কওমি গ্র্যাজুয়েশনে শীর্ষ আলেমদের মিলনমেলা

সিলেট প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২১:১৩ | প্রকাশিত : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২২:৩০

বরেণ্য বুজুর্গ আলেম আল্লামা নূর উদ্দিন আহমদ গহরপুরী রহ. প্রতিষ্ঠিত সিলেটের জামেয়া ইসলামিয়া হোসাইনিয়া গহরপুরের কওমি গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী এই দীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ৬০ বছর পদার্পণ উপলক্ষে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বৃহস্পতিবার শুরু হয়ে এই সম্মেলন চলে শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত। সম্মেলনে জামিয়ার প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থীকে গ্র্যাজুয়েশন স্মারক প্রদান করা হয়। ব্যাপক আলোচিত এই সম্মেলনে দেশ-বিদেশের শতাধিক শীর্ষ আলেম অংশগ্রহণ করেন।

শিক্ষা সমাপনকারীদের পাগড়ি প্রদান উপলক্ষে কওমি মাদরাসাগুলো দস্তারবন্দি সম্মেলন করলেও এবারই প্রথম ‘কওমি গ্র্যাজুয়েশন’ নামে ব্যতিক্রমী আয়োজন। মাদরাসার তরুণ প্রিন্সিপাল মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন রাজু বলেন, আবা একটি সুন্নতি পোশাক। এটা আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। এ হিসেবে আমাদের শিক্ষা সমাপনকারীদের বরকতি এই পোশাকটি দেয়া হয়েছে। সঙ্গে পাগড়িসহ প্রায় ১৫ ধরনের উপহার সামগ্রীও তাদের দেয়া হয় বলে জানান প্রিন্সিপাল।

গহরপুর জামিয়া থেকে শিক্ষা সমাপনকারী তরুণ আলেমরা ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগে দারুণ খুশি ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। অনেককে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছবি শেয়ার করে ব্যাপক প্রশংসাসূচক বক্তব্য দিতে দেখা যায়। তারা জানান, শিক্ষা সমাপনের স্মারক হিসেবে যা পেয়েছেন তা তাদের ভাবনায়ও ছিল না। বাংলাদেশের কোনো মাদরাসা এমন ব্যতিক্রমী উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারেনি। সম্মেলনে অংশ নেয়া প্রায় প্রত্যেক শীর্ষ আলেমই এই আয়োজনের ভূয়সী প্রশংসা করেন। আল্লামা গহরপুরী রহ.-এর উত্তরসূরি প্রিন্সিপাল মুসলেহ উদ্দীন রাজুর উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করেন।

সম্মেলনে ভারতের জমিয়তে উলামার সভাপতি আল্লামা সৈয়দ আরশাদ মাদানি, দারুল উলুম দেওবন্দের আল্লামা কমর উদ্দিন, আল্লামা আব্দুল্লাহ মারুফি, আল্লামা সালমান বিজনুরি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেন। ভারতের বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী এহসান মুহসিন ছিলেন সম্মেলনের বিশেষ আকর্ষণ। দেশের শীর্ষ আলেমদের মধ্যে অংশ নেন জামিয়া শারইয়্যা মালিবাগের প্রিন্সিপাল ও শাইখুল হাদিস মাওলানা আশরাফ আলী, জামিয়া ইমদাদিয়া কিশোরগঞ্জের প্রিন্সিপাল মাওলানা আযহার আলী আনোয়ার শাহ, কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, সিলেটের জামেয়া মাদানিয়া কাজিরবাজারের প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবীবুর রহমান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নির্বাহী সভাপতি মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া ঢাকার প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহফুজুল হক, বরিশাল জামিয়া মাহমুদিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুব, ময়মনসিংহের মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সাদী, বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন মাওলানা জোবায়ের আহমদ আনসারী, বেফাকের মহাপরিচালক অধ্যাপক মাওলানা জুবায়ের আহমদ চৌধুরী, সুনামগঞ্জের মাওলানা নুরুল ইসলাম খান, শায়খুল হাদিস মাওলানা মুখলিছুর রহমান কিয়ামপুরী, মাওলানা মাসউদ আহমদ, মাওলানা আব্দুছ ছাত্তার, মাওলানা সা’দ উদ্দীন, মাওলানা নুরুল ইসলাম চাটগামী, মাওলানা আবদুল বাসিত বরকতপুরী, মাওলানা নুরুল ইসলাম বিশ্বনাথী প্রমুখ। এছাড়া সিলেটের মেয়র আরিফুল হক, জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য এহিয়া চৌধুরীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা কওমি গ্র্যাজুয়েশনে যোগদান করেন।

জামিয়া গহরপুরের ৬০ বছর পূর্তির এই সম্মেলনে লক্ষাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আল্লামা গহরপুরীর ভক্ত-মুরিদরা ছুটে আসেন মাহফিলে। এ উপলক্ষে পুরো এলাকায় বিরাজ করে উৎসবের আমেজ।

প্রসঙ্গত, শায়খুল হাদিস আল্লামা হাফেজ নূর উদ্দিন আহমদ গহরপুরী রহ. ছিলেন কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের আমৃত্যু সভাপতি। তিনি দেশের আলেমদের অভিভাবক ছিলেন। ১৯৫৭ সালে তিনি নিজ গ্রাম বালাগঞ্জের গহরপুরে বিখ্যাত এই দীনি প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। ২০০৫ সালে তাঁর ইন্তেকালের পর এলাকাবাসী তাঁরই সুযোগ্য সন্তান মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন রাজুকে এই প্রতিষ্ঠানটি চালানোর গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে অগ্রসর চিন্তার তরুণ এই আলেম ভিন্নধর্মী নানা কর্মসূচির মাধ্যমে ইতোমধ্যে কওমি অঙ্গনের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছেন। কওমি গ্র্যাজুয়েশনও তারই চিন্তার ফসল।

(ঢাকাটাইমস/০৪ফেব্রুয়ারি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ইসলাম বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :