ঘোর কাটছে না ইমামের মায়ের
রিকশা ভ্যান চালিয়ে সংসার চালান ইমাম শেখ। অন্য দিনের মতো শুক্রবারও তার শুরুটা ছিল একই রকম। কিন্তু মুহূর্তেই পাল্টে গেলো সব। দুনিয়াটা স্বপ্নের মত হয়ে গেলো তার। ডাক পড়লো, বলা হলো প্রধানমন্ত্রী উঠবেন। শুনেই ছুটে গেলেন ইমাম। এরপর তো হয়ে গেলো মহাকাণ্ড।
ইমামের ভ্যানে চড়া প্রধানমন্ত্রীর ছবি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে তোলপাড় সারাদেশে। মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়া খবরটি পৌঁছে গেলো ইমামের মা শাহনাজ বেগমের কাছেও। প্রথমে তার বিশ্বাস হয়নি। পরে তার ছেলের ভ্যানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাস্যোজ্জ্বল ছবি দেখেন তিনি। এরপর আর কীভাবে অবিশ্বাস হয়? দুদিন যেতে না যেতেই আবার ছেলের জন্য আসলেন বড় বড় অফিসার। দামী গাড়িতে করে নিয়ে গেলেন চাকরি দিতে। ইমামের মায়ের বিস্ময়ের সীমারও একটি সীমা ছিল।
গত শুক্রবার ইমামের ভ্যানে চড়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। টাকা পয়সার অভাবে পড়াশোনা করতে না পারা ইমামের বাসনা ছিল সরকারি চাকরি করবেন, সংসারের হাল ধরবেন।
ইচ্ছে না থাকলেও সংসারের হাল ধরতে ভ্যানের প্যাডেল চালাতে হয়েছিল ইমামকে। তাও যখন তিনি পঞ্চম শ্রেণিতে পড়েন। তার বাবা ততদিকে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যান।
ধীরে ধীরে সময় গড়ায়। ইমামের ভ্যানে লাগে মোটর, কমে আসে প্যাডেল চালানোর কষ্ট। ১৭ বছরের একটি কিশোরের কাঁধে তখন সংসারের গুরুদায়িত্ব। কিন্তু এই ভ্যানই আবার পাল্টে দিলো তার ভাগ্য। চাপা দেয়া সরকারি চাকরির স্বপ্ন বাস্তব হয়ে গেলো অনেকটা অবিশ্বাস্যভাবেই।
সবই নিজের চোখে দেখছেন, কিন্তু বিস্ময়ের ঘোর এখনও কাটছে না ইমামের মা শাহনাজ বেগমের। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘প্রথম যেদিন ও এসে আমারে কয় যে নেত্রী (টুঙ্গীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রীকে সম্মান করে ও ভালবেসে সকলেই নেত্রী ডাকে) ওর ভ্যানে ওঠছে তা আমার বিশ্বাস হয় নাই। পরে ছবি দেখছি।’
শাহনাজ বেগম বলেন, ‘আইজ বাহিনীর লোকে আইসা নিয়ে গেছে ওরে আর ভ্যানটারে। কি যে ভাল লাগছে। দেশের নেত্রীরে আমার ছাওয়াল উঠাইছে ভ্যানে। আমরা গরিব, আমার ছাওয়ালডা আমাগে কষ্ট কইরা খাওয়াইছে।’
এ সময় পাশে দাঁড়ানো ইমামের বড় ভাই সাদ্দাম বলেন, ‘আমার ভাডি (ছোটভাই) মাটির মানুষ। আল্লাহ নেত্রীর উছিলায় ওর দিকে চোখ তুলে তাকাইছে। গ্রামের মুরব্বি ও বয়স্করা ইমামদের ভাঙাচোরা ঘরে ভিড় করেছে।’
স্থানীয় একজন বলেন, ইমামের প্রতি ওর মা বাবার দোয়া আছে। ছোটকাল থেকে পরিবারের জন্য সে অনেক কষ্ট করেছে।
ইমামের খেলার সাথী একজন বলেন, ‘বাবা-মাকে কামাই করে খাওয়াবে বলে ইমাম পড়াশোনা করতে পারে নাই। ওর বাবা অসুস্থ। আজকে ওর একটা ব্যবস্থা হওয়ায় ওর বাপ মায়ের মত আমরাও খুশি।’
ঢাকাটাইমস/২৯জানুয়ারি/ডব্লিউবি
মন্তব্য করুন