আশার অনেক কিছুই আছে এই দেশে

জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া
 | প্রকাশিত : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৪:২৪

বিবি রাসেল ইউরোপে মডেল হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবেও তিনি কাজ করছেন। পুরুষ মডেলদের মধ্যে আসিফ আজিম কাজ করেছেন ভারতে। আমি বাংলাদেশে থেকেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কাজ করে যাচ্ছি।

আমাদের দেশের মডেলরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এখনো পুরোপুরি যেতে পারছে না, কারণ অনেকেই এ বিষয়ে মনোযোগী নয়। অনেক সময় ডাক পড়লেও দেখা যায় কারো পাসপোর্ট ঠিক নেই। কারো হয়ত অর্থনৈতিক সামর্থ্য দুর্বল। এ সব কারণে আমাদের অনেক মডেল ভিসা পেতে সমস্যায় পড়েন। কারো কারো আবার বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগে দক্ষতার ঘাটতি আছে। অথচ এটা যোগাযোগেরই যুগ। দেশের বাইরে মডেলিং করতে গেলে ইংরেজি ভাষাটা মোটামুটি জানতে হবে। এই ভাষাগত ঘাটতি অবশ্যই বড় একটি সমস্যা। সবকিছু মিলিয়ে মডেলিং করতে হলে বেসিক অ্যাডুকেশন থাকতে হবে।

আমাদের দেশে মডেলিংয়ের ক্ষেত্রে পেশাদারিরও কিছু ঘাটতি আছে। বিদেশে মডেলদের অনেক কিছুই করে দেয় এজেন্সি। তার হয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন শো আয়োজকদের সঙ্গে তারাই যোগাযোগের কাজটি করে। তারাই সম্মানীর বিষয়গুলো নিয়ে ক্লায়েন্টদের সঙ্গে বার্গেনিং করে। মোটকথা একজন মডেলের সব কিছুই দেখে এজেন্সি। অথচ আমাদের দেশে তেমন কোনো এজেন্সি নেই। যেগুলো আছে সেগুলো বিজ্ঞাপনের এজেন্সি। তাই একটি আন্তর্জাতিক মানের এজেন্সি খোলার ইচ্ছা আছে আমার। আমাদের দেশের মডেলরা এখন অনেক পরিণত। এই সেক্টর তাই দিন দিন ভালোর দিকে যাচ্ছে।

অনেক শিক্ষিত পরিবার থেকে পড়াশোনা জানা তরুণরা এখন এই সেক্টরে প্যাশন নিয়ে কাজ করতে আসছে। মডেলিং করতে হলে অনেক খরচের প্রয়োজন। কারণ এটা শো বিজনেসের জায়গা, অনেক শো-অফ করতে হয়। তাই মেকআপ, ড্রেসআপ, জুতা- এগুলো কিনতে হয়। তারপর জিমের পেছনে, শরীর ফিট রাখার জন্যও অনেক খরচ করতে হয়। কজন মডেল আর এভাবে নিজের টাকা খরচ করে, এই পেশাকে ধরে রাখতে পারে। অনেকে তাই খুব বেশি দূরে যেতে পারে না। ব্যয়বহুল হওয়ার কারণেই আমাদের দেশে এখনো র‌্যাম্প মডেলিংকে একমাত্র পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার মতো সুযোগ তৈরি হয়নি। অথচ অন্যান্য কাজের ক্ষেত্রে শুধু যাতায়াত খরচ হলেই পেশাকে ধরে রাখা যায়। তাই নতুনদের উদ্দেশে আমি বলব, অবশ্যই পাশাপাশি পার্ট টাইম কোনো চাকরি করে ফ্যাশনের প্যাশনকে ধরে রেখে লক্ষ অর্জনে এগিয়ে যাওয়া উচিত।

এখন আমি কোনো শোয়ের জন্য ডেট দিলে সেই অনুযায়ী ডেট করে আয়োজকরা। আগে তাদের দেওয়া তারিখ অনুযায়ী আমাকে কাজ করতে হতো। এখন আমার সময় অনুযায়ী দিনক্ষণ ঠিক হয়। আজকের এই অবস্থানে আসতে আমাকে আট বছর পরিশ্রম করতে হয়েছে। প্রথম যে ফিল্মগুলো আমি করেছি, তখন যে যা বলেছে তাই করেছি। এখন আমি সে অবস্থানে নেই।

পৃথিবীর সব জায়গায়ই শো বিজনেসের মেয়েদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে আলাদা করে ভাবতে হয়। আমাদের দেশেও একই অবস্থা। তবে নিজের ব্যক্তিত্বের মাধ্যমে অনেক ঝামেলা এড়ানো সম্ভব। এক্ষেত্রে আপনার উপর কাউকে খবরদারি করতে দিলে কিন্তু পেয়ে বসবে। তাই নিজের ব্যক্তিত্বকে ধরে রেখে এগিয়ে যেতে হবে। পড়াশোনা করে নিজের মেধা-মনন সমৃদ্ধ করতে হবে। তাহলে এই জায়গায় শক্ত অবস্থান ধরে রাখা সম্ভব হবে। প্রলোভনের ফাঁদে পড়া যাবে না। তাহলেই কাক্সিক্ষত সাফল্য এসে ধরা দিবে।

আমি অনেক কষ্ট করেই আজকের অবস্থানে এসেছি। অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যখন একটি অবস্থানে এসেছি তখন ভোগ ম্যাগাজিনে জায়গা করে নিতে পেরেছি। কিছুদিনের মধ্যে ভোগের চেয়েও বড় একটি জায়গায় কাজ করতে যাচ্ছি। শিগগিরই সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি সবাইকে জানাব। চলচ্চিত্র নিয়ে আমার আগ্রহ আছে। তবে এখন খুব কম সিনেমায় অভিনয় করব। বছরে যদি দু-তিনটি সিনেমা করি, তবে অবশ্যই সেগুলো ভালো মানের হতে হবে। যেনতেন সিনেমায় কাজ করার কোনো ইচ্ছে নেই।

আমি কিন্তু ফ্যামিলি বিজনেসও দেখছি। এরপর আবার নিয়মিত জিমে যেতে হয়। সবকিছু মিলিয়ে আমি প্রচ- ব্যস্ত। এতে আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন, আমার হাজব্যান্ড- সবাই আমাকে সহায়তা করছে। আগে আমার মা, আমার পরিবার আমাকে এভাবে সাপোর্ট দিয়েছে। এখনো দিয়ে যাচ্ছে। তাদের কারণেই আমি আজকে এতদূর আসতে পেরেছি। পরিবারের সমর্থন ছাড়া এই জায়গায় কারো পক্ষে আসা সম্ভব না। আর যদি পারিবারিক সহায়তা না মিলে তাহলে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে, যা প্রায় অসম্ভব এক কাজ। এই হিসেবে আমি অনেক সৌভাগ্যবান।

তবে আমরা যখন কাজ শুরু করেছি, তার চেয়ে এখন সুযোগ অনেক বেশি। সামাজিক-পারিবারিক গ্রহণযোগ্যতাও অনেক বেড়েছে। এখন দেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি অনেক গ্রো করেছে। বড় বড় শো হচ্ছে। বিদেশি আর্টিস্টরা এসে এ দেশের র‌্যাম্পে হাঁটছেন, কাজ করছেন।

আমি চাই ভবিষ্যতে নিজের ভালোর পাশাপাশি মানুষের ভালোর জন্যও কাজ করে যেতে। পাঁচ বছরের বড় একটি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি। রাজনীতি নিয়েও আমার পরিকল্পনা রয়েছে। আইন নিয়ে আছে। আর্তনারী ও শিশুদের পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান উই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবার কাজে এখন জড়িত আছি। আমাদের দেশের ভলান্টিয়ার সার্ভিস দিচ্ছে অনেক তরুণ। আমি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কথা জানি, যারা বিভিন্ন বড় অনুষ্ঠানে বেঁচে যাওয়া খাবার সংগ্রহ করে গরিবদের মাঝে বিলিয়ে দেয়। অসহায় প্রবীণ নাগরিকদের দরকারি ওষুধ সরবরাহ করছে আরেকটি সংগঠন। এটা অনেক পজিটিভ সাইন। এভাবেই একটি দেশের নৈতিকতা গড়ে উঠে, একটি দেশ এগিয়ে যায়। আমার দেশ নিয়ে আমি অনেক আশাবাদী।

জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া : মডেল ও অভিনয়শিল্পী

ঢাকাটাইমস/৩০জানুয়ারি/এমইউ/টিএমএইচ

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিনোদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :