতার চাকরি নেন। ১৮৫৪ সালে দৈনিক স্পেকটেটর পত্রিকায় সহ-সম্পাদক পদে নিযুক্ত হন। ১৮৫৭ সালে আদালতে দোভাষী হিসেবে কাজ শুরু করেন।

১৮৫৮ সালে ‘শর্মিষ্ঠা নাটক’ লিখে বাংলা ভাষায় সাহিত্যচর্চা শুরু করেন ও নাট্যান্দোলনে জড়িয়ে পড়েন।

১৮৬০ সালে ‘পদ্মাবতী নাটক’ প্রকাশ হয়। মে মাসে বাংলা ভাষায় প্রথম অমিত্রাক্ষর ছন্দে লেখা ‘তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য’ প্রকাশ হয়। এবছরই তিনি মহাকাব্য রচনায় মনোনিবেশ করেন।

১৮৬১ সালে জানুয়ারিতে ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়। ফেব্রুয়ারিতে প্রখ্যাত সাহিত্যিক কালিপ্রসন্ন সিংহের বাসভবনে অমিত্রাক্ষর ছন্দে মহাকাব্য রচনার জন্য বিদ্যোৎসাহিনী সভার পক্ষ থেকে সংবর্ধনা এবং মহাকবি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ইংল্যান্ডে গিয়ে ব্যারিস্টারিতে ভর্তি হন।

১৮৬৩ সালে অর্থকষ্টে পড়েন। এ অবস্থায় পরিবারসহ প্যারিসের ভার্সাই নগরীতে চলে যান। ১৮৬৪ সালে ২ জুন অর্থসাহায্য চেয়ে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে চিঠি লেখেন। আগস্টে বিদ্যাসাগরের পাঠানো টাকা পেয়ে সাময়িকভাবে অভাব মোচন হলে তিনি সনেট রচনায় মনোনিবেশ করেন ও ইংল্যান্ডে ফিরে গিয়ে আবার ব্যারিস্টারি পড়া শুরু করেন।

১৮৬৬ সালের আগস্টে ‘চতুর্দ্দশপদী কবিতাবলী’ পুস্তক আকারে কলকাতা থেকে বের হয়। নভেম্বরে ব্যারিস্টারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৮৬৭ সালে পুত্র-কন্যাকে ফ্রান্সে রেখে কলকাতা চলে আসেন। সেখানে হাইকোর্টে ব্যারিস্টারি ব্যবসা শুরু করার জন্য আবেদন করেন।

১৮৭৩ সালের ২৯ জুন বেলা ২টায় মৃত্যুবরণ করেন মহাকবি মধুসূদন দত্ত।

(ঢাকাটাইমস/২৫জানুয়ারি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :