আশা করি নির্বাচনে সবাইকে পাব: নতুন সিইসি
প্রকাশ | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ০৮:১৫ | আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৪:৫০
দশম সংসদ নির্বাচন এক পক্ষের বর্জনের কারণে একতরফা হলেও আগামী সংসদ নির্বাচনে সব দলকে পাওয়ার আশা করছেন নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা। তিনি বলেন, সব দলের অংশগ্রহণ থাকলে নির্বাচনে অনিয়মের ঘটনাগুলো ঘটা কঠিন।
বুধবার নিজ বাসায় ঢাকাটাইমসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে নানা বিষয়ে কথা বলেন নতুন সিইসি। তিনি জানান, এই পদে আসবেন-এমন কোনো ধারণা তার ছিল না। তবে নিয়োগের কয়েকদিন আগে নানা সূত্র থেকে জানতে পারছিলেন তার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে সার্চ কমিটির কাছে।
সফল আমলা হিসেবে পরিচিত ছিলেন নুরুল হুদা। অবসরের পরও বসে থাকেননি তিনি। কাজ করে গেছেন বিশ্রামহীন অবস্থায়। জীবনে অনেক পেয়েছেন। তবে আক্ষেপ তো থেকেই যায়। বললেন, ‘মানুষের জীবনে সব স্বপ্ন তো আর পুরণ হয় না। অসম্পূর্ণতা তো মানুষের জীবনে থাকে।’
তবে যা কিছু পেয়েছেন তাতেই খুশি নুরুল হুদা। সার্বিকভাবে নিজেকে সফল হিসেবেই দেখছেন। বলেন, ‘আমি জীবনে অনেক ভাল ভাল দায়িত্ব পালন করেছি। সেখানে কিন্তু আমি সফল হয়েছি। সুতরাং আই এম হ্যাপি ইন মাই লাইফ। তেমন কোনো ব্যর্থতা নেই। আমার দৃষ্টিতে আমি সফলই ছিলাম। অনেক স্বপ্নই পুরণ হয়েছে।’
-বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশনে যারাই এসেছেন, সমালোচনার বাইরে ছিলেন না বলতে গেলে কেউই। সিইসি হিসেবে এই বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
‘কিছু দিন আগে আমেরিকায় নির্বাচন হল না? সেখানে কিন্তু ট্রাম্পকে নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। এখনো সেই সমালোচনা চলছে। সমালোচনা হবেই। ডেমোক্রেটিক সিস্টেমে সমালোচনা হবেই। এটা হবেই। বাংলাদেশের নির্বাচন সিস্টেমে বা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমন যে সমালোচনা হবেই। সমালোচনা করা তো আর বন্ধ করা যায় না। এটা গণতান্ত্রিক রীতিনীতির একটা অংশ।’-বললেন নতুন সিইসি।
-গত জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কিন্তু দেশে-বিদেশি বেশ সমালোচনা হয়েছে। বিশেষ করে ইসি চরমভাবে সমালোচিত হয়েছে। আসলে এ থেকে উত্তরণের কোনো উপায় আছে?
নুরুল হুদা বলেন, ‘সমালোচিত হওয়ার মূল কারণ হল নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করা। সব রাজনৈতিক দলগুলো যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং যোগ্য প্রার্থী থাকে তখন আর অনিয়মগুলো হতে পারে না। নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করা - এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিষয়।
-সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিতে কী পদক্ষেপ নেবেন?
নতুন সিইসি বলেন, ‘আমরা আমাদের কাজের মাধ্যমে আমাদের নিরপেক্ষতা এবং পক্ষপাতিত্বহীনতা দেখাবো, সব দলের আস্থা অর্জন করবো। আশা করি, বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।’
-পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আপনার ভাবনা?
সিইসি বলেন, ‘এটাকে অনেক বড় দায়িত্ব এবং চ্যালেঞ্জিং দায়িত্ব হিসেবেই নিয়েছি। চ্যালেঞ্জটা হলো, পরবর্তী নির্বাচনটি - যা ২০১৮ বা ২০১৯ এর শুরুতে, যখনই হোক - তা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে করা। আমাদের কাছে কোন দল নেই । আমাদের কোন রাজনীতি নেই। আমাদের সামনে আছে সংবিধান ও আইন, নিরপেক্ষতা। সেটা দেখাবো। তাতে সবাই আশ্বস্ত হবে আশা করি। আশা করি সবার অংশগ্রহণে পার্টিসিপেটরি নির্বাচন হবে।’
সবার কাছে নির্বাচন কমিশনকে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য কি করবেন?
-‘প্রয়োজন হলে সিভিল সোসাইটির লোকজনের সাথে কথা বলবো। যদি প্রয়োজন হয়, এবং তারা যদি চান - তাহলে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গেও কথা বলবো, তাদের মতামত নেবো। মতামত নিয়ে যেসব সমস্যা আছে তা আইন ও সংবিধানের মধ্যে থেকে সমাধানের চেষ্টা করবো।’
নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা তৈরি জন্য কী করবেন?
-‘আমরা কাজ করে দেখাবো যে আমরা আস্থাশীল লোক। প্রশাসনিক এবং পলিসিগত কাজগুলো যখন করবো, তখন আমার বিশ্বাস যে আস্থা তৈরি হবে। এটা এক সপ্তাহের মধ্যে হবে না। ওভার এ পিরিয়ড অব টাইম আমরা আস্থা অর্জন করার চেষ্টা করবো।’
সিইসি মনোনীত হওয়ার পর বিএনপি অভিযোগ করছে নতুন সিইসি ১৯৯৬ সালে বিএনিপিবিরোধী আন্দোলনের সময় গড়ে তোলা জনতার মঞ্চে যোগ দিয়েছিলেন। তবে নুরুল হুদা বলেন, এই তথ্য সত্য নয়। তিনি তখন ছিলেন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক। কুমিল্লায় বসে রাজধানীতে করা জনতার মঞ্চে যোগ দেয়া সম্ভব ছিল না।
নুরুল হুদাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছিল চারদলীয় জোট সরকার। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়ে চাকরি ফিরে পেয়েছিলেন তিনি। তবে উচ্চ আদালতের এই রায় আসতে আসতে অনেক সময় লেগে যায় এবং ততদিনে ক্ষমতা ছাড়ে জোট সরকার।
কী বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়েছিল?
-‘তার আমি কোনো কারণ জানি না। কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি। সরকারি চাকরি বিধি অনুযায়ী কোনো সরকারি কর্মকর্তার চাকরির মেয়াদ যদি ২৫ বছর পূর্ণ হয়, তাহলে তাঁকে অবসর দিতে পারে। এ জন্য কারণ দেখাতে হয় না।’
আপনি তখন কী পদে দায়িত্ব পালন করছিলেন?
-‘তখন ছিলাম ঢাকা সিটি করপোরেশনের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার।
ফের চাকরি পেলেন কীভাবে?
‘এখানে দুই আদালতেরই সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তবে আমার মামলাটি নির্দিষ্ট করে বললে, প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায়ে নিষ্পত্তি হয়েছে। আমার আগে হাতেম আলী খান নামের এক ভদ্রলোকের মামলার রায়, যেটা প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল দিয়েছিলেন, তা সুপ্রিম কোর্ট বহাল রাখেন। সে কারণেই আমাদেরগুলো যেহেতু একই মেরিটের (বৈশিষ্ট্যপূর্ণ) মামলা, তাই আমাদেরগুলো আর সুপ্রিম কোর্টে যায়নি। প্রশাসনিক প্রাইব্যুনালের রায়ে আমি চাকরি ফিরে পাই।’
এক মাসের সংলাপ শেষে গত ২৫ জানুয়ারি গঠন করা সার্চ কমিটির সুপারিশে গত সোমবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান। সেদিন নিয়োগ পেয়েছেন আরও চার সদস্য। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশনে মেয়াদ শেষ করেছেন সদ্য বিদায়ী সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদসহ তিন জন। তবে এখনও মেয়াদ রয়ে গেছে কমিশনার শাহনেওয়াজের। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে তার মেয়াদ। সেদিনই কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে শপথ নেবে পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন।
ঢাকাটাইমস/১০ফেব্রুয়ারি/এমএম/ডব্লিউবি