খোলা আকাশের নিচে বাহুবলে নিহত চার শিশুর পরিবার

পাবেল খান চৌধুরী, হবিগঞ্জ থেকে
 | প্রকাশিত : ২৮ জানুয়ারি ২০১৭, ০৮:৫৪

হবিগঞ্জের বাহুবলের সুন্দ্রাটিকি গ্রামের আলোচিত নিহত চার শিশুর পরিবারকে ঘর করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। নতুন করে ঘর নির্মাণের কথা বলে স্থানীয় প্রশাসন পুরোনো ঘর ভেঙে দেয়। বেশ কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও একটি ঘরের কাজও এখনো শেষ হয়নি। বরাদ্দ কমের দোহায় দিয়ে উল্টো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজ খরচে ঘর নির্মাণের কথা বলে সরঞ্জমাদি গুটিয়ে নিয়েছেন। চার শিশুর পরিবার এখন খোলা আকাশের নিচে তাঁবু টানিয়ে থাকছেন। এ ব্যাপারে তারা প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদনও জানিয়েছেন।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে চার শিশু নির্মমভাবে খুন হয়। এ ঘটনায় সংসদের সংরক্ষিত আসনের সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি মানবিক আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিহত চার শিশুর পৈত্রিক ভিটায় চারটি বাড়ি ও নিহত শিশুদের স্মরণে তাদের নামে সুন্দ্রাটিকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ ও লাইব্রেরি নির্মাণের নির্দেশনা আসে।

পরে গত বছরের ২১ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) কবির বিন আনোয়ার সুন্দ্রাটিকি শহীদ স্মৃতি পাঠাগার নামে একটি টিনশেড ঘরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৮ লাখ ৬০ হাজার টাকার বরাদ্দ পেয়ে উপজেলা প্রশাসন শুধু পাঠাগারটি বাস্তবায়ন করে। তবে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া চারটি বাড়ি নির্মাণ আজও হয়নি।

চার পরিবারের সদস্যরা জানান, মাসছয়েক আগে বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম তাদের বাড়িতে এসে নিজে ফিতা নিয়ে বসতঘর মাপামাপি করেন। জানান, শিগগির প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার হিসেবে সরকারি খরচে ঘর নির্মাণ হবে। এজন্য তিনি পুরোনো ঘরগুলো ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী তারা বসতঘর ভেঙে খালি করে দিয়ে পার্শ্ববর্তী স্থানে তাঁবু টানিয়ে বসবাস করছেন। নতুন ঘরের আশায় শিশু ও বয়স্কদের নিয়ে অনেক কষ্টে বেশ কয়েক মাস ধরে তাঁবুতে কাটছে তাদের দিন। মাসদুয়েক আগে শুধু ইসমাইলের বাবা আব্দুল কাদিরের ভিটায় ১৫ ফুট লম্বা ও ১০ ফুট প্রস্ত একটি ঘরের আট ফুট উচ্চতার ইটের দেয়াল, দুটি লোহার দরজা ও জানালা তৈরি করা হয়েছে। অন্য তিনটি ঘরের এখনো কাজ শুরু হয়নি।

ভুক্তভোগী পরিবারগুলো জানায়, এ অবস্থায় নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তারা কোনো সদুত্তর পায়নি। পরে অসহ্য হয়ে চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি আবেদন করে পরিবারগুলো।

নিহত শিশু মনিরের পিতা আব্দাল মিয়া ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমাদের অমূল্য সম্পদকে হারিয়ে শোকগ্রস্ত হয়ে যখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত তখনই জানতে পারি প্রধানমন্ত্রী আমাদের এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠার জন্য চার পরিবারকে চারটি ঘর নির্মাণ করে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন তা বাস্তাবায়ন করতে টালবাহানা শুরু করেছে।’

নিহত শিশু ইসমাইলের পিতা আব্দুল কাদির ঢাকাটাইমসকে জানান, ছয় মাস ধরে কখনো খোলা জায়গায় আর কখনো অন্যের ঘরের বারান্দায় স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে মানবেতরভাবে বসবাস করছেন। এক পর্যায়ে তারা এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দ্বারস্থ হন। তিনি তখন জানান সরকারি বরাদ্দে পুরো ঘর হবে না। তাই নিজ খরচে কাঠ ও টিন লাগানোর কথা বলেন।

শিশু তাজেল মিয়ার পিতা আব্দুল আজিজ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘নির্বাহী অফিসার নিজে এসে আমাদের ঘরটি ভেঙে জায়গা খালি করে দেয়ার কথা বলেন। এখন বাড়ি ভেঙে জায়গা খালি করার পর বাজেটস্বল্পতার কথা বলছেন। আমরা কিছু দিই আর উনি কিছু দেবেন এনিয়ে মিলিয়ে ঘর তৈরি করার পরামর্শ দেন। পরে এ ব্যাপারে আমরা চার পরিবার এমপি কেয়া চৌধুরীকে অবগত করলে নির্বাহী অফিসার ক্ষিপ্ত হয়ে ইসমাইলের ভিটার ঘর তৈরির মালামালসহ সরঞ্জমাদি ঠিকাদার সেলিমকে দিয়ে উঠিয়ে নিয়ে যান। পরে ইউএনও-এর সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমাদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। বলেন, কেয়া চৌধুরী ঘর বানিয়ে দেবেন, আমার কাছে এসে লাভ নেই।’

আব্দুল আজিজ বলেন, ‘আমাদেরকে মামলা পরিচালনায় আর্থিক সহযোগিতা হিসেবে রশিদপুর চা-বাগানের উপ-মহাব্যবস্থাপকের সাথে আলোচনা করে স্লুইচ গেইটের কাছ থেকে বালু উত্তোলনের পর বিক্রির অনুমতি দেয়া হয়। সপ্তাহখানেক ধরে ইউএনও ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছেন ঠিকই, কিন্তু আমরা কোনো পাচ্ছি না। সেলিম নামের এক ঠিকাদারকে দিয়ে উনি বালু বিক্রি করে পুরো টাকাই নিজে নিয়ে যাচ্ছেন। বিষয়টি আমরা আঁচ করতে পেরে বাগানের উপ-মহব্যবস্থাপককে জানালে তিনি বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেন।’

এ ব্যাপারে বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এমপি মহোদয় চার শিশুর পরিবারকে ভালো করে চারটি ঘর করে দেয়ার উদ্যোগ নেন। প্রতি ঘরে দুই লাখ ১৫ হাজার টাকা করে বরাদ্দ চেয়ে তিনি ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেয় তাদেরকে টিনের ঘর করে দেয়ার। এজন্য ঘরপ্রতি ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এমপি সাহেব বলেন, এদেরকে টিনের ঘর না বিল্ডিং করে দেয়ার জন্য। পরে উনি আরও ৫০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দিয়েছেন, তা এখনো আসেনি। তাই উনি সিদ্ধান্ত দিয়েছেন নিচে পাকা করে উপরে টিন দিয়ে ঘর করার জন্য। সেই অনুযায়ী আমরা একটি ঘর তৈরি করেছি। বাকি ঘরগুলোর কাজ শুরু করবো।

উপজেলার ভাদেশ্বর ইউনিয়নের সুন্দ্রাটিকি গ্রামের আবদাল মিয়ার ছেলে মনির মিয়া (৭), আব্দুল আজিজের ছেলে তাজেল মিয়া (১০), ওয়াহিদ মিয়ার ছেলে জাকারিয়া আহমেদ শুভ (৯) ও আব্দুল কাদিরের ছেলে ইসমাইল (১১) গত ২০১৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বিকালে খেলার মাঠ থেকে ফেরার পথে নিখোঁজ হয়। গ্রাম্য পঞ্চায়েত বিরোধের জের ধরে একই গ্রামের আব্দুল আলী বাগাল ও তার লোকজন অপহরণ করে। এর পাঁচদিন পর ১৭ ফেব্রুয়ারি গ্রামের পাশের ইছাবিল নামক স্থানে মাটিচাপা অবস্থায় চার শিশুর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নির্মম এ ঘটনাটি দেশ-বিদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে।

(ঢাকাটাইমস/২৮জানুয়ারি/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

ফেসবুক আইডি ক্লোন করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, যুবক গ্রেপ্তার

ফরিদপুর প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পুলিশ সুপারের মতবিনিময়

পতেঙ্গায় ফিশিং বোটের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে ৪ জন দগ্ধ

চট্টগ্রামে ঈদকে সামনে রেখে জালনোট চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

বরিশালে নামাজের সময় মসজিদের এসি বিস্ফোরণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্রুতগতির লেনে যাত্রী নামানোর অপরাধে ৩৩ যানবাহনকে মামলা 

বরগুনা প্রেসক্লাব দখলের মামলায় ৭ জন কারাগারে  

পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে তাহিরপুরের শহীদ সিরাজ লেক

ঝিনাইদহে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু

ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :