বার্সায় এমএসএনের বিকল্প হতে পারেন কারা?

মিনহাজুল ইসলাম
 | প্রকাশিত : ৩১ জানুয়ারি ২০১৭, ১২:৩৫

সব যুগেরই শেষ আছে। ফুটবল দুনিয়াও এর বাইরে নয়। যত জনপ্রিয়ই হোন, নয়ত যত লম্বা হোক ফুটবলারের ক্যারিয়ার, একসময় বিদায় জানাতে হয় প্রিয় সবুজ মাঠকে। তুলে রাখতে হয় বুট জোড়া। সব কিংবদন্তি বয়সের কাছে পরাজিত হয়ে বিদায় নিয়েছেন। কেউ কেউ পড়ন্ত ক্যারিয়ারে এসে ছেড়েছেন জাতীয় দল।

নতুন দিনের তারকার আগমনে নামি ক্লাব ছেড়ে কেউ আবার চলে যান অখ্যাত, অজানা কোনো ক্লাবে। ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার কথাই ধরুন। এই তো কিছুদিন আগেই অবসরে গেলেন কার্লোস পুওল এবং জাভি হারনান্দেজ। দুজনেই দলটির এই শতকের সব সোনালি সাফল্যের অন্যতম কারিগর।

এখন সারা বিশ্বের মিলিয়ন মিলিয়ন বার্সা ফ্যানের মধ্যে যে ভয়টি জেঁকে বসেছে, তা হলো এরপর কারা বিদায় নিতে চলেছেন কাতালান শিবির থেকে। যে নামগুলো আসতে যাচ্ছে তা হয়ত বার্সা ফ্যানরা ভুলেও মুখে আনতে চাইবেন না। নামগুলো যে তারা প্রতিদিন জপেন মেসি, সুয়ারেজ, নেইমার! যা সংক্ষেপে হয়ে গেছেÑ এমএসএন।

এই তিন লাতিন ত্রয়ী প্রতি সপ্তাহে হোম গ্রাউন্ড ন্যু ক্যাম্প কাঁপাতে মাঠে নেমে পড়েন। দাপিয়ে বেড়ান চির প্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের বার্নাব্যু স্টেডিয়াম। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এলেই ধরাশায়ী করেন সানসিরো, স্টামফোর্ড ব্রিজ, ওল্ড ট্র্যাফোর্ড কিংবা ইত্তিহাদ এরেনার স্বাগতিকদের। এই ত্রয়ীর বাইরেও কিন্তু আরেক ত্রাতা আছেন বার্সায়। তিনিও কোনো অংশে কম যান না। ইতিহাসের অন্যতম সেরা ড্রিবলার ইনিয়েস্তার কথা বলছি। তবে তার শূন্যতা পূরণে অনেকেই তৈরি আছেন বার্সার ইয়ুথ একাডেমি লা মাসিয়ায়।

কিন্তু কাতালানদের ভয়, এই ‘এমএসএন’র বিকল্প কী মিলবে? তার জন্য লক্ষ্য করতে হবে সমসাময়িক সব উঠতি তারকার স্কিল ও ফর্ম। আবার বিবেচনায় নিতে হবে তাদের মধ্যে কার কার ওপর চোখ আছে বার্সেলোনার কর্তাদের। সামনের দিনে ক্যাম্প ন্যু কারা মাতাবেন, চলুন দেখি সেই সম্ভাব্য কিছু নাম।

নেইমার নাম্বার ওয়ান- ফিলিপ্পে কৌতিনহো

‘লাইক ফর লাইক’র মতো নেইমারের একদম সরাসরি বিকল্প হতে পারেন তিনি। এই দুই ব্রাজিলিয়ানই ওয়ান-অন-ওয়ান সিচুয়েশনে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দেন। দুজনই গোল করতে ও একের পর এক আক্রমণ শানাতে সিদ্ধহস্ত। আবার সমবয়সী এই দুজনই ব্রাজিল জাতীয় দলের আক্রমণভাগে প্লে-মেকারের ভূমিকা পালন করেন।

বার্সা টিম ম্যানেজমেন্টেরও কৌতিনহোর ব্যাপারে আগ্রহ এখন আর গোপন কোনো ব্যাপার নয়। কিন্তু কথা হচ্ছে, কৌতিনহো কিছুদিন আগেই বর্তমান ক্লাব লিভারপুলের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছেন। ফলে নেইমারের সঙ্গে তাকে খুব শিগগিরই এক ক্লাবে দেখতে চাওয়ার আশা করা বোধোহয় ঠিক হবে না। একেবারেই আকাশ কুসুম কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়। তবে হ্যাঁ, বার্সা নাম্বার-ইলেভেন যদি সত্যিই কখনো ক্যাটালান শিবির ছাড়েন তবে কৌটিনহোই হতে পারেন তার অন্যতম রিপ্লেসমেন্ট।

নেইমার নাম্বার টু- ইয়ানিক ক্যারাসকো

এখন বার্সা যদি চায় নেইমারের ওই কাট-ইন, মুহুর্মুহু ড্রিবলিং আর শুটিং ক্ষমতা যা সে দলকে প্রতিনিয়ত উপহার দেয়, তবে তারা বিকল্প খুঁজতে পারে লা লিগারই আরেক জায়ান্ট বনে যাওয়া অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদের তরুণ তারকা ইয়ানিক ক্যারাসকোতে। ক্যারাসকো দিন দিন অ্যাতলেটিকোতে উন্নতি করেই চলেছেন। এই মৌসুমে এখন পর্যন্ত করেছেন ছয় গোল। রেখেছেন দলের প্রায় সব জয়েই দারুণ অবদান। বিশেষ করে দিয়েগো সিমিওনের কাউন্টার অ্যাটাকিং টিমে তার হঠাৎ করেই লেফট উইংয়ের এক প্রান্ত দিয়ে দুর্দমনীয়ভাবে উঠে আসা নেইমারের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়। বরং কোচের ওভার ডিফেন্সিভ ট্যাকটিকসের কারণে দলে ক্যারাসকোকে মাঝেমধ্যেই ফিকে হয়ে যেতে হয়। বার্সার অল আউট টিমে জায়গা হলে তার বল নিয়ে কারুকার্য আরও বেশি করে ওঠে আসবে এ কথা বলাই যায়। এক্ষেত্রে অবশ্য পর্তুগিজ ক্লাব এএস মোনাকোর লেফট উইঙ্গার থমাস লেমারও আছেন বার্সার শর্টলিস্টে।

লুইস সুয়ারেজ নাম্বার ওয়ান- পিয়েরে এমেরিক ওবামেয়াং

আপনি কিভাবে বিশ্বের একনম্বর নাম্বার-নাইনকে পরিবর্তন করবেন? কঠিন প্রশ্ন। অথচ উত্তর সহজ। অবশ্যই সেটা হওয়া উচিত তাকে দিয়ে যে হতে পারে পরবর্তী বেস্ট নাম্বার-নাইন। কথা হচ্ছে, জার্মান ক্লাব বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডের গোল ম্যাশিন ওবামেয়াংকে নিয়ে। সুয়ারেজের সুনিপুণ বিকল্প খুঁজতে গেলে বলতে হবে ওবামেয়াংই তার স্থান পূরণ করতে পারবে দক্ষতার সঙ্গে।

এই মৌসুমের পরিসংখ্যান বলে, এই ফরাসি এবার যেকোনো স্ট্রাইকারের চেয়ে বেশি ক্লিনিক্যাল ছিলেন। হাফ চান্স খুঁজে নিতেও তিনি ওস্তাদ। এক ম্যাচে চার গোলও দিয়েছেন এবারের জার্মান লিগে। ২৬ ম্যাচে সবুজ মাঠের শেষে থাকা গোলবারে বল জড়িয়েছেন ২৩ বার। বাতাসে তিনি সুয়ারেজের চেয়ে অনেকগুণ কার্যকর। সমস্যাটা হচ্ছে, বার্সার তার ব্যাপারে আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও পিয়েরের ইচ্ছা মাদ্রিদে নাম লেখানোর!

সুয়ারেজ নাম্বার টু- আন্দ্রে বেলোত্তি

আশ্চর্যজনকভাবে টপ লেভেলের জাত স্ট্রাইকারের বড্ড অভাব এখন ইউরোপজুড়েই! যেখানে সব বড় বড় দলই তাদের উইঙ্গারকে খেলিয়ে দিচ্ছে ফরোয়ার্ড হিসেবে। সেখানে ইতালিয়ান মধ্যম সারির ক্লাব তরিনোর বেলোত্তিও একই ধাঁচের। খেলতে পারেন আক্রমণভাগের অনেক পজিশনেই।

কঠোর পরিশ্রমী এই সুযোগ সন্ধানী গোলে শুট নিতে পারেন সহসাই। এই ইতালিয়ান এরই মধ্যে ইউরোপের সবচেয়ে রক্ষণাত্মক লিগে গোল করেছেন ১৬টি। এখন দেখার বিষয় হচ্ছে, বার্সা তাকে কিনতে চাইলে তার বর্তমান ক্লাব সেই আগ্রহে সাড়া দেয় কি না।

এছাড়াও আর্জেন্টাইন সেনসেশন এবং ইন্টার মিলান কাপ্তান মাউরো ইকারদিও আছেন বার্সা ম্যানেজমেন্টের রাডারে।

মেসি নাম্বার ওয়ান- অ্যান্টোনিও গ্রিজম্যান

একই সপ্তাহে আর্জেন্টিনার হয়ে ৩ গোল, বার্সেলোনার হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ৫ গোল, লা লিগায় ২ গোল, সব মিলিয়ে তিন ম্যাচে তিনটি ভিন্ন প্রতিযোগিতায় ১০ গোল করা মেসির মতো অতিমানব ইউরোপিয়ান লিগে খেলেনি এখনো। লিওনেল মেসি অবসরে যাক, স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করুক কিংবা অন্য কোনো ইউরোপিয়ান জায়ান্টের সঙ্গে নাম লেখাক, তার যোগ্য উত্তরসূরি মর্তে এখনো আসছে কি না এ নিয়ে ঘোর সন্দেহ আছে ফুটবলবোদ্ধাদের মাঝে।

তারপরও মন্দের ভালো হিসেবে বার্সা মূল একাদশে মেসির ছায়াসম ত্রাস নিয়ে আসতে পারেন এমন যে কয়জন আছেন তাদের লিস্ট করা হলে আসবেই অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ তারকা অ্যান্টোনিও গ্রিজম্যানের নাম। গ্রিজম্যান এমন একজন অলরাউন্ডার যিনি আক্রমণভাগের তিন স্পটেই খেলে আসতে পারেন স্বচ্ছন্দে। বাঁ পায়ের এই ফরাসি সেনসেশন যেমন গোল করতে ওস্তাদ তেমনি পারদর্শী এসিস্ট করতে। ম্যাচের নব্বই মিনিটের যেকোনো সময় গোলের সুবর্ণ সুযোগ তৈরিতে তার জুড়ি নেই দলে।

এছাড়াও লা লিগার প্রতিটি দলের সঙ্গে খেলার অভিজ্ঞতা তো তার আছেই। গ্রিজম্যানকে দলে ভেড়াতে চাইলে বার্সাকে চড়া দাম গুনতে হবে এটা খুব সহজেই অনুমেয়। তবে প্রধান অন্তরায় সম্ভবত বার্সা অ্যাটলেটিকো এখন রাইভাল টিম লা লিগার। অবশ্য বার্সাভক্তদের জন্য আশার কথা হচ্ছে রাইভাল হওয়া সত্ত্বেও ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা এবং অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের মধ্যে এর আগেও চুক্তি হয়েছে। দ্রুতগতির যেকোনো রক্ষণভাগের বিপক্ষে স্কিলড, ডি-বক্সের যেকোনো প্রান্ত থেকে শুট করতে ওস্তাদ ২০১৬ সালে ফিফার বিশ্বের তৃতীয় বর্ষসেরা ফুটবলার নির্বাচিত হওয়া এই ফরোয়ার্ড বার্সায় গেলে নিজেকে মেলে ধরতে পারবেন স্বমহিমায় এমনটা বিশ্বাস করেন চির প্রতিদ্বন্দ্বী মাদ্রিদ সমর্থকরাও।

লিওনেল মেসি নাম্বার টু- পাবলো দিবালা

আবারো বলে নেওয়া দরকার লিওনেল মেসিকে পরিবর্তন বা আরেকজন লিওনেল মেসি পাওয়া সম্ভব নয়। সদৃশ্য কিংবদন্তি ফ্রেন্স পুসকাস, ইয়োহান ক্রুইফ, পেলে কিংবা ম্যারাডোনা ফুটবল মাঠ ছেড়ে যাওয়ার পর যে ফাঁকা স্থান রেখে গিয়েছিলেন তাদের নিজ নিজ ক্লাব এবং জাতীয় দলে, ঠিক তেমনটিই রেখে যাবেন লিওনেল আন্দ্রোস মেসি। অবসর নেওয়ার পর তার বদলি খোঁজার পূর্বে দলের ট্যাকটিকস থেকে শুরু করে সব কিছুতেই আমূল পরিবর্তন আনতে বাধ্য হবে তার ক্লাব দল এবং জাতীয় দল আর্জেন্টিনা।

দলে মেসি না থাকলে বার্সা ম্যানেজমেন্ট যাকে খেলাতে চাইবে তার মধ্যে অবশ্যই থাকতে হবে গোল করার অদম্য স্পৃহা এবং সেই সঙ্গে করানোর। সেখানে ডিবালা হতে পারে ওই বৈশিষ্ট্যসমূহের পরিপূরক। ইতালিয়ান চ্যাম্প জুভেন্টাসের এই জেনারেশন নেক্সটকে পেতে বার্সাকে তুরিনের ক্লাবটিকে দিতে হতে পারে বিশাল অঙ্কের অর্থ। সেট পিস, অতিমানবীয় গোল, ডি বক্সে যেকোনোভাবে টার্ন ইন করা, প্রতিপক্ষের জমাট রক্ষণ দুর্গের তালা খোলার জন্য ডিবালা এখন সিরিআ’র সেরা সেনানী। এই পজিশনে খেলানোর জন্য বরশুয়া ডর্টমুন্ডের প্রবল সম্ভাবনাময় আরেক ফরাসি ইয়াংস্টার ওসমান ডেমবেলেও আছেন বার্সেলোনা নীতিনির্ধারকদের রাডারে।

‘এমএসএন’ এখন বার্সার হয়ে গোল্ডেন যুগ পার করছে বা গোল্ডেন যুগের শেষের ভাগে এসে পড়েছে। বিশ্বের এই শীর্ষ তিনজন খেলোয়াড়ের বিকল্প বের করতে ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনার নজরে থাকা যে কয়েকজন খেলোয়াড়কে এখানে তুলে ধরা হলো তাদের মধ্যে বার্সার আক্রমণভাগের জন্য সেরা তিনজনকে বেছে নিলেও এমএসএন কম্বিনেশনে বার্সেলোনার ফুটবল বিশ্বে চালানো বিধ্বংসী প্রভাব তারা চলে যাওয়ার পর যে অনিবার্যভাবেই হ্রাস পাবে তা বোধহয় আর বলে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।

মিনহাজুল ইসলাম : গণমাধ্যমকর্মী ও তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার্থী

ঢাকাটাইমস/৩১জানুয়ারি/এমআই/টিএমএইচ

সংবাদটি শেয়ার করুন

খেলাধুলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

খেলাধুলা এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :