জমে উঠেছে ফরিদপুরের জসীম পল্লী মেলা

ফরিদপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১১:৩৬

জমে উঠেছে ফরিদপুরে চলমান জসীম পল্লী মেলা। এবারের মেলার মূল আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছে লটারি ও হাউজি। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ লটারি কিনছে। ড্রর সময় মেলার লটারির মঞ্চ এবং তার আশেপাশে উপচেপড়া ভিড় হতে দেখা যায়। সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হওয়া হাউজিকে কেন্দ্র করে অত্যাধিক ভিড় হতে দেখা যাচ্ছে।

গত ১৩ জানুয়ারি থেকে ফরিদপুরের অম্বিকাপুর ইউনিয়নের পল্লীকবির বাড়ি সংলগ্ন কুমার নদের পাড়ে জসীম উদ্যানে শুরু হয়েছে জসীম পল্লী মেলা। মাসব্যাপী এ মেলা জসীম ফাউন্ডেশন ও জেলা প্রশাসন আয়োজন করে থাকলেও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে এবছর মেলাটি পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হযেছে পাশের মাগুরা জেলার কাটাখালী বাজার এলাকার জে জে এন্টারপ্রাইজকে।

মেলা উপলক্ষে ১৬৯টি স্টলে বিভিন্ন চারু ও কারু পণ্যের পাশাপাশি বিকাশ লটারি ও হাইজির ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া প্রতিদিনই সন্ধ্যা ৬টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মেলার মাঠ সংলগ্ন জসীম মঞ্চে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে নাচ, গান, কবিতা আবৃত্তি, এ্যাক্রবেটিক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।

তবে মেলায় আগত দর্শকদের মূল আকর্ষণের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বিকাশ লটারি ও হাউজি। বিশেষত লটারির প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশি। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ফরিদপুর জেলাসহ আশেপাশের জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে দুইশ মাইক ও ভ্যান দিয়ে ১০ টাকা মূল্যের লটারি বিক্রি করা হচ্ছে। রাত ১০টার পরে মেলার মঠে প্রতিদিনের বিক্রি হওয়া টিকিটের উপর ড্র অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

দেয়া হচ্ছে আকর্ষণীয় সব পুরস্কারসহ মোট ৭১টি পুরস্কার। প্রথম পুরস্কার হিসেবে কখনো প্রাইভেটকার, কখনও মোটরসাইকেল, কখনো সোনার চেন বা কানের দুল দেয়া হচ্ছে। একদিনে পুরস্কার হিসেবে ২০টি মোটরসাইকেল পর্যন্ত দেয়া হয়েছে।

শুরু থেকেই লটারির ড্র অনুষ্ঠান স্থানীয় ক্যবল চ্যানেলে সরাসরি সস্প্রচার করা হতো। তবে গত বুধবার থেকে প্রশাসন সরাসরি সস্প্রচার বন্ধ করে দেয়ায় টিকিট বিক্রি হার গত কয়েকদিনে কিছুটা কমে গেছে। এর ফলে পুরস্কারের ক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছে। পুরস্কারের সংখ্যা না কমলেও আকর্ষণীয় পুরস্কারের সংখ্যা কমে গেছে।

জসীম মেলায় লটারি ও হাউজির বিষয়টি যুক্ত হওয়ায় ফরিদপুরের বিভিন্ন মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষত জসীম পল্লী মেলাটিতে এজাতীয় আয়োজন কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না ফরিদপুরের সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ।

জসীম পল্লী মেলা ১৯৯১ সাল থেকে ওই জায়গাতেই অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। শুরুতে ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদ এ মেলা শুরু করে। ১৯৯৫ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাস এ মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এলে মেলার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক বেড়ে যায়। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গঠিত হয় জসীম ফাউন্ডেশন। বর্তমানে জসীম ফাউন্ডেশন ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে যৌথভাবে এ মেলার আয়োজন করা হচ্ছে।

গ্রাম বাংলার কবি জসীম উদ্দীনের সমাধির পাশে এ মেলার আয়োজন করায় এ মেলাকে ঘিরে ফরিদপুরবাসীর একটি ভিন্ন মাত্রার উপলব্ধি এবং আবেগ কাজ করে আসছে শুরু থেকেই। চলতি বছর মেলাতে লটারি ও হাউজি যুক্ত হওয়ায় শুরু থেকেই ফরিদপুরের সর্বস্তরের লোকজন বিষয়টি সুনজরে দেখেনি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচুর বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

ফরিদপুর সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য অধ্যাপক আলতাফ হোসেন বলেন, মেলাটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে দিয়ে দেয়ায়, সেই প্রাণের ছোঁয়া পাওয়া যায়নি। মেলাটি যে আমাদের এ বোধ থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হয়েছে। দ্বিতীয়ত এ মেলায় লটারি বা হাউজি কখনই যুক্তি ছিল না। অতীতে গোপনে গোপনে কেউ এ চেষ্টা করলেও প্রশাসন তা কঠোর হাতে দমন করেছে। কিন্তু এবার যা করা হলো, তাতে মনে হয়েছে- যে কাজটি প্রশাসনের প্রতিহত করার কথা, অসামজিক সেই কাজটিই প্রশাসন যেন বৈধতা দিয়ে দিল। অন্য যে কোন মেলায় হয়তো এ বিষয়টা মেনে নেয়া যেতো, কিন্তু জসীম পল্লী মেলায় এটা কোনভাবেই মানা যায় না।

মেলা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান জে জে এন্টারপ্রাইজের পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মেলা পরিচালনার জন্য জসীম ফাউন্ডেশন ও জেলা প্রশাসনের সাথে আমাদের চুক্তি হয়েছে। তার মধ্যে হাউজি ও লটারির বিষয়ও রয়েছে। আমি স্বচ্ছতাপূর্ণ কাজে বিশ্বাসী। এজন্য লিখিত নির্দেশনা ছাড়া আমি কোন কাজ করি না।

তিনি বলেন, স্বচ্ছতার কাজের অংশ হিসেবেই লটারির ড্রর অনুষ্ঠান স্থানীয় কেবল নেটওয়ার্কে সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসন সেটি বন্ধ করে দেয়ায় আমি বিব্রত হয়েছি।

জসীম ফাউন্ডেশনের সভাপতি ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে মেলাটি পরিচালনার দায়িত্ব জে জে এন্টারপ্রাইজকে দেয়া হয়। সেখানে লটারির বিষযটিও ছিল। তিনি বলেন, শুরু থেকে মেলা ভালোভাবেই চলেছে, লটারি ছাড়া কোন বিষয়ে কোন আপত্তি ওঠেনি। তবে লটারির বিষয়টি সুশীল সমাজ ভালো ভাবে নেয়নি। আগামীতে এ বিষযটি খেয়াল রাখা হবে। ‘স্থানীয় কেবল নেটওয়ার্কে সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ করায় পরিচালকের বিব্রত হওয়ার’ বিষয়কে নাকচ করে দিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, ওই চুক্তির মধ্যে মেলার যে কোন অনুষ্ঠান কিংবা প্রয়োজনে মেলাটিও বন্ধ করে দেয়ার ক্ষমতা জেলা প্রশাসন সংরক্ষিত রেখেছিল।

পল্লী কবির মেয়ে আসমা এলাহী চৌধুরী মেলার পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে জবাবে বলেন, পল্লী কবির নামে যে ধরনের মেলা হওয়া হওয়ার কথা ছিল আমরা এখন সেটি দেখছি না। তিনি বলেন, এই মেলার মধ্যে আমার দেশের গ্রামের আরো অনেক কিছু তুলে ধরার দরকার ছিল। আয়োজনকরা কেনো সেটি করেনি তা বুঝতে পারছি না।

(ঢাকাটাইমস/৭ফেব্রুয়ারি/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :