ষোড়শ সংশোধনীর আপিল শুনানিতে ১২ অ্যামিকাস কিউরি
উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে অর্পণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল শুনানিতে ১২ জন অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) নিয়োগ করেছেন আপিল বিভাগ। আগামী ৭ মার্চ পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আট সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে যাদেরকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তারা হলেন- বিচারপতি টিএইচ খান, ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আব্দুল ওয়াদুদ ভূইয়া, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, অ্যাডভোকেট এ এফ হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, ব্যারিস্টার ফিদা এম কামাল, ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি, অ্যাডভোকেট এজে মোহাম্মদ আলী এবং অ্যাডভোকেট এমআই ফারুকী।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। রিটকারীর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকে মনজিল মোরসেদ।
গত ৫ জানুয়ারি শুনানির জন্য ৮ ফেব্রুয়ারি দিন দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। তবে আজকের শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানির জন্য আরও আট সপ্তাহের সময় আবেদন করেন।
আবেদনের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, সময় চাচ্ছেন এটাতো হয় না। একটি দেশে বিচার বিভাগ থাকবে কোনো আইন থাকবে না? আপনারাতো অস্থির হয়ে গেলেন, এখন আপনারাই আপার ব্যাক গেয়ারে গেলেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, অনেক গ্যাপ ছিল, বড় ম্যাটার। আমরা আট সপ্তাহ সময় চাচ্ছি।
বিচারপতি ওয়াহাব মিয়া বলেন, আপনারাতো দুই মাস সময় চাচ্ছেন। আমরা এক সপ্তাহ দিচ্ছি।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এক সপ্তাহে আমার হবে না।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনারাতো জুডিসিয়ারিকে এভাবে ফেলে রেখেছেন, একটা দেশ এভাবে চলতে পারে না। বেশি কিছু শুনবো না। আপনারা রিটেন আরগুম্যান্ট দিয়ে দেবেন। অ্যামিকাস কিউরি দিয়ে দেব আমরা।
মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, শুনানির জন্য আমরা প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলাম। আদালতেরও প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ আট সপ্তাহ সময় আবেদন করে। আদালত আগামী ৭ মার্চ পর্যন্ত সময় দিয়েছেন।
এই আইনজীবী জানান, আদালত আমাদের উভয়কে (বাদী এবং বিবাদী) লিখিত আরগুম্যান্ট দিতে বলেছেন। শুনানিতে এক ঘণ্টা সময় দেবেন আদালত।
গত ৫ মে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ বলে রায় ঘোষণা করেন। মামলাটির সঙ্গে সাংবিধানিক বিষয় জড়িত থাকায় হাইকোর্ট সরাসরি আপিলের অনুমতি দেন।
গত ১১ আগস্ট ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ, বাতিল ও সংবিধানপরিপন্থী ঘোষণা করে দেয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ হয়। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইনসভার কাছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা রয়েছে। দেশের সংবিধানেও শুরুতে এই বিধান ছিল। তবে সেটি ইতিহাসের দুর্ঘটনা মাত্র।
১৯৭২ সালে প্রণীত মূল সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ছিল। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে অর্পণ করা হয়। পরে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা দেয়া হয় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা পুনরায় সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়। বিলটি পাসের পর গত ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশ পায়। দেশের শীর্ষ আইনজীবীরা এবং সংসদের বাইরের বিরোধী দলগুলো এ সংশোধনী প্রত্যাখ্যান করে। পরে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয় আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করেন।
আবেদনে বলা হয়, এই সংশোধনী বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে খর্ব করবে। কারণ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অন্যতম অংশ। কিন্তু এই সংশোধনী সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থী।
আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের ডিভিশন বেঞ্চ ওই সংশোধনী কেন অবৈধ, বাতিল ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে রুল জারি করে। পরে এই রুল শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতি বিশেষ বেঞ্চ গঠন করে দেন। হাইকোর্টের বিচারপতি কাজী রেজা-উল হককে এই বিশেষ বেঞ্চে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ মামলার রুল শুনানিতে দেশের শীর্ষ পাঁচ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, এম আমীর-উল ইসলাম, মাহমুদুল ইসলাম, রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও আজমালুল হোসেন কিউসিকে অ্যামিকাসকিউরি হিসেবে অভিমত নেন আদালত।
(ঢাকাটাইমস/০৮ফেব্রুয়ারি/এমএবি/জেবি)