সবাই যায় বইমেলায়, আমি থাকি বন্দিখানায়: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২১:৪৭ | প্রকাশিত : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২০:৪৪

বইমেলাকে একটি মিলনমেলা হিসেবে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বইমেলায় মন পড়ে থাকলেও এখানে আসতে না পারার কষ্ট তার সবচেয়ে বেশি। আবার মেলায় এসে বইয়ের পাতা উল্টানোর আনন্দ অন্য রকম। প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় নানা বিধিব্যবস্থা আর ব্যস্ততার কারণে তার বইমেলায় আসতে না পারাকে বন্দিখানার সঙ্গে তুলনা করেন।

বুধবার বিকালে বাংলা একাডেমিতে ২০১৭ সালের বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি তার বক্তৃতায় বই পড়ার আনন্দ আর নিজের ও পরিবারের বই পড়ার অভ্যাসের কথা তুলে ধরেন।

সাহিত্য জঙ্গিসহ যেকোনো বিপদ থেকে যুবসামাজকে উদ্ধার করার মাধ্যম হতে পারে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের ছেলেমেয়েরা আজকে যে বিপদে চলে যায়, এই বিপদ থেকে তাদের উদ্ধার করা যায় সাহিত্যচর্চার মধ্য দিয়ে।’

বইমেলাকে লেখক-প্রকাশক-পাঠকের অনেক প্রতীক্ষার মিলনমেলা বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বইপ্রেমীরা অপেক্ষা করে থাকে কবে বইমেলা আসবে। এদিকে যারা সাহিত্যচর্চা করেন তাদের বই প্রকাশ করেন প্রকাশকরা। আবার যারা বই পড়তে পছন্দ করেন তারা বই কেনেন। এটা একটা মিলনমেলায় পরিণত হয়। হাতে বই নিয়ে পাতা উল্টে পড়ার আনন্দটাই আলাদা।’

বিস্ময়কর সব সুবিধা নিয়ে আসা বর্তমান ডিজিটাল যুগ প্রধানমন্ত্রীকে একটা আনন্দ থেকে বঞ্চিত করছে বলে তার বক্তব্যে উঠে এসেছে। ‘আগে ছেলে (জয়) আসলে সুটকেসে অনেক বই নিয়ে আসত। যাওয়ার সময় সেগুলো রেখে যেত। আমি সেগুলো লাইব্রেরিতে দিয়ে দিতাম। কিন্তু এখন একটা যন্ত্র নিয়ে আসে। যার মধ্যে থাকে পুরো লাইব্রেরি। যাওয়ার সময় আবার সেটা নিয়ে যায়।’

তবে বইমেলায় আসতে না পারাটা তার সবচেয়ে বড় দুঃখ বলে বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী। এটাকে তিনি তুলনা করেছেন বন্দিজীবনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার একটাই দুঃখ, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার ফলে এখন আর আগের মতা বইমেলায় আসতে পারি না। হাত-পা বাঁধা, কী করব। এটিই হচ্ছে সব থেকে দুঃখের। সবাইকে যখন বইমেলায় আসতে দেখি তখন মনটা পড়ে থাকে এখানে, আর আমি বন্দিখানায় পড়ে থাকি।’

‘বন্দিখানা’ বলার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বন্দিখানা এই সেন্সে বললাম, যখন কারাগারে ছিলাম সেটাও ছিল বন্দিখানা, এখন তো রাষ্ট্রের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করতে হয়, তাই এখানে আসা সম্ভব হয় না। অনেক কিছু মেনে চলতে হয়। ব্যস্ততাও থাকে।’

সবাইকে বই পড়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বই পড়ার মাঝে আনন্দ রয়েছে। বই পড়লে অনেক কিছু ভুলে থাকা যায়। আবার অনেক জ্ঞান অর্জন করা যায়। কাজেই আমি আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের আহ্বান জানাব সবাই বই পড়বেন।’

নিজের বাসায় সব সময় বই পড়ার চর্চা আছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগেও ছিল, এখনো আছে। কারণ আমরা ছোটবেলা ১০ টাকা পেতাম বই কিনতে। সেই রূপকথার বই থেকে শুরু। ‘দস্যু বাহরাম’ থেকে ধীরে ধীরে উপন্যাস পড়া- এভাবে আস্তে আস্তে পর্যায়ক্রমে আমরা বই পড়ে গেছি। কাজেই আমাদের ছেলেমেয়েদেরও বই পড়া একটা নেশার মতো।’

পরিবারের নতুন প্রজন্মের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন নাতি-পুতিরাও বই পড়ে। তাদের ছোটবেলায় একটা আলমারি কিনে বাসায় একটা বইয়ের শেল্প করে দিয়েছি। আর বলে দিয়েছি এটা তোমাদের বইয়ের লাইব্রেরি। এখানে বসে তোমরা পড়বে। যখন তারা হাঁটতে শিখে তখন থেকেই তারা তাদের লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে পড়ে। এতে করে তাদের মধ্যে বই পড়ার চর্চা গড়ে ওঠে। এভাবে আমরা বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলেছি।’

এ সময় বঙ্গবন্ধুসহ ভাষা ও স্বাধীনতাযুদ্ধের স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা। আমাদের বাংলা ভাষা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ুক। বিশ্ব জানুক আমরা কতটা সাহিত্যপ্রেমী।

অনুষ্ঠানে বিদেশি অতিথিদের বক্তৃতায় বাংলা ভাষার ব্যবহারে মুগ্ধতা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বিদেশি অতিথিরা কী চমৎকারভাবে বাংলায় বক্তৃতা শুনালেন। আমাদের বিভিন্ন কবিতা তারা অনুবাদ করছেন। এ অনুবাদের মাধ্যমেই আমরা একে-অপরকে জানতে পারছি। সমাজের অবস্থান আমাদের কাছে উঠে আসে।’

বাংলা একাডেমির এই আয়োজনে নিমন্ত্রিত বিদেশি অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য দেন চীনের গবেষক ও রবীন্দ্র অনুবাদক ডং ইউ চেন, অস্ট্রিয়ার মেনফ্রেড কোবো, পুয়ের্তোরিকোর লুস মারিয়া রোপেজ, ভারতের চিন্ময় গুহ প্রমুখ।

বাংলা একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। এর আগে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।

(ঢাকাটাইমস/২১জানুয়ারি/জেআর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :