বিদ্যানন্দিনী শেখ হাসিনা

ইমতিয়াজ বাপ্পী
| আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০১৭, ১৮:০৫ | প্রকাশিত : ২৯ জানুয়ারি ২০১৭, ১৭:৩৯

নেপোলিয়ান বলেছিলেন, ‘আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি উপহার দেবো’। নেপোলিয়ান আজ থেকে কয়েক শত বছর পূর্বে সবচেয়ে ক্ষমতাবান শাসক হয়ে অনুধাবন করেছেন শিক্ষার গুরুত্ব। ক্ষমতায় থাকলে সবাই নেপোলিয়ান হবে কিংবা নেপোলিয়ানের মত চিন্তা করবে ব্যাপারটা তা নয়। এ ধরণের দূরদর্শী চিন্তার জন্য প্রয়োজন প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা এবং গভীর জ্ঞানের উৎস ভাণ্ডার।

বাঙালি ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সূচনা করে, যা পরবর্তীতে ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনের জন্ম দেয়। ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন এর পরিণতিতে সাফল্য আসে ৬৬ এর ছয় দফা আন্দোলনে, ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান, ৭০ এর নির্বাচন এবং ৭১ এর মুক্তিসংগ্রামে। যার বিনিময়ে আজকের স্বাধীন দেশ।

৫২ এর ভাষা আন্দোলন এবং ৬২ এর শিক্ষা আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগের সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘বাবারা একটু লেখাপড়া শিখ। যতই জিন্দাবাদ আর মুর্দাবাদ কর ঠিকমত লেখাপড়া না শিখলে কোন লাভ নেই। আর লেখাপড়া শিখে যে সময়টুকো থাকে বাপ-মাকে সাহায্য কর।’

বঙ্গবন্ধু এভাবেই শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে জাতি গড়ার কাজে মনোনিবেশ করেন, কিন্তু পাকিস্তানি ভাবাদর্শে বিশ্বাসী কুলাঙ্গাররা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলে সে স্বপ্ন থমকে যায়। পরবর্তীতে মুশতাক, জিয়া, সায়েম, এরশাদ, খালেদার সময়ে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা থমকে যায়।

শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অস্ত্রের ঝনঝনানি ছিল যেন বাস্তবতা। এই আতঙ্ক থেকে জাতিকে মুক্ত করতে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। নানা চড়াই উতরাই পেরিয়ে ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। তারপর দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে ক্ষুধা দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে তিনি দেশ পরিচালনা করেন। কিন্তু ২০০১ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে হারিয়ে দেওয়া হল, বাংলাদেশ পরিণত হলো একটি মিনি পাকিস্তানে।

তারপর এলো ২০০৮ সাল, বিপুল ভোটে জয়লাভ করে দ্বিতীয়বারের মত প্রধানমন্ত্রী হলেন শেখ হাসিনা। শুরু হলো নানামুখী উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড। শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়। ২০০৮ সালে শেখ হাসিনা দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শতভাগ শিক্ষার্থী ভর্তির সফলতা অর্জন করে, যা এমডিজির অন্যতম প্রধান শর্ত ছিল। এমডিজি অর্জনে বাংলাদেশ প্রায় শতভাগ সফলতা অর্জন করে।

মাধ্যমিকে ২০০৮ সালে ভর্তির হার ছিল ৫১ শতাংশ, বর্তমানে মাধ্যমিকে ভর্তির হার ৬২ শতাংশ। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে ভর্তির হার ২০০৮ সালে ছিল ৩৩ শতাংশ, যা এখন ৪৪ শতাংশ। ২০১০ সাল থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত বিনামূল্যে বই বিতরণ করা হচ্ছে। যা বই উৎসব নামে পরিচিত। গত ৬ বছরে প্রায় ১৩০ কোটি বই বিতরণ করা হয়েছে বিনামূল্যে, যা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ৬০ ভাগ নারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে শিক্ষা খাতে সরকারের বাজেট ১৫.৬৭%। যা আগের বছরের তুলনায় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা। গত ৮ বছরে সাড়ে ২৬ হাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করা হয়েছে এবং এতে কর্মরত এক লাখ ২৬ হাজার শিক্ষকদের চাকরি বিধিমালার আলোকে সরকারি করা হয়েছে।

বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তুক বিতরণ, আধুনিক যুগোপযোগী সিলেবাস প্রণয়ন, ছাত্র-ছাত্রীকে উপবৃত্তি প্রদান, শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড গঠন, শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, মাল্টিমিডিয়া ক্লাশরুম, কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন, সৃজনশীল পদ্ধতির প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, পি এস সি, জে এস সি পরীক্ষা পদ্ধতি প্রণয়নসহ ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হয়েছে। সকল বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য আই সি টি বিষয় পড়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অনলাইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে এসএসসি, এইচএসসিও সমমানের পরীক্ষার ফল, শিক্ষক নিয়োগ ও নিবন্ধন পরীক্ষার ফলাফল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হচ্ছে। যার কোন সুফলই বিগত কোন সরকারের সময় বিদ্যমান ছিল না।

‘আইসিটি ফর এডুকেশন ইন সেকেন্ডারি অ্যান্ড হায়ার সেকেন্ডারি লেভেল’ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০ হাজার পাঁচশটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে। ডিজিটাল কনটেন্ট বিষয়ে ১৫শ শিক্ষক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান এবং শিক্ষা কর্মকর্তাকে ওরিয়েন্টেশন প্রদান করা হয়েছে। তিন হাজার ১৭২ টি স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ ও মাদ্রাসায় কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তুক বোর্ডে ডাইনামিক ওয়েবসাইট তৈরি করে মাধ্যমিক স্তরে ৫০ টি বাংলা ভার্সন, ২৬ টি ইংরেজি ভার্শন ও প্রাথমিক স্তরে ৩৩ টি পাঠ্যপুস্তুক আপলোড করা হয়েছে।

মাদ্রাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী করা হয়েছে। প্রথিতযশা ইতিহাসবিদদের নিয়ে পাঠ্যপুস্তকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংযোজন করা হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টীর নিজস্ব ভাষাতেও বই ছাপানো হয়েছে, যার মাধ্যমে শেখ হাসিনা সংবিধানের ২৩(ক) অনুচ্ছেদের উপজাতীয় সংস্কৃতি রক্ষার্থে তাঁর সরকারের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

আমাদের সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির ১৭নং অনুচ্ছেদে সবার জন্য অবৈতনিক এবং বাধ্যতামূলক শিক্ষার কথা লিপিবদ্ধ আছে। বিগত সময়ে বহু দল নানা সরকার প্রধান দেশ চালিয়েছে কিন্তু তাঁদের কেউ সংবিধানের এই অনুচ্ছেদকে বাস্তবায়িত করতে তেমন কোন উদ্যোগ নেয়নি।

২০০৬ সালে বিএনপি জামাত ক্ষমতায় থাকার সময় স্বাক্ষরতার হার ছিল প্রায় ৫২ শতাংশ, বর্তমানে তা প্রায় ৭১ শতাংশ। এ যেন নেপোলিয়ানের উক্তির মতই সত্য! বর্তমান সময়ে শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি অস্থিরতা নেই বললেই চলে। ২০০৯ সালের যা ছিল চোখে পড়ার মত।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এক সময় ছিল সেশন জটের আবাসভূমি, সেখানে এখন সেশন জট বিলুপ্ত প্রায়। প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষা, ক্লাস সব কিছুই সময়মত নেওয়া হচ্ছে। বিসিএস এর দীর্ঘসূত্রতা কমে এসেছে, এখন এক বছরে দুটো বিসিএস হয়, কিন্তু খালেদা জিয়া জামায়াত-বিএনপি সরকারের সময় পাঁচ বছরে হয় একটি বিসিএস।

দেশের মানুষ এখন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে শিখেছে, কারণ সবাই এখন উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত। গ্রামীণ কৃষক মোবাইল প্রযুক্তি এবং বিভিন্ন এপসের মাধ্যমে ফসলের অপকারী পোকামাকড় দমনের টিপস পাচ্ছে ‘হেল্প লাইন’ ব্যবহার করে। বর্তমানে দেশে ১৩ কোটি মানুষের মোবাইল সিম আছে এবং পাঁচ কোটির বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এসবই সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র একজন মানুষের স্বদিচ্ছা এবং নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে। তিনি হলেন বিদ্যানন্দিনী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কার্পণ্য করেনি নেত্রীর মুকুটে বিদ্যানন্দিনীর মত পালক যুক্ত করতে।

লেখক: সহসভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :