সার্চ কমিটিকে যেসব পরামর্শ দিলেন বিশিষ্টজনেরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ৩০ জানুয়ারি ২০১৭, ২০:২৮ | প্রকাশিত : ৩০ জানুয়ারি ২০১৭, ২০:২৫

নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করতে গঠন করা সার্চ কমিটি বিশিষ্ট ১২ নাগরিকের সঙ্গে বৈঠক করেছে। এই বৈঠকে বিশিষ্টজনেরা তাদের বিভিন্ন সুপারিশ ও পরামর্শ দিয়েছেন। প্রায় দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে বিশিষ্টজনেরা গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সার্চ কমিটিকে তারা কী পরামর্শ দিয়েছেন এ ব্যাপারে জানিয়েছেন।

সোমবার বিকাল চারটায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে বিশিষ্ট ১২ নাগরিকের সঙ্গে বৈঠকে বসে সার্চ কমিটি দুই ঘণ্টার বেশি সময় তারা বৈঠক করেন।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালন করা মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম। তিনি জানান, বিশিষ্ট নাগরিকরা যেসব সুপারিশ ও পরামর্শ দিয়েছেন তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে সার্চ কমিটি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, বিশিষ্ট ব্যক্তিরা যে পরামর্শ দিয়েছেন এর সারমর্ম হলো নির্বাচন কমিশনার পদে যারা আসবেন তারা যেন সৎ, যোগ্য, নির্দলীয় নিরেপক্ষ এবং একটা ভালো টিম হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, তারা নাম প্রস্তাবের জন্য আজ এখানে আসেননি। এসেছেন কোন প্রক্রিয়ায় নির্বাচন নিয়োগ হবে এবং তাদের কোন কোন যোগ্যতা থাকতে পারে এমন পরামর্শ দিতে।

শফিউল আলম বলেন, কোন প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে হতে পারে এমন পরামর্শ দিয়েছেন দেশের এ ১২ জন বিশিষ্ট নাগরিক। তাদের বক্তব্য আমরা রেকর্ড করেছি। তিনি জানান, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টায় আরও পাঁচজন বিশিষ্ট ব্যক্তির সাথে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সার্চ কমিটি। তারা হলেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. আবু হেনা, বিশিষ্ট আইনজীবী রোকন উদ্দিন মাহমুদ, সমকাল সম্পাদক গোলাম সরওয়ার, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.)আব্দুর রশিদ।

বিশিষ্টজনেরা যেসব পরামর্শ দিলেন

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বলেন, ‘নাগরিক কমিটির প্রতিনিধি হিসেবেই আজকে আমরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলাম। সার্চ কমিটির একটি কর্মপন্থা রয়েছে সেই অনুযায়ীই তারা কাজ করেবেন। কারা নির্বাচন কমিশনারে দায়িত্ব পালন করবেন তাদের নামের প্রস্তাব দেয়ার সম্পূর্ণ এখতিয়ার সার্চ কমিটির, আমাদের নয়।’

সার্চ কমিটি নিয়ে বিভিন্ন মহলের আস্থার সংকট রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে সুলতানা কামাল বলেন, ‘আস্থা নিয়েও একটা বিভাজন রয়েছে, কারণ কিছু মানুষের আস্থার সংকট রয়েছে, আবার কিছু মানুষের তা নেই। শুধু আস্থার সংকটের ওপর আমরা থাকি তাহলে সামনে চলতে পারবো না। তবে এতদিন ধরে যে আস্থার সংকটের কথা বলা হয়েছে তাও প্রশমিত হয়েছে। যারা সার্চ কমিটিতে আছেন তারা আমাদের সমাজের সন্মানিত ব্যক্তি। তাদের ওপর আস্থা রাখাও জনগণের নৈতিক দায়িত্ব বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি।’

সুলতানা কামাল বলেন, ‘নির্বাচন ভণ্ডুল কিন্তু নির্বাচন কমিশনও করে না কিংবা সার্চ কমিটিও করবে না। নির্বাচন অস্বচ্ছতার পেছনে দায়ী রাজনৈতিক দল। ক্ষমতাসীনরা যে সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন তা ভণ্ডুল করতে পারবে না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য আমরা অনেক পরামর্শ দিয়েছি। এর মধ্যে অন্যতম হলো যাদের মধ্যে স্বাধীনতার মূল্যবোধ রয়েছে, দেশের জন্য ত্যাগের নজির রয়েছে এবং দেশের জনগণ তাদের গ্রহণযোগ্য মনে করে। এমন ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাব করার জন্য আমরা সার্চ কমিটিকে পরামর্শ দিয়েছি।’

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা বলেন, ‘আমরা সার্চ কমিটিকে বলেছি তারা যেন এমন একটি কমিশনের প্রস্তাব করে যেটা মানুষের মধ্যে প্রাথমিক আস্থার সৃষ্টি করে। শুরুতেই মানুষের মাঝে অনাস্থা চলে এলে সেই কমিশনের পক্ষে কাজ করা কঠিন হয়ে যাবে।’

অনাস্থা সৃষ্টির কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘যারা অতীতে রাজনৈতিক সম্পৃক্ত ছিল এমন লোকদের নিয়োগ দিলেই মানুষের মধ্যে একটা অনাস্থা সৃষ্টি হয়। কারণ আমাদের দেশের রাজনীতি একটি বিভাজিত রাজনীতি।’

শামসুল হুদা বলেন, ‘সব মানুষেরই রাজনৈতিক আদর্শ থাকে। কিন্তু কমিশনার পদে নিয়োগকৃত এমন হতে হবে তারা যেন ছাত্রজীবন এবং কর্মজীবনে কোনো ধরনের রাজনীতির সাথে জড়িত এবং পদপদবিতে ছিলেন না। তাহলেই আমরা মানুষের মাঝে আস্থা আসবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ‘বৈঠকে আমাদের কেউ কেউ আইন প্রণয়নের কথা বলেছেন। আমরা বলেছি আইন প্রণয়নের সুযোগ এখনো রয়েছে। নির্বাচন কমিশন এক মাস কিংবা দুই মাস শূন্য থাকলে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ দেশে এখন কোনো নির্বাচন নেই। তাই আইন করে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা ভালো হবে।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘সার্চ কমিটি রাজনৈতিক দলের কাছে নির্বাচন কমিশনার নামে প্রস্তাব যেভাবে চেয়েছে আমি মনে করি নাগরিক সমাজের জন্য একই সুবিধা রাখা দরকার রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘যোগ্যতা অনুযায়ী বাছাইকৃত ব্যক্তিদের নাম জনসম্মুখে প্রকাশ করে তাদের ওপর জনমত যাচাই করা দরকার আছে বলে আমি মনে করি।’

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করার জন্য আমরা সার্চ কমিটিকে পরামর্শ দিয়েছি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এস এম ফায়েজ সার্চ কমিটিকে কী পরামর্শ দিয়েছেন এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের সঙ্গে কিছু বলতে রাজি হননি।

বিশিষ্ট নাগরিকদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক দুই নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসেন ও সাখাওয়াত হোসেন, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা এবং অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আবদুর রশিদ।

(ঢাকাটাইমস/৩০জানুয়ারি/টিএ/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

ট্রেনে ঈদযাত্রা: ৮ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি শুরু

ঢাকায় কর দিয়ে ২৬৮০ বিয়ে 

সংরক্ষিত আসনের এমপিদের মধ্যেও সংখ্যায় এগিয়ে ব্যবসায়ীরা: সুজন

মানবাধিকার ও ভোক্তা অধিকার রক্ষায় গণমাধ্যমের ভূমিকা জরুরি: ড. কামাল উদ্দিন

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে রেলকে গড়ে তুলতে হবে: রেলমন্ত্রী

ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার

জিম্মি নাবিকদের মুক্তির আলোচনা অনেকদূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ডিএনসিসি কার্যালয় সরানোর মধ্য দিয়ে কারওয়ান বাজার স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু 

বিএসএমএমইউ উপাচার্যের দায়িত্ব নিলেন দীন মোহাম্মদ, বললেন ‘কোনো অন্যায় আবদার শুনব না’

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :