‘শুধু বই কেনাবেচা নয়, বইমেলা সংস্কৃতির একটি অগ্রযাত্রা'

ঢাকাটাইমস ডেস্ক
| আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১১:২৪ | প্রকাশিত : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ০৯:৩৬

অমর একুশে বইমেলা নিছক বই বেচাকেনা নয়, এটাকে একটি সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রা বলে মনে করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। দীর্ঘ সময় অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক দেশ বাংলাদেশের টিকে থাকার পেছনে একুশে বইমেলার একটা প্রভাব দেখছেন তিনি। জার্মানভিত্তিক বেতার সার্ভিস ডয়চে ভেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন শামসুজ্জামান খান।

প্রশ্ন: অমর একুশে গ্রন্থমেলা তো একেবারেই দোড়গোড়ায়, এবারের প্রস্তুতি কোন পর্যায়ে?

শামসুজ্জামান খান: এ বছর শুধুমাত্র অমর একুশে গ্রন্থমেলা নয়, একইসঙ্গে বড় আকারে হতে চলেছে আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন৷ সেই সম্মেলনে বিদেশ থেকে যোগ দিচ্ছেন ছ'জন বিশিষ্ট কবি৷ জার্মানি থেকে ইউনা বুলগার্ড ও টোবিয়াস বুলগার্ড, ল্যাটিন অ্যামেরিকা থেকে লুস টেরিনা লোপেজ, রাশিয়া থেকে ড. ভিক্টর এস্টরিক আমাদের এই সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন৷ আর চীন থেকে আসছেন প্রফেসর ডং স্যান৷

প্রশ্ন: আপনাদের প্রস্তুতি কেমন?

শামসুজ্জামান: প্রস্তুতি চলছে৷ আমরা আমাদের লেখক-কবিদের নিয়ে অনেকগুলো বৈঠক করে কর্মসূচি ঠিক করে ফেলেছি৷ ১ থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাহিত্য সম্মেলনটা হবে৷ পাশাপাশি বইমেলার প্রস্তুতি পুরোদমেই চলছে৷ আমরা আশা করছি, পহেলা ফেব্রুয়ারি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতি বছরের মতো মাসব্যাপী এই বইমেলার উদ্বোধন করবেন৷ সেই সঙ্গে সঙ্গে সাহিত্য সম্মেলনেরও উদ্বোধন হবে৷ সেই সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমবাংলা ও বাংলা সাহিত্যের লেখকদের একটা আন্তর্জাতিক সম্মেলনও হবে৷ সেই সম্মেলনে পশ্চিমবাংলা থেকে যোগ দেবেন অধ্যাপক পবিত্র সরকার, কথা সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, কথা সাহিত্যিক নবনিতা দেব সেন, ড. সুনিতা চক্রবর্তী, অধ্যাপক সঞ্জয় মুখপধ্যায়, কবি সুবোধ সরকার, কথা সাহিত্যিক সাধন চট্রপধ্যায়সহ অনেকেই৷

প্রশ্ন: এবারের মেলা নিয়ে বিশেষ কী আয়োজন থাকছে একাডেমির?

শামসুজ্জামান: এবারের বিশেষ আয়োজন সাহিত্য সম্মেলন৷ ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমি এমন একটি সম্মেলনের আয়োজন করেছিল, যার উদ্বোধন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান৷ এবার অনেক বছর পর সেই একই ধরনের সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন তাঁরই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷

প্রশ্ন: অমর একুশে গ্রন্থমেলা আয়োজনে আপনাদের সীমাবদ্ধতা কী?

শামসুজ্জামান খান: সীমাবদ্ধতার প্রশ্ন কেন আসছে সেটা বুঝতে পারছি না৷ আপাতত সীমাবদ্ধতার জায়গা কিছুই দেখতে পাচ্ছি না৷ আমরা দেখছি যে, কাজ ভালোভাবেই চলছে৷ যেভাবে আমরা করতে চাই সেভাবেই হচ্ছে৷

প্রশ্ন: বইমেলার সময় এক ঘণ্টা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন সবাই৷ তা সময়সীমা কী বাড়ছে?

শামসুজ্জামান খান: এটা তো আপনারা আগেই জেনেছেন যে, এবার বইমেলার সময় আধা ঘণ্টা বড়ানো হচ্ছে৷ আগে বিকাল ৩টায় শুরু হয়ে রাত ৮টায় শেষ হতো৷ এখন সেই সময় আধা ঘণ্টা বাড়িয়ে রাত সাড়ে ৮টা করা হয়েছে৷

প্রশ্ন: মেলার ভেতরে দর্শনার্থীদের বসার ব্যবস্থা নেই, নেই কোনো রেস্টুরেন্ট৷ যেন শুধু বইয়ের বাজার, কেনাবেচার বাইরে এটা তো একটা মিলনমেলাও, তাই না?

শামসুজ্জামান: গত বছরই মেলার ভেতরে পর্যটনের একটা খাবারের স্টল ছিল৷ এছড়াও আরো একটি খাবারের স্টল ছিল৷ এবার আরো দু'টি বাড়বে৷ পর্যটনের একটা স্টল থাকবে বাংলা একাডেমির নবনির্মিত ড. এনামুল হক ভবনে৷ আরেকটি থাকবে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে৷ এছাড়া বাংলা একাডেমির ভেতরে আরো একটি স্টল থাকবে৷ অপর একটি স্টল থাকবে এছাড়া সোহরাওয়ার্দি উদ্যানেও৷ তাছাড়া মাঝে মধ্যে ভেতরে বসার জন্য বাশ দিয়ে ব্যবস্থাও করা হয়েছে৷

প্রশ্ন: এবার স্টল বরাদ্দ হচ্ছে কতগুলো? বা অন্যান্য বছর যে স্টলগুলো থাকে, এবারও তো সেই স্টলগুলোই থাকছে? নাকি নতুন কোনো স্টল যোগ হচ্ছে?

শামসুজ্জামান খান: তারা থাকবে৷ এর সঙ্গে আরো ১৫-২০টি স্টল যোগ হবে বলে আমরা আশা করছি৷

প্রশ্ন: মেলার নিরাপত্তা প্রস্তুতি কেমন?

শামসুজ্জামান খান: নিরাপত্তার ব্যাপারটা তো নিরাপত্তা বাহিনীর লোকরাই ভালো বলতে পারবেন৷ তারা আমাদের সঙ্গে মিটিং করেছেন এবং আশ্বস্ত করেছেন মেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা হবে সবচেয়ে ভালো৷ আগের যে কোনো বছরের তুলনায় এবারের ব্যবস্থা হবে আরো সুদৃঢ়৷

প্রশ্ন: বইমেলাকে কেন্দ্র করে আমাদের তো কিছু খারাপ অভিজ্ঞতা আছে৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আপনার এ ব্যাপারে কি কোন নির্দেশনা আছে?

শামসুজ্জামান: সেগুলো তো আছেই৷ তাছাড়া তারাও যথাযথভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছেন৷ সিসি টিভির ব্যবস্থা থাকবে, অন্য ব্যবস্থাও থাকবে৷ পুলিশের ক্যাম্প থাকবে, সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে৷ আর নিরাপত্তার স্বার্থে কিছু গোপনীয়তা তো আছেই, যেটা নিরাপত্তা বাহিনীর লোকেরা আমাদেরও বলবে না৷ আমরা অবশ্য জানতেও চাই না৷ আমরা শুধু আশা করছি, এবারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো হবে৷

প্রশ্ন: বইয়ের ক্রেতা-বিক্রেতা – সবার প্রতি আপনার আহ্বান কী?

শামসুজ্জামান: এই মেলাকে সুষ্ঠু ও সুন্দর এবং নান্দনিক ও সংস্কৃতিমনোস্ক মেলা হিসেবে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে তারা যদি আমাদের সহযোগিতা করেন, তাহলেই এটা হবে আমাদের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ সংযুক্তি৷ এই মেলা করার মধ্য দিয়ে শুধু বইয়ের বেচা-কেনাই তো নয়, সংস্কৃতির একটা অগ্রযাত্রা, সংস্কৃতির একটা তাৎপর্য তৈরি হয়েছে৷ যেমন দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দেশটা অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ও মানবিক একটা দেশ হিসেবে টিকে আছে৷ এবারের বইমেলা সেই লক্ষ্য পূরণে অনেকটাই সহায়ক হবে৷

প্রশ্ন: আমরা দেখছি প্রতি বছরই বইয়ের সংখ্যা বাড়ছে৷ কিন্তু মানের দিক দিয়ে যেসব নতুন লেখক আসছেন, তাঁদের বই নিয়ে নানা কথাবার্তা হচ্ছে৷ এটা নিয়ে বাংলা একাডেমির কিছু করার আছে কি?

শামসুজ্জামান: এটা নিয়ে একাডেমির কিছু করা সম্ভব না৷ আমরা চেষ্টা করছি, যাতে উঁচুমানের বইগুলো আসে৷ প্রকাশকরা সতর্ক ও সচেতন হলেই কেবল সম্ভব৷ তারা যদি কখনও কখনও লেখকদের বা অলেখকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে যে বই প্রকাশ উপযোগী না সেই বই ছাপেন, তাহলে বাংলা একাডেমি কী করবে? –ডয়েচে ভেলে

(ঢাকাটাইমস/০১ফেব্রুয়ারি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সাক্ষাৎকার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সাক্ষাৎকার এর সর্বশেষ

প্রতি মুহূর্তেই মনে হচ্ছিল আর্মিরা ধরে নিয়ে যাবে: ফরিদা খানম সাকি

দাম বাড়ালে এতক্ষণে কার্যকর হয়ে যেত: ক্যাব সহ-সভাপতি নাজের হোসাইন

জন্ম থেকেই নারীদের যুদ্ধ শুরু হয়: নারী উদ্যোক্তা ফরিদা আশা

নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই

ভবন নির্মাণে সিটি করপোরেশনের ছাড়পত্র নেওয়ার নিয়ম করা উচিত: কাউন্সিলর আবুল বাশার

তদারকি সংস্থা এবং ভবন নির্মাতাদের দায়িত্বশীল হতে হবে: অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান

বেইলি রোডের আগুনে রাজউকের ঘাটতি রয়েছে: মো. আশরাফুল ইসলাম

নতুন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে ভবন অনুমোদন দিতে হবে: ইকবাল হাবিব

বীমা খাতে আস্থা ফেরাতে কাজ করছি: আইডিআরএ চেয়ারম্যান জয়নুল বারী

ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে কিছু জঙ্গি সংগঠন মাথাচাড়া দিতে চায়

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :