আজিমপুরের সেই ‘জঙ্গি আস্তানায়’ কেউ থাকে না

আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০১৭, ১২:০৬ | প্রকাশিত : ২৯ জানুয়ারি ২০১৭, ০৮:২০

পুরান ঢাকার আজিমপুরের লালবাগ রোডের জঙ্গী আস্তানা হিসেবে আবিষ্কৃত ২০৯/৫ ঠিকানার সেই ফ্লাটটি এখনো সিলগালা করে রেখেছে পুলিশ। বাড়ির মালিক আলহাজ্ব কায়ছার মিয়া মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে গুরুতর অসুস্থ। আইনি জটিলতার ভয়ে মালিক পরিবারের পক্ষ থেকেও কেউ যোগাযোগ করেনা পুলিশের সঙ্গে।

তবে পুলিশ বলেছে, মামলার আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই ফ্ল্যাটটি তালা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে আদালতই সিদ্ধান্ত দেবে।

বৃহস্পতিবার সকালে পুরান ঢাকার লালবাগ রোডের ২০৯/৫ নম্বর বাড়ির গলির সামনে দেখা মিলল এক যুবকের। বাড়ির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা মাত্র তার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল। ভীত গলায় সে বলল-‘এইহান থেইক্যা চইলা যান নইলে ধরা খাইবেন’।

‘কেন ধরা খাব?’ পাল্টা প্রশ্ন করলে তিনি মন্তব্য করলেন-‘ আরে ভাই জানেন না! এইহানে জঙ্গী আস্তানা ছিল। পুলিশ এহনও যে কাউরে সন্দেহ করলে ধরে!’

সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কিছুটা সহজ হলেন যুবক। তিনি জানালেন, এখন আর এ বাড়িতে কেউ থাকেনা। বাড়ি মালিক কিংবা কেয়ারটেকার কোথায় জিজ্ঞাসা করলে তিনি কোন কথা না বলেই পাশের গলি দিয়ে চলে যান।

বাড়ির নিচের লোহার খাট তৈরি করে এমন একটি দোকানের কর্মচারী জুবায়ের হোসেন। জুবায়ের হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, এই বাড়ির মালিক বৃদ্ধ কায়ছার মিয়া এখন অসুস্থ। থাকেন আজিমপুর কবরস্থানের অদুরে কায়ছার সুইটমিটের দোকানের উপরের তিন তলায়। জঙ্গি আস্থানা আবিষ্কৃত হওয়ার পর থেকে কায়ছার মিয়া এই দোকানের উপরেই বাসা করে থাকেন। তিনি এ বাড়িরও মালিক। এছাড়াও আজিমপুর এলাকায় তার বেশ কয়েকটি বাড়ি রয়েছে।

জুবায়ের আরো বলেন, ‘ওই ঘটনার পর থেকে কেউ এই বাড়িতে ভাড়া নিতে আসেনা। এছাড়াও কেউ এই বাড়ির প্রসঙ্গে কথাও বলতে চায়না। অপরিচিত কারো সাথে কেউ কথা বলতে চায়না’।

পরে দুপুরের দিকে আজিমপুর রোডের বট তলার ৩৭/৫/বি নম্বর বাড়ির কায়ছার সুইটমিটের তৃতীয় তলায় কলিং বেল চাপলে মোবারক নামের এক মুরুব্বি ঘরের দরজার খোলেন। পরিচয় জানার পরে তিনি বলেন, ‘দেখেন ঘটনার পর পুলিশ সেই ফ্ল্যাটে তালা মেরে দিয়েছে। এখন তাই ভাড়া দিতে পারছিনা। কায়ছার সাহেব আমার আত্মীয় তিনি স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়ে পড়ে আছেন। ঠিকমত কাউকে চেনেন না কথাও ঠিকমত বলতে পারেন না। তাই আমি তাকে সাহায্য করতে থাকছি’।

জঙ্গি আস্তানা হিসেবে ব্যবহৃত বাড়িটি যখন ভাড়া দেয়া হয় তখন কি ভাড়াটিয়াদের জাতীয় পরিচয়পত্রসহ অন্যান্য কাগজপত্র চেক করে সংশ্লিষ্ট থানায় তথ্য সরবরাহ করেছিলেন?

এ প্রশ্নের জবাবে মোবারক বলেন, ‘সকল প্রকার নিয়ম মেনেই বাড়ি ভাড়া দেয়া হয়েছিল। তাইতো আল্লাহ রক্ষা করেছেন। নইলে এখন জেলে থাকা লাগত। নিয়ম মেনে বাড়ি ভাড়া দেয়ার তথ্য তখন সকল সংবাদ মাধ্যমে এসেছিল’।

২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন পুলিশের অভিযানে নিহত জঙ্গি তানভীর কাদেরী। ওই ভবনের পাশের ভবনে দারুল হুদা ইন্টারন্যাশনাল ক্যাডেট মাদ্রাসা নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিটের সহকারী কমিশনার আহসানুল হক এখন মামলাটি তদারকি করছেন। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ জঙ্গি বিরোধী অভিযানের পর থেকে বাড়িটি তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এখনও এই মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়নি। এ ব্যাপারে ব্যাপারে আদালতই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন’।

২০১৬ সালের ১১ সেপ্টেম্বর পুরান ঢাকার লালবাগ রোডের ২০৯/৫ নম্বর বাড়িতে একটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় পুলিশের বিশেষায়িত টিম কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিট (সিটি)। অভিযান পরিচালনার সময় নিজের গলায় ছুরি চালিয়ে আত্মহত্যা করে জঙ্গি তানভীর কাদেরী। সে নব্য জেএমবির মাস্টার মাইন্ড নারায়ণগঞ্জে পুলিশের অভিযানে নিহত তামিম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ।

আজিমপুরের এই বাড়ি থেকে বহুল আলোচিত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জঙ্গি জাহিদের স্ত্রীসহ তিন জঙ্গীকে আটক করে পুলিশ। এদের মধ্যে শারমিন ও রাহেলা নামে দুই জঙ্গি সদস্য নিজেদের গলায় ছুরি চালিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। অভিযান শেষে পুলিশ ওই ফ্ল্যাট থেকে মেজর জাহিদের দুই সন্তান জুনায়েরা ও মারিয়মসহ তিন শিশুকে উদ্ধার করে।

ঢাকাটাইমস/২৯ জানুয়ারি/এএ/এসএএফ

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :