শিক্ষার্থীদের পিঠ পাড়ানোর ঘটনায় ৫২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ

প্রকাশ | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৯:৫৩

চাঁদপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

চাঁদপুরের হাইমচরে নীলকমল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীদের পিঠের উপর দিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটওয়ারীর জুতা পায়ে হেঁটে যাওয়ার ঘটনায় এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাক্ষ্য প্রমাণ গ্রহণ করেছে। আগামীকালের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কাছে জমা দেয়া হবে।

এর আগে বৃহস্পতি ও শুক্রবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় অতিরিক্ত কমিশনার (উন্নয়ন) সৈয়দা সারোয়ার জাহান তদন্ত করে যান। তিনি দুই দিনে ৫২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। এ ঘটনায় হাইমচরে উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার নীলকমল ওচমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রদের তৈরি করা মানবসেতুর উপর জুতা পায়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটওয়ারীর হেঁটে যাওয়ার ঘটনায় তাকে অবশেষে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার এবং কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে।

শুক্রবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়িতে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়েদুল কাদের উক্ত নূর হোসেন পাটওয়ারীকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কারের কথা জানান। একই সঙ্গে কেন তাকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না তা জানতে চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হবে বলেও জানান।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র নাছির উদ্দিন আহম্মেদ জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি। কেন্দ্রীয়ভাবে দলের সাধারণ সম্পাদক সাহেব সিদ্ধান্ত নিতেই পারেন।

জেলা সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল বলেন, এ রকম কোনো তথ্য আমার জানা নেই।

এ ঘটনায় গঠিত এক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির কর্মকর্তা চট্টগ্রাম বিভাগীয় অতিরিক্ত কমিশনার (উন্নয়ন) সৈয়দা সারোয়ার জাহান দ্বিতীয় দিন শুক্রবার চাঁদপুর সার্কিট হাউজে এ তদন্ত পরিচালনা করেন। এর আগে বৃহস্পতিবার চাঁদপুর এসে বিকালে তিনি হাইমচরের নীলকমল ওচমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে যান এবং শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের সাক্ষাৎকার নেন। এ সময় চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সবুর মন্ডল ও পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার উপস্থিত ছিলেন।

তদন্ত কর্মকর্তা সৈয়দা সারোয়ার জাহান জানান, এ পর্যন্ত ৫২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। রবিবার চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেব। বিভাগীয় কমিশনার তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন।

এ দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সদস্য বিশিষ্ট এ তদন্ত টিম শনিবার দুপুরে বিদ্যালয়ে এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও শিক্ষক শিক্ষার্থী এবং অভিভাকদের মতামত গ্রহণ করেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবদুল্লাহ আল হাসান চৌধুরী এ তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এসময় মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক একেএম মোস্তফা কামাল ও কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের আঞ্চলিক উপ-পরিচালক মোহাম্মদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

তদন্ত টিমের প্রধান জানান, তদন্ত শেষ করে দ্রুততার সাথে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেবেন।

জানা যায়, তদন্ত কমিটির ডাকে না এসে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের মাধ্যমে গতকাল চিঠি পাঠিয়ে এই ঘটনার জন্য ভুল স্বীকার করে তদন্ত কমিটির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন নুর হোসেন পাটওয়ারী।

চাঁদপুর-হাইমচর নির্বাচনী এলাকায় এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার বিষয়ে স্থানীয় এমপি ও সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডা. দীপু মনি ঘটনাটিকে অত্যন্ত দুঃখজনক ও অগ্রহণযোগ্য আখ্যায়িত করে এক বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি দেশের বাইরে ছিলাম, বৃহস্পতিবার দেশে এসে আমার নির্বাচনী এলাকায় এ ঘটনার বিষয়টি জানতে পারি। জনমনের ক্ষোভের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সংশ্লিষ্ট ওই জনপ্রতিনিধি পুরো ঘটনাটির জন্যে দুঃখ প্রকাশ করে সবার কাছে ক্ষমা চাইবেন বলে আশা করি।

দীপু মনি বলেন, এই বিদ্যালয়ে এ ধরনের একটি ইভেন্ট যে প্রচলিত আছে তা আমার জানা ছিল না। জানা থাকলে আমি অবশ্যই বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এ ধরনের ইভেন্ট বাতিল করতে বলতাম।

সেদিনের এ ঘটনায় বহুলভাবে সমালোচিত হাইমচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটওয়ারী তার অবস্থান ব্যাখ্যা করে এক বিবৃতিতে পুরো বিষয়টি নিয়ে অত্যন্ত লজ্জিত ও দুঃখ প্রকাশ করে সবার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।

বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে পরোক্ষ শিশু নির্যাতনের এ বিষয়টি নিয়ে গত ক'দিন ধরে পুরো হাইমচর উপজেলায় অস্থিতিশীল পরিবেশ চলছে। হাইমচর থানায় বুধবার রাতে আব্দুল কাদের গাজী নামে এক অভিভাবক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটওয়ারী ও ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেনসহ পাঁচজনকে আসামি করে শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।

বৃহস্পতিবার হাইমচরে আওয়ামী লীগ অফিসে হামলার ঘটনায় শুক্রবার সকালে সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাহজাহান মিয়া এবং উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল মাস্টারসহ আরও ২০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কাউসার মিয়াজী এ মামলাটি করেন।

এ দুটি মামলার বিষয়ে হাইমচর থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘শিশু নির্যাতন আইনে পাঁচজনের বিরুদ্ধে যে মামলাটি হয়েছে সে মামলায় আসামিদের গ্রেপ্তারের জোর চেষ্টা চলছে। আসামিরা বর্তমানে পলাতক রয়েছে। আর আওয়ামী লীগ অফিসে হামলার ঘটনায় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

(ঢাকাটাইমস/০৪ফেব্রুয়ারি/প্রতিনিধি/জেবি)