ক্রিকেটারদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে

এস এম কায়উম
 | প্রকাশিত : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১০:০৪

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্য আরাফাত সানি গত ২২ জানুয়ারী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। অত্যন্ত দুঃখজনক একটি খবর। অভিযোগ গুরুতর। বাদী নিজেকে আরাফাত সানির স্ত্রী দাবি করে অভিযোগ করেছেন, সানি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ব্যক্তিগত ও আপত্তিকর ছবি আপলোড করেছেন।

ঘটনাটি বিচারাধীন থাকায় এখনই মতামত দেয়াটা সমীচীন হবে না। তদুপরি জাতীয় তারকা ক্রিকেটারদের ব্যক্তিজীবনে এসব বিতর্ক আমাদের আশাহত করে। এর আগেও জাতীয় ক্রিকেট দলের বেশকিছু সদস্যের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ এসেছে।

চিত্র নায়িকা হ্যাপীও অভিযোগ তুলেছিলেন পেসার রুবেল হোসেনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় সমালোচিত হন রুবেল। অভিযোগ এসেছিল তারকা অলরাউন্ডার সাব্বির হোসাইন ও পেসার আল আমিনের বিরুদ্ধেও। গত বিশ্বকাপ চলাকালে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে সে যাত্রা তাদের বিশ্বকাপটাই শেষ হয়ে যায় আল আমিনের। বিসিবি ডিসিপ্লিনারী কমিটি তাদের জরিমানা ও সাসপেন্ড করেছিল।

বিদেশের মাটিতে দেশের ভাবমূর্তিকে তারা প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছিলেন। তবে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স সে বিশ্বকাপে খুবই প্রসংশিত হওয়ায় ঘটনাটি ততটা প্রচারমাধ্যম আসেনি। একই ধারাবাহিকতায় আরেকটি ন্যাক্কারজনক ঘটনার জন্ম দেন ক্রিকেটার শাহাদাত হোসেন। গৃহ পরিচারিকাকে নির্যাতনের দায়ে সস্ত্রীক আটক থাকতে হয়েছে তাকে। ক্রিকেটারদের একের পর এক এহেন কর্মকাণ্ডে আমাদের হতাশ করে।

জাতি হিসেবে বাঙালি অনেক উদার ও আবেগপ্রবণ। আমরা উৎসবপ্রিয়। যে কোন ক্রিকেট আয়োজনে আমরা উৎসবের আমেজে মেতে উঠি। আমরা ক্রিকেট ভালোবাসি, ক্রিকেট অন্তঃপ্রাণ। দর্শকপ্রিয়তার বিচারে ক্রিকেট এখন বাংলাদেশের এক নম্বর খেলা। বাংলাদেশের জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা তাই আমাদের অতি আপন, আমাদের অনেক আশা ও নির্ভরতাকে তারা বাস্তবে রূপ দিয়ে থাকেন। তাই তাদের অবস্থানটাও আমাদের কাছে অনেক উঁচুতে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সদস্যরা যারা বিশ্বের বুকে বাংলাদেশর সম্মান অনেক উঁচুতে আসীন করেছেন। তাদের কাছ থেকে দেশ, জাতি, সমাজ এরকম দায়িত্বজ্ঞানহীন ও অপরিণত আচরণ প্রত্যাশা করে না।

বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন জাতীয় ক্রিকেটাররা। জাতির কাছে, সমাজের কাছে তারা দায়বদ্ধ। তাঁদের কাঁধে দেশের সুনাম রক্ষার দায়িত্ব যেমন বর্তায়, তেমনি বাংলাদেশের মানুষ তাদের উপর অনেক কিছু প্রত্যাশা করে থাকে।

আমাদের ক্রিকেটাররা আমাদের জাতীয় বীর। দেশের সর্বত্র তারা পরমভাবে সম্মানিত। তাদের কাছে কখনই আমরা কোন কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণ আশা করি না। তাই ক্রিকেটারদের এরূপ আচরণ আমাদের মর্মমুলে আঘাত করে, আমরা কষ্ট পাই। ক্রিকেটীয় দীক্ষা শুধু মাঠে নয়, তাদের ব্যক্তি জীবনেও তার প্রকাশ থাকা খুব বেশি দরকার।

যে নিষ্ঠা, মনোযোগ, ধৈর্য্য, অধ্যবসায়, যা কিছু ক্রিকেটের ব্যকরণে আছে, সেটার প্রতিফলন তাদের জীবনাচরণেও থাকা দরকার। ক্রিকেটারদের রাতারাতি সুখ্যাতি আর প্রচুর অর্থসম্পদ প্রাপ্তিতে আত্মতুষ্টিতে ভুগলে হবে না, তাদেরকে মাটিতে পা রেখে চলার মানসিকতা থাকতে হবে। তারা খেলায় যে দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করেন, সমাজ জীবনেও তাদের দায়বদ্ধতার জায়গাতে সেভাবেই সৎ থাকতে হবে। কেন না আমাদের তরুণ প্রজন্মের কাছে তারা রোল-মডেল। তাদের এসব আচরণ নতুন প্রজন্মের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলবে। অহমবোধ থেকে তাদের বিরত থাকতে হবে। ক্রিকেটের কাছে, দেশের কাছে ও দেশের মানুষের কাছে তাদের সৎ থাকতে হবে। ক্রিকেটারদের কাছে আমাদের এই প্রত্যাশা খুব বেশি কিছু নয়।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের সম্মান অক্ষুন্ন রাখার জন্য এসব অনভিপ্রেত ঘটনা রোধকল্পে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের আরও কঠোর অবস্থান নেওয়া একান্ত প্রয়োজন।

লেখক: ফ্রিল্যান্স লেখক

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :