‘বাবা যেসব লিখেছেন তা কেউ লিখতে সাহস পাবে না’
মৌলি আজাদ। তরুণ কথাশিল্পী। তার বাবা প্রথাবিরোধী সাহিত্যিক হুমায়ুন আজাদ। পেশাজীবনে মৌলি আজাদ বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কর্মকর্তা। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আসাদুজ্জামান।
লেখালেখির শুরুটা কিভাবে?
এখন পর্যন্ত আপনার কয়টি বই প্রকাশ হয়েছে?
এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৬। আমার প্রথম প্রকাশিত বইটি ইংরেজিতে লেখা। বইয়ের নাম সিভিল লিটিগেশন। বইটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য লিখেছিলাম। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে সিভিল লিটিগেশন বিষয়টি পড়তে গিয়ে ভালো বইয়ের অভাবে এতটাই অসুবিধায় পড়েছিলাম যে, তাই সিভিল আইনের ওপর ইংরেজি বই লিখতে ইচ্ছে হয়। দ্বিতীয় বই আমার বাবাকে নিয়ে স্মৃতিচারণমূলক বই ‘হুমায়ুন আজাদ আমার বাবা।’ এরপরের বইগুলো হলো- প্রিয়ানা চোখ ও ঝরনার জলে ¯œাত প্রপাতের ফোয়ারা (গল্প), যেখানে আইন সেখানেই জীবন (প্রবন্ধ), রুপালি জোছনায় ভেজা জীবন (গল্প)।আসছে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আপনার কোনো বই বের হবে? ২০১৭ সালের বইমেলায় বের হচ্ছে আমার দীর্ঘ গল্প ‘রক্তজবাদের কেউ ভালোবাসেনি।’ বইটি বইমেলায় প্রথম দিন থেকে পাওয়া যাবে। বরাবরের মতো ‘আগামী প্রকাশনী’ থেকেই বইটি বের হচ্ছে। এ বইটি লেখায় আমার প্রস্তুতি অনেক দিনের। বলা যায় আমাদের সমাজের রক্তজবাদের নানা কথার সঙ্গে সমাজের বিভিন্ন অসংগতিকে ভিন্নধর্মীভাবে গল্পের আকারে এক ক্যানভাসে সাজিয়েছি আমি। আশা করি, বইটি পাঠ করে পাঠকরাও রক্তজবাদের নিয়ে কৌতূহলী হয়ে উঠবেন।
চাকরি করছেন। লেখালেখির সময় বের করেন কিভাবে? আমার সব ব্যস্ততার মধ্যেও লেখা ছাড়া আমি এক মুহূর্তও ভাবতে পারি না । তা যেকোনো বিষয়ের ওপর লেখা হতে পারে। অফিসে কাজের ফাঁকে লিখি। বাসায় নানা কাজের ভিড়েও আমার মাথায় থাকে গল্পের নানা চরিত্র। ইচ্ছা হয় কেবলই লেখায় ডুবে থাকতে।
আপনি গল্প লিখেন বেশি। এর কারণ কী? সমাজের নানা ঘটনাকে লেখকের চোখ দিয়ে দেখার শ্রেষ্ঠ মাধ্যমই মনে হয় গল্প। গল্পের চরিত্রগুলোর সঙ্গেও হয় কথোপকথন। তাই বেশ লাগে গল্প লিখতে।
আপনার বাবা হুমায়ুন আজাদ ছিলেন বাংলাদেশের প্রধান প্রথাবিরোধী ও বহুমাত্রিক লেখক। আপনার লেখায় তাঁর কোনো প্রভাব আছে? লেখায় আমি একদম ভনিতা করতে পছন্দ করি না। বাবার মতোই স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড। তবে তুলনা জিনিসটাও আমার পছন্দ নয়। আর তাই বলছি, তাঁর লেখার মতো আমার লেখা নয়। তাঁর লেখার বিষয় আর আমার লেখার বিষয়ও বেশ ভিন্ন। আমি আসলে একটা ভিন্ন ঢংয়ে লিখতে চাই। এছাড়াও বলব তাঁকে ছাড়িয়ে যাওয়া তো কল্পনা মাত্র। তিনি যেসব বিষয়ে লিখেছেন আমি কেন তাঁর সময়, বর্তমান সময়ের অনেক লেখকই তা নিয়ে লিখতে সাহসও পান না।
আপনার বাবা হুমায়ুন আজাদের লেখায় আপনাদের উপস্থিতিও পাওয়া যায়। এ নিয়ে কী বলবেন? ‘ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না’ তাঁর লিখিত চমৎকার শিশুসাহিত্য যা তিনি আমাকে নিয়ে লিখেছেন। বলা যায় এই বইটি পড়েই আমি বাংলাদেশের গ্রাম তথা রাড়িখাল গ্রাম সম্পর্কে জানতে পারি। ‘মৌলির নীল জামাটা’ আমাকে নিয়ে তাঁর লেখা অসম্ভব একটি মিষ্টি ছড়া। ‘আব্বুকে মনে পড়ে’ বইটি আমার ছোটভাই অনন্যর জন্য লেখা। যেখানে একজন কিশোরের বাবা মুক্তিযুদ্ধে গিয়ে আর ফেরেননি।
আপনাকে ধন্যবাদ। আপনাকেও ধন্যবাদ।