আশা হারিয়েছেন সাগর-রুনির স্বজনরা

আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৪:৪০ | প্রকাশিত : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ০৯:০২

৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটামের পর কত নদী দিয়ে কত জল গড়িয়ে গেল, দুই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দিন শেষে তৃতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাল চলছে, ইতিমধ্যে বছর গড়িয়ে গেছে পাঁচটি, কিন্তু সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনির হত্যা-রহস্যের কোনো কিনারা হলো না আজও। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসে। নিত্যনতুন আশ্বাস পায় সাগর-রুনির স্বজনরা। কিন্তু তা আর আলোর মুখ দেখে না কখনো। দিনে দিনে সেই আশ্বাসের ওপর থেকে আস্থা হারিয়েছেন স্বজনরা।

আজ শুক্রবার ১০ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার পাঁচ বছর। এই দম্পতি খুনের পরদিন ঘটনাস্থলে ‘৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তার করা হবে’ বলে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের সেই ‘বিখ্যাত’ আল্টিমেটাম এখন এক ‘রসিকতার বচন’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার পরের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর যে সাগর-রুনির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারই করে ফেলেন, সেটি পরে এক অশ্বডিম্ব হয়ে দেখা দেয়।

সাহারা খাতুনের ঘোষিত ৪৮ ঘণ্টা শেষ হওয়ার আগেই তৎকালীন আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেছিলেন, ‘তদন্তের প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে’। কিন্তু সেই অগ্রগতিরও দেখা মেলেনি পাঁচ বছরে।

বাস্তবতা হলো, সাগর-রুনির প্রকৃত খুনিরা অধরা। এমনকি ৪৬ বার সময় নিয়ে কোনো তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিতে পারেনি মামলার তদন্তকারী সংস্থা।

তবে আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। পূর্বসূরি দুজনের অভিজ্ঞতা থেকেই হয়তো, তার আশ্বাস এত ‘দিলখোলা’ নয়ন। তার সর্বশেষ আশ্বাস, দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে। সেই দ্রুততম সময়টা কত, সেটাই দেখার বিষয়।

ঠিক পাঁচ বছর আগে ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের নিজ বাসায় মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনির ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন রুনির ভাই নওশের রোমান।

মামলার তদন্ত থানা হয়ে ডিবির পর উচ্চ আদালতের নির্দেশে র‌্যাবের কাছে যায়। এরপর ২০১২ সালের ৯ অক্টোবর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর সাগর-রুনি হত্যা ঘটনায় সাতজনকে গ্রেপ্তারের ঘোষণা দেন। এর মধ্যে পাঁচজন রফিকুল, বকুল, সাইদ, মিন্টু ও কামরুল হাসান ওরফে অরুণকে মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক নারায়ণচন্দ্র রায় হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ওই বছর আগস্টে গ্রেপ্তার করেছিল ডিবি ও র‌্যাব। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডে তাদের গ্রেপ্তার দেখানো ছাড়াও সাগর-রুনির পারিবারিক বন্ধু তানভীর ও বাসার নিরাপত্তাকর্মী পলাশ রুদ্র পালকেও গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

কিন্তু দফায় দফায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তাদের কাছ থেকে কোনো তথ্য উদ্ধার করতে পারেনি তদন্ত সংস্থা র‌্যাব। পরে র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, সাগর-রুনির বাসার পলাতক দারোয়ান এনামুল হক ওরফে হুমায়ূনকে ধরতে পারলে হত্যাকা-ের রহস্য উন্মোচন হবে। এ জন্য এনামুলকে ধরতে ১০ লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ২০১৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি এনামুলকে গ্রেপ্তার করা হলেও খোলেনি রহস্যজট। এখনো অধরাই থেকে গেছে প্রকৃত খুনিরা।

সাগর-রুনির খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছিলেন যে সাংবাদিকরা, তারাও এখন ‘ক্লান্ত’। সাংবাদিকদের বিভক্ত ইউনিয়ন ও ফেডারেশনগুলো শুরুর দিকে এ নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করলেও মাস কয়েক পর তারা আবার বিভক্তিতে ঠাঁই নেয়। বিএনপিপন্থী অংশটি কখনো কখনো গলা উঁচালেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগপন্থী অংশটি নীরব হয়ে গেছে। তবে সাগর-রুনি হত্যার বিচার নিয়ে সাংবাদিক মহলে এখনো ক্ষোভ আছে, উদ্বেগ আছে। নানা মঞ্চে তারা সুযোগ পেলে সেটি প্রকাশ করেন। কিন্তু তাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গায়ে খুব একটা লাগে বলে মনে হয় না।

ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা ঢাকাটাইমসকে বলেন, হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে একাধিকবার সময় নেওয়া কালক্ষেপণ মাত্র। যেহেতু তারা আদালতের মাধ্যমে সময় নিচ্ছেন সেহেতু আমরা আশা রাখব আদালত দ্রুত এর একটি সমাধান করবেন।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাসের কথা উল্লেখ করে এই সাংবাদিক নেতা বলেন, ‘মন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এই হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে একটি তদন্ত প্রতিবেদন দেবেন। তাই আদালত ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ওপর আস্থা রেখেই আমরা এই হত্যাকাণ্ডের একটি সুষ্ঠু তদন্ত প্রতিবেদন আশা করছি।’

তবে দিনের পর দিন আশ্বাস শুনে শুনে আর আশাভঙ্গ হতে হতে এখন এসবের ওপর আস্থা হারাচ্ছেন সাগর-রুনির স্বজনরা। সাগর-রুনি হত্যা মামলার বাদি ও নিহত রুনির ভাই নওশের রোমানের ভাষ্য, ‘তদন্তকারী র‌্যাব এখন শুধু আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কুশলাদি জানতে। তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যাপারে কোনো কথা বলে না। সবকিছু আগের মতোই আছে।’ খুনিদের গ্রেপ্তার কিংবা তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে তারা এখন আর কোনো আশা পান না। তার পরও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন তদন্ত প্রতিবেদন জানাবেন, সেই অপেক্ষাতেই আছেন তারা।

প্রশাসনের ওপর থেকে আস্থা হারিয়েছেন সাগরের মা ছালেহা বেগমও। তিনি বলেন, খুনি গ্রেপ্তার কিংবা বিচারের যে আশ্বাস দেয়া হয়, তার ওপর আর আস্থা নেই কোনো। তাদের সব আস্থা এখন ওপর ওয়ালার কাছে।

সাগর-রুনির দম্পতির একমাত্র ছেলে মাহির সারোয়ার মেঘের বিষয়ে নওশের বলেন, ‘মেঘ এখন আমার মায়ের কাছে থাকে। সে গুলশান-২ এর বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অব টিউটোরিয়াল স্কুলে ক্লাস ফোরে পড়ে। আগের চেয়ে সে এখন স্বাভাবিক।’

সাগরের মা ছালেহা বেগম এখন আল্লাহর বিচারের ওপর

সাংবাদিক দম্পতির হত্যা মামলার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে র‌্যাব-১ অধিনায়ক লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশিম জানান, তিনি ৩০ জানুয়ারি এখানে যোগ দিয়েছেন। তাই এ ব্যাপারে তেমন কিছুই জানেন না তিনি।

আর র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন কেটে দেন।

(ঢাকাটাইমস/৯ফেব্রুয়ারি/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :