কাঁদলেন-কাঁদালেন শিমুলের ভাই
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় মানববন্ধন ও সমাবেশস্থলে নেমে আসে নিস্তব্ধতা। উপস্থিত সবার চোখ ছলছল। আবেগঘন কান্নাজড়িতকণ্ঠে বুধবার পৌরশহরের সড়ক বাজার মোটরস্ট্যান্ডে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন শাহজাদপুর পৌর মেয়রের শর্টগানের গুলিতে নিহত দৈনিক সমকালের সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুলের ছোট ভাই। একটি ঔষধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে আখাউড়ায় কর্মরত আবু হানিফ সাইফুল্লাহ।
এ সময় স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘মানুষ তাকে (শিমুল) অনেক ভালোবাসত। যে কেউ ডাকতেন তার ডাকেই তিনি সারা দিতেন। খুব ছোট্ট বয়স থেকে তিনি নানীর কাছে মানুষ হয়েছেন। তার এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর সহ্য করতে না পেরে ওইদিন নানীও না ফেরার দেশে চলে গেছেন। দুই জনকে এক সঙ্গে কবর দেয়ার যে কষ্ট তা ভুলতে পারছি না’।
এসব কথা বলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘শাহজাদপুর পৌর মেয়র হালিমুল হক মীরু ও তার দুই ভাই হাসিবুল হক পিন্টু ও হাবিবুল হক মিন্টুসহ তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে শাহজাদপুর পৌরশহরের ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। স্থানীয়রা সেদিন মনিরাপুরে তার বাড়ির সামনে গিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানালে মেয়র ও তার ভাইয়েরা গুলি চালান।’
সেখানে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তার বড় ভাই সমকালের স্থানীয় সাংবাদিক শিমুল। এ সময় মেয়র তার শর্টগানে পরপর পাঁচটি গুলি ছোঁড়েন। যার একটি গুলি তার বড় ভাই শিমুলের চোখ ও মাথায় বিদ্ধ হয়।
হানিফ অভিযোগ করে বলেন, ‘পুলিশের সামনেই গুলি চালিয়েছিলেন মেয়র মীরু। তবে, ঘটনাস্থলে উপস্থিত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শাহজাদপুর সার্কেল) আবুল হাসনাত মেয়রকে গুলি না চালাতে বারবার নিষেধ করা সত্বেও মীরু শর্টগান থেকে গুলি ছোঁড়েন। মেয়র মীরুই তার বড় ভাই সাংবাদিক শিমুলের হত্যাকারী, এমনটা দাবি জানিয়ে ছোট ভাই হানিফ দ্রুতবিচার আইনে মীরুর ফাঁসির দাবি করেছেন।’
সাংবাদিক শিমুল হত্যার প্রতিবাদ ও খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আখাউড়ায় মানববন্ধন ও সমাবেশ পালন করেছে স্থানীয় সাংবাদিকেরা।
বেলা ১১টায় পৌরশহরের সড়ক বাজারে এ মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক, ঔষধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি, সমকাল সুহৃদ ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন।
সমাবেশে বক্তব্য দেন- আখাউড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. মানিক মিয়া, আওয়ামী লীগ নেতা মো. সেলিম ভূইয়া, ডা. মো. শাহ আলম, সাংবাদিক মহিউদ্দিন মিশু (যুগান্তর, ঢাকাটাইমস), বিশ্বজিৎ পাল (কালের কন্ঠ), কাজী হান্নান খাদেম (যায়যায়দিন), নাসির উদ্দিন (সমকাল), জাসদ নেতা জালাল উদ্দিন প্রমুখ।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- নুরুন্নবী ভ্ইূয়া (নয়া দিগন্ত), কাজী মফিকুল ইসলাম (ভোরের কাগজ), জুটন বণিক (এশিয়ান টিভি), এম এ জলিল (দিনকাল), কবীর হোসেন (মোহনা টিভি) প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, জনপ্রতিনিধির হাতে সাংবাদিক হত্যা সাংবাদিকদের জন্য হুমকিস্বরূপ। তারা বলেন, ‘সাংবাদিকরা দেশ ও জাতির কল্যাণে নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আজ যখন সাংবাদিকরা অন্যায়ভাবে নিহত হচ্ছেন, তখন বলতেই পারি- এটি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিরোধী।’
শিমুল হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন বক্তারা।
(ঢাকাটাইমস/৮ফেব্রুয়ারি/প্রতিনিধি/এলএ)
মন্তব্য করুন