প্রগতি লেখক সংঘের জাতীয় সম্মেলন শুক্রবার
‘চির উন্নত মম শির’ স্লোগানকে ধারণ করে আগামী শুক্রবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘের দ্বিতীয় জাতীয় সম্মেলন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে সকাল ১০টায় সম্মেলন উদ্বোধন করবেন লেখক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী।
জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনের পর র্যালি শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও বিকালে কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে তুরস্ক, জাপান, ভারত, নেপালের প্রগতিশীল লেখকসহ সারাদেশের লেখকরা অংশ নেবেন।
বুধবার বেলা ১১টায় উদীচী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘের এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘের কার্যকরী সভাপতি ও দ্বিতীয় জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদের চেয়ারম্যান কবি গোলাম কিবরিয়া পিনু।
লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক কবি সাখাওয়াত টিপু। এসময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক ও চিত্রশিল্পী মতলুব আলী, অধ্যাপক এম এ আজিজ মিয়া, প্রচার সম্পাদক কবি রহমান মুফিজ, প্রকাশনা ও গবেষণা সম্পাদক শাহাদাত হোসেন শ্যামল, সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদের সদস্য কবি ও লেখক দীপংকর গৌতম, আন্তর্জাতিক সম্পাদক কবি ও লেখক অভিনু কিবরিয়া ইসলাম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কবি ও লেখক হাবীব ইমন, সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদের সদস্য কবি রাহাত মুস্তাফিজ।
লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের নেতারা বলেন, এমন সময়ে প্রগতি লেখক সংঘ সম্মেলনের ডাক দিয়েছে যখন দেশে মুক্তবুদ্ধি চর্চায় প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে নানা ধরনের শেকল পরানোর চেষ্টা চলছে। লেখক-প্রকাশকদের ওপর উগ্র-মৌলবাদীগোষ্ঠী ধারাবাহিক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্র সেসব ঘটনায় দায়ীদের দ্রুত চিহ্নিত ও শাস্তির ব্যবস্থা না করে অপরাধীদের নিরাপদে পরের হামলা চালানোর রাস্তা করে দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, মৌলবাদীদের খুশি রাখতে লেখক আর প্রকাশকদের সৃজনশীল চিন্তায় একের পর এক বাধা দিয়ে যাচ্ছে ‘স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি’ দাবিদার সরকার। উগ্রবাদীদের চাওয়ায় বদলে ফেলা হয়েছে পাঠ্যবই, গ্রেপ্তার হয়েছেন লেখক-প্রকাশক। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বইমেলার স্টল।
বক্তারা বলেন, দেশে সৃজনশীল জ্ঞান ও সাহিত্য চর্চায় আছে আরও নানা বাধা। দেশের অপরাপর নিষ্পেষিত গোষ্ঠীর মতো লেখকরাও তাদের ন্যূনতম অধিকার থেকে বঞ্চিত। সত্যিকার অর্থে লেখকদের স্বার্থ নিয়ে কথা বলার মতো গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক পাটাতন নেই। আর এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে রাজনৈতিক সংস্কৃতির সীমারেখা। মুক্তবুদ্ধি বিকাশে যে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র আর সমাজকাঠামো দরকার, বাংলাদেশে তা একবারে অনুপস্থিত। লেখক হিসেবে যারা পরিচিত, তারাও তেমন সোচ্চার নন বা বলার কণ্ঠ রুদ্ধ করা হচ্ছে।
লেখক নেতারা আরও বলেন, ফ্যাসিবাদী দানবের মত সাম্রাজ্যবাদের সর্বগ্রাসী উন্মাতাল পদচ্ছাপে যখন পৃথিবী রক্তাক্ত ও লণ্ডভণ্ড, তখন প্রগতিশীল শিল্পী-কবি-সাহিত্যিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি। তাই দেশ, পৃথিবী ও মানুষের অধিকারের প্রশ্নে কমিউনিস্ট-অকমিউনিস্ট, মার্কসবাদী-অমার্কসবাদী, জাতীয়তাবাদী ও মানবতাবাদীসহ প্রগতিশীল লেখক-শিল্পীদের এক কাতারে দাঁড়াতে হবে। সমাজ-রাষ্ট্রের এমন বন্ধ্যা পরিস্থিতিতে প্রগতি লেখক সংঘ তাই দ্বিতীয় সম্মেলনের স্লোগান ঠিক করেছে কাজী নজরুল ইসলামের সেই অমোঘ উচ্চারণ ‘চির উন্নত মম শির।’
(ঢাকাটাইমস/২৫জানুয়ারি/জেবি)