সংশোধন অভিযান- শুদ্ধ হোক সকল বানান

ইফতেখার রায়হান
| আপডেট : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৮:২৪ | প্রকাশিত : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৬:৩৯

‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি।’ হৃদয়ের গহিনে এই অনুরণন নিয়ে শুরু হয়েছে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। ১৯৫২ সালের এই রক্তাক্ত ফেব্রুয়ারি মাসেই ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিল বাংলার অকুতোভয় সন্তানেরা। ভাষার জন্য এমন আত্মদানের নজির পৃথিবীর অন্য কোনো দেশ বা জাতির ইতিহাসে বিরল। নেই ভাষা সুরক্ষা ও মাতৃভাষায় টিকে থাকার এমন অনুপ্রেরণা। কতগুলো বর্ণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সেদিন রফিক-শফিক-জব্বার-বরকত, আরো নাম না জানা দামাল ছেলে শাসকের রক্তচক্ষু আর প্রাণের মায়া উপেক্ষা করে নিজেদের সঁপে দিয়েছিল বন্দুকের মুখে।

সেই বায়ান্নর ২১ ফেব্রুয়ারি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে সারা বিশ্বে সমাদৃত। কিন্তু মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার এই ত্যাগ সাড়ে ছয় দশক পর নিজের দেশে কতটুকু সম্মান পাচ্ছে, সেই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। কারণ এখনো সর্বস্তরে বাংলার সঠিক ব্যবহার প্রচলন করা সম্ভব হয়নি। এত আত্মত্যাগের বাংলা ভাষা আজ নানা ভুল বানানের আধিপত্যে ক্ষত-বিক্ষত। রাস্তাঘাট, অফিস-আদালত, হাট-বাজার, দোকানপাট- সর্বত্র বাংলা বানানে ভুল পরিহাস হয়ে ঝুলছে। এমনকি বাদ যায় না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ধর্মীয় উপাসনালয় কিংবা প্রশাসনিক কার্যালয়।

এসব ভুল বানান বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে জনমনে। ভুল শিক্ষা নেয় শিশু থেকে শিক্ষার্থী, অতিথি হয়ে আসা বিদেশি পর্যটকসহ সব শ্রেণী-পেশার মানুষ। আড়ালে কটাক্ষ করে, হাসাহাসি করে। এটা আমাদের জন্য এক লজ্জা আর স্পর্শকাতরতার কারণ হয়ে দাঁড়ায় হরহামেশা।

ভাষার দাবি থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ। কিন্তু রক্ত দিয়ে অর্জিত প্রাণের ভাষা বাংলা ব্যবহারে যত্রতত্র এই ভুল দেখার যেন কেউ নেই। বাংলার বদলে কিংবা বাংলার মধ্যে ভিনভাষা ব্যবহার হয়ে উঠেছে স্বাভাবিক প্রবণতা। এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি ও ভুল সংশোধন আজ জরুরি হয়ে উঠেছে।

এই তাগিদ থেকেই বাংলা বানানের ভুল সংশোধনের অভিযানে নামতে যাচ্ছে ড্রিম ফর সোশাল এম্পাওয়ারমেন্টের আন্ডারে ডু সামথিং এক্সেপশনাল (ডিএসই) নামের একটি সংগঠনের সদস্যরা। ‘মাতৃভাষায় কথার প্রাণ, শুদ্ধ হোক সকল বানান’- এই স্লোগান সামনে রেখে ডিএসই তাদের মাসব্যাপী কর্মপরিকল্পনা সাজিয়েছে। ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানের ভুল বানানের সাইনবোর্ড, গুরুত্বপূর্ণ ব্যানার ও ফলক সংশোধন করবেন তারা।

টিম ডিএসইর একদল স্বেচ্ছাসেবী এবং কিছু সহযোগী সংগঠনের অংশগ্রহণে এই কাজ সম্পন্ন করা হবে। এ জন্য ঢাকাকে ভাগ করা হয়েছে ১০টি অঞ্চলে। ১৯৫২ সালের স্মরণে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার এই অভিযান শুরু হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে, ৫ ফেব্রুয়ারি সকালে। আর এ কাজে ডিএসইর সদস্যদের প্রেরণা দিতে সঙ্গে থাকবেন ভাষাসৈনিক আহমদ রফিক। ভাষার দাবিতে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মিছিলে গিয়েছিলেন তিনি।

ডিএসই গ্রুপের অ্যাডমিন জেবিন ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ভাষার মাসে আমরা বাংলা বানান শুদ্ধির অনেক বড় একটি চ্যালেঞ্জ হাতে নিয়েছি। আমাদের সদস্যরা যেসব এলাকার সাইনবোর্ড, ব্যানার ও বিভিন্ন ফলকের বানানে ভুল রয়েছে, সেগুলোর ছবি তুলে পাঠিয়েছেন আমাদের। অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডের বানানে ভুল পেয়েছি আমরা। এসব ভুল সংশোধন অনেক কষ্টসাধ্য। তারপরও আমরা ডিএসই গ্রুপের সদস্যরা স্বতর্স্ফূতভাবে এ কাজ সফল করতে নেমেছি। শুরুটা করতে চাচ্ছি ঢাকা থেকে। সবার সহযোগিতা পেলে দেশজুড়ে এ কাজ করব।’

কাজের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জেবিন বলেন, ‘আমরা ঢাকা মহানগরকে ১০টি অঞ্চলে বিভক্ত করেছি। প্রতিটি বিভাগের জন্য আলাদা করে একঝাঁক স্বেচ্ছাসেবী তরুণ-তরুণী কাজ করবেন। সবকিছু ঠিক থাকলে এবং ডিএমপির অনুমতি পেলে ২১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বনানী মাঠ কিংবা রবীন্দ্র সরোবরে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করব আমরা।’ বাংলা ভাষা শুদ্ধি অভিযানের কাজটি একার পক্ষে করা অনেক কষ্টসাধ্য উল্লেখ করে জেবিন ইসলাম বাংলা একাডেমি, গণমাধ্যমকর্মী ও সমাজের সব স্তরের মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন।

(ঢাকাটাইমস/৩ফেব্রুয়ারি/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :